ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

খুবি ও ঢাবিতে রয়েছে নতুন মাদক ডিওবি বিক্রেতা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২১
খুবি ও ঢাবিতে রয়েছে নতুন মাদক ডিওবি বিক্রেতা

ঢাকা: দেশে প্রথমবারের ডিওবি নামে নতুন ধরনের মাদক উদ্ধার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। আরেক ভয়ংকর মাদক এলএসডির সন্ধানে গিয়ে নতুন এ মাদক উদ্ধার করা হয়।

 

ডিওবি মাদক এলএসডির চেয়েও ভয়ংকর, মাত্রাতিরিক্ত সেবনে মৃত্যুও ঘটতে পারে।

প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) নতুন এ মাদকের পাঁচ-ছয়জন বিক্রেতা রয়েছেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) আছেন একজন। তারা প্রত্যেকে মাদকসেবী ও বিক্রেতা। নতুন মাদক ডিওবির ক্রেতা বাড়াতে বিনামূল্যেও মাদকসেবীদের সরবরাহের তথ্য পাওয়া গেছে।

সোমবার (২২ নভেম্বর) এলএসডি ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারে খুলনায় অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। আসিফ আহমেদ শুভ নামে একজনের কাছ থেকে কিছু এলএসডি উদ্ধার করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে ডিওবির তথ্য পাওয়া যায়, উদ্ধার করা হয় ৯০ ব্লট ডিওবি।

পরে শুভর বন্ধু অর্ণব কুমার শর্মা ও সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের খুলনার বয়রা বাজার শাখার ম্যানেজার মামুনুর রশীদকে গ্রেফতার করা হয়।  

প্রতি ব্লট ডিওবি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছিল। এমনকি এ মাদক সেবনে তৃতীয় নয়ন খুলে যায় বলে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছিল মাদক সেবীদের।

তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কেমিক্যাল বিশেষজ্ঞরা জানান, ডিওবি সেবন করার পর সেবনকারীকে যেকোনোভাবে প্রভাবিত করা যায়। ফলে সেবনকারী নির্দেশিত কাজ করতে উদ্দমী হয়ে ওঠে। এজন্য নির্দিষ্ট মাত্রায় সেবন করতে হয়। বেশি পরিমাণে সেবন করলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুর রহমান বলেন, ডিওবি আমাদের ক শ্রেণিভুক্ত নিষিদ্ধ মাদক। ডিওবি অনেকটা এলএসডির মতো দেখতে হলেও ডিওবি আরো বেশি ক্ষতিকর, অতিরিক্ত সেবনে মৃত্যুও হতে পারে।

পোল্যান্ড থেকে পার্সেলে শুভর বাসায় ডিওবি

মাদক কেনার জন্য ডার্ক ওয়েবসাইট থেকে কিপ্রোকারেন্সির মাধ্যমে ২০০ ব্লট ডিওবি কিনে খুলনার যুবক আসিফ আহমেদ শুভ। অর্ডার করার পর ইন্টারন্যাশনাল কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে মাদকের চালানটি সরাসরি তার বাসায় পৌঁছায়।

মো. ফজলুর রহমান বলেন, বিমানবন্দরগুলোতে উন্নতমানের স্ক্যানার না থাকায় কুরিয়ারে আসা ডিওবি ধরা পড়েনি। ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে এ মাদক অর্ডার করার পর এক মাসের ব্যবধানে শুভর বাসায় কুরিয়ারের মাধ্যমে পৌঁছে যায়।

তিনি বলেন, বিমানবন্দর এবং কুরিয়ার সার্ভিসগুলোতে উন্নত স্ক্যানারে স্থাপনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানিয়েছে, দেশে মাত্র একটি কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের স্ক্যানার রয়েছে। বাকিদের কাছে যে ধরনের স্ক্যানার আছে, তা দিয়ে এ ধরনের মাদক ধরা পড়ে না।

'syash' কিওয়ার্ডে অতঃপর ডিওবির সন্ধান

বিদেশ থেকে পার্সেলে আসা মাদক ডিওবি স্ক্যানারে ধরা না পড়লেও বিদেশ থেকে এলএসডির মতো মাদক আসতে পারে এমন তথ্য ছিল মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে। গত আগস্টে কি ওয়ার্ড `syash' শব্দটি পান গোয়েন্দারা। এরপর চলে দীর্ঘ অনুসন্ধান। এক কিওয়ার্ড ধরে তিন মাসের বেশি সময় অনুসন্ধানের পর এ মাদকের সন্ধান মিলেছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো উত্তরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন, বিমানবন্দরে শক্তিশালী স্ক্যানার নেই, এটা সত্য। কিন্তু আমাদের নজরদারি ছিল। নজরদারি থাকার কারণে এ মাদক আমরা উদ্ধার করতে পেরেছি।

ডিওবির ক্রেতা-বিক্রেতা খুলনা-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে

গ্রেফতারের সময় শুভর বাসায় এলএসডি পাওয়া যায় আর অর্ণবের বাসায় পাওয়া যায় ডিওবি। পোল্যান্ড থেকে কিনে ডিওবির ব্লটগুলো অর্ণবের বাসায় রাখেন শুভ।  

জিজ্ঞাসাবাদে শুভ জানান, তিনি দুমাস আগে ২০০ ব্লট ডিওবি নিয়ে আসেন। যেগুলো তিনি নিজে সেবন করতেন এবং সেবীদের কাছে বিক্রি করতেন। নতুন ক্রেতা তৈরি করতে কিছু ব্লট বিনামূল্যেও দিয়েছেন তিনি।

অভিযানে থাকা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন বলেন, শুভ পোল্যান্ড থেকে দুই শতাধিক ডিওবি এনেছিলেন। আমরা অভিযানের সময় তার কাছে পেয়েছি ৯০টি। বাকিগুলো বিক্রি ও সেবন করেছেন।

খুলনা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ডিওবি বিক্রির জন্য শুভর সেলার রয়েছে উল্লেখ করে হেলাল উদ্দিন বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ-ছয়জন সেলার আছেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন সেলার আছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

এলএসডি ও ডিওবি পাচারে জড়িত কুরিয়ার সার্ভিস কর্মকর্তা

খুলনা থেকে মাদক ব্যবসায়ী দুজনের সঙ্গে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস খুলনা বয়রা শাখার ম্যানেজার মামুনুর রশীদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসাজশে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মাদকের পার্সেল পাঠাতেন।

গোপনে ক্রেতা সেজে পাঁচ ব্লট এলএসডির অর্ডার করেন মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। খুলনা থেকে কোনো বাধা ছাড়াই রাজধানীর এলিফেন্ট রোড সুন্দরবন শাখায় পার্সেলটি পৌঁছায়।

প্রযুক্তির সহায়তায় প্রেরক শুভর সন্ধান পান গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তবে যিনি পার্সেলটি পাঠিয়েছেন, তার মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয় পত্র রাখেননি খুলনা বয়রা শাখার দায়িত্বশীলরা। আর তা করা হয়নি মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মামুনুর রশীদের যোগসাজশের কারণে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুর রহমান বলেন, নিয়মানুয়ী প্রেরকের মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয় পত্র রাখার কথা কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলোর। কিন্তু এক্ষেত্রে তা করা হয়নি।

ঢাকা থেকে অর্ডার করা এলএসডির পার্সেলটি পৌঁছানোর পর গোয়েন্দারা ওই পার্সেল খুঁজে পাচ্ছিলেন না, কোথায় রাখা হয়েছে এলএসডি। কারণ যে পার্সেলে এলএসডি পাঠানো হয়েছে, তাতে এসেছে কয়েকটি কাগজের পৃষ্ঠা। যার মধ্যে কোথাও এলএসডির ব্লট নেই।

তবে এ পেজগুলো অধিকতর যাচাই বাছাই করার পর একটি পেজে বিশেষ চেম্বার খুঁজে পান কর্মকর্তারা। যার মধ্যে পাঁচ ব্লট এলএসডি লুকানো ছিল। কাগজের পাতার মতো পাতলা এবং সিম কার্ডের মতো ছোট ওই বিশেষ চেম্বারে লুকানো ছিল এলএসডির ব্লটগুলো।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন বলেন, আমরা পার্সেলটি পাওয়ার পর হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। কারণ এর মধ্যে এলএসডি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ওরা কয়েকটি পেজ পাঠিয়েছিল। যেগুলো একটিতে বিশেষ চেম্বার করে এলএসডি লুকানো ছিল।

বাংলাদেশ সময়: ০১৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২১
পিএম/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।