নীলফামারী: নীলফামারীর সৈয়দপুরে বাগদত্তার কাছ থেকে যৌতুক হিসেবে নেওয়া ১১ লাখ টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাসে মুক্তি পেয়েছেন বর ও তার বাবা-মা।
দুইদিন কনের বাড়িতে বন্দি থাকার পর স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপে সমঝোতা হওয়ায় মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় মুক্তি পান তারা।
আগামী দুই মাসের মধ্যে যৌতুকের টাকা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ফেরত দেওয়ার আশ্বাসে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের কয়া মিস্ত্রিপাড়ায়।
বরপক্ষ টাকা সংগ্রহ করতে পারেনি। তাই ৩ নং ফতেজংপুর ইউপি চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ লুলার ও বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সমঝোতা বৈঠক করেন। সেখানে
যৌতুকের ১১ লাখ টাকা দুই মাসের মধ্যে ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে বর ও তার বাবা এবং মাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
আরো পড়ুন: বাগদত্তার টাকায় চাকরি নিয়ে অন্য মেয়েকে বিয়ে, বাবা-মাসহ বন্দি বর
এর আগে সোমবার (২২ নভেম্বর) সকালে গিয়ে দেখা যায়, কয়া মিস্ত্রিপাড়ায় কনের বাড়ির পাশেই আত্মীয় কার্তিক চন্দ্র রায়ের বসতবাড়ির একটি ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। বার বার নক করার পর দরজা খুলতেই দেখা গেল মেঝেতে প্লাস্টিকের পাটিতে বসে আছেন নিতাই ও তার বাবা-মা। তাদের ঘিরে খাটে ও চেয়ারে বসা মেয়ে পক্ষের পাঁচজন।
মেয়ের বাবা তুলশী চন্দ্র রায় জানান, সৈয়দপুরের পাশের জেলা দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার চম্পাতলী মাস্টারপাড়ার অমূল্য চন্দ্র রায়ের ছেলে নিতাই চন্দ্র রায়ের (২৩) সঙ্গে তার মেয়ে জয়ত্রী রানী রায়ের আশীর্বাদ ও বিয়ে রেজিস্ট্রি হয় প্রায় এক বছর আগে। সরকারি চাকরিতে টাকা লাগবে বলে বরের বাবা যৌতুক হিসেবে কনের বাবার কাছ থেকে ১১ লাখ টাকা নেন। ছেলে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সে ফায়ার ফাইটার হিসেবে যোগদানও করেছেন। এ কারণে মেয়েকে বিদায় দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে পণ্ডিত ডেকে বিদায়ের দিন-তারিখ ও লগ্ন ঠিক করা হয় রোববার (২১ নভেম্বর) রাতে। এজন্য আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে কনের বাড়িতে আসেন নিতাই। কিন্তু শনিবার সন্ধ্যায় কনের বাবাকে একজন মোবাইল ফোনে কল দিয়ে জানান যে ছেলে প্রতারক। তিনি এক সপ্তাহ আগে লালমনিরহাটে তার প্রেমিকাকে কোর্টে বিয়ে করেছেন। এ কথা শুনে মুহূর্তে বিয়ে বাড়ির পরিবেশ পাল্টে যায়। কনের বাবাসহ আত্মীয়স্বজন যান বরের বাড়িতে। সেখানে বিয়ের সত্যতা মেলে।
এ অবস্থায় বরকে ও তার মা-বাবাকে আটক করে কনে পক্ষ। তারা যৌতুকের টাকাসহ ক্ষতিপূরণের দাবি করেন। কিন্তু দুইদিনেও টাকা যোগাড় করতে না পারায় তাদের বন্দি করে রেখেছিলেন তারা। বিষয়টি থানা পুলিশ করলে নিজেদের সম্মানহানির পাশাপাশি ছেলে ও ছেলের বাবার সরকারি চাকরির সমস্যা হবে, তাই আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
কনের পরিবারের অভিযোগ, বরের পরিবারের সব শর্ত মেনে আমরা বিয়ে এবং বিদায়ের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। খুব কষ্ট করে বরের বাবার হাতে ১১ লাখ টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে। আমাদের মান-সম্মান এবং মেয়ে ভবিষ্যৎ সবই শেষ করে দিল এমন প্রতারণা করে। তবুও আমরা শুধু অর্থ ফেরত চাই।
ছেলের বাবা অমূল্য চন্দ্র রায় বলেন, তিনি লালমনিরহাটে কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন অধিভুক্ত মশলা উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে কর্মরত। ছেলে ও স্ত্রী দীর্ঘদিন সেখানেই ছিল। এখন গ্রামের বাড়িতে থাকে। ছেলের প্রেমের সম্পর্কের বিষয়ে জানতাম না। বিয়ের বিষয়েও জানি না।
নিতাই চন্দ্র রায় বলেন, ফায়ার ফাইটার পদে মুন্সিগঞ্জের কমলহাটে চাকরি করছি। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার হাজিগঞ্জের প্রমিতা রানীর সঙ্গে এমনি মোবাইল ফোনে কথা হতো। কিন্তু লালমনিরহাট থেকে আসার পর আর যোগাযোগ হয়নি। হঠাৎ কয়েকদিন ধরে ফোনে কথা হয়। আর গত ১৪ নভেম্বর ঢাকার মিরপুর অফিসে অফিসিয়াল কাজে অবস্থানকালে সে সেখানে উপস্থিত হলে পরিস্থিতির শিকার হয়ে তাকে বিয়ে করতে বাধ্য হই।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২১
এসআই