মেহেরপুর: বিএ পাশ করে চাকরির পেছনে অনেক সময় ঘুরেও একটা চাকুরি জুটাতে পারিনি। তাই, হতাশ হয়ে পড়েছিলাম।
আত্ম শক্তিতে বলিয়ান ব্যক্তি কখনো দরিদ্র থাকতে পারেনা। এ মূল মন্ত্রটিই আমার জীবনের গতি পাল্টে দিয়েছে।
দি হাঙ্গার প্রজেক্ট শুধু আমাকে মূল মন্ত্রই শেখায়নি। নানাভাবে আমাকে প্রশিক্ষিতও করে তুলেছে। আর তাদের পরামর্শে যুব উন্নয়ন থেকে নিয়েছি হাঁস মুরগি পালন বিষয়ক প্রশিক্ষণ। এভাবেই জীবন বদলে যাওয়া গল্পটি শোনালেন গাংনী উপজেলার গাঁড়াডোব রাইসমিল পাড়া এলাকার মিজানুর রহমান মিজান।
মাত্র ২ লাখ ২০ হাজার টাকায় তার ঘুরে দাঁড়ানো গল্প। ৫শ’ মুরগি নিয়েই মিজানুর রহমান তার বাড়ির সঙ্গেই গড়ে তুলেছেন লেয়ার মুরগির একটি খামার। এখন তার মাসিক আয় দেড় লাখ টাকা।
মিজানুর রহমান বলেন, চাকরিটা না হওয়ায় আমার জীবনের মোড় ঘুরে দাঁড়িয়েছে। পেয়েছি সফলতা।
তিনি বলেন, ফার্ম গড়ে তোলার প্রথম দিকে খুব একটা লাভবান না হলেও দ্বিতীয়বার ফার্মে যোগ হয় ১১শ’ মুরগি। দ্বিতীয়বার মুরগি চাষ করার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। লাভের মুখ দেখতে শুরু করি ফার্ম থেকে। বর্তমানে আমার খামারে রয়েছে ১৫শ’ লেয়ার মুরগি। সেখান থেকে সাড়ে ১৩শ’ ডিম আসছে প্রতিদিন। আর ডিম বিক্রি করে ১১ হাজার টাকা আয় হচ্ছে এ ফার্ম থেকে। তবে মুরগির খাবার, ওষুধ ও অন্যান্য খরচ বাবদ আমার প্রতিদিন ৬ হাজার টাকার মত খরচ হয়। খরচ বাদ দিয়ে প্রতিদিন ৬ হাজার টাকা আয় হয়।
মিজানুর বলেন, আমি নিজেই ফার্মের সকল কাজ করি। এ ফার্মের পেছনে রয়েছে আমার অক্লান্ত পরিশ্রম। আমার দেখাদেখি এলাকার অনেক শিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত বেকার যুবক এখন লেয়ার ফার্ম গড়ে স্বাবলম্বী হওয়ার পথে। কেউ কেউ নতুন করে ফার্ম গড়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। এলাকার কেউ লেয়ার মুরগির ফার্ম গড়তে চাইলে পরামর্শ থেকে শুরু করে সকল ধরনের কারিগরি সহায়তাও দিয়ে থাকি আমি। এ কারণে আমাকে এখন এলাকার মানুষ শ্রদ্ধার চোখে দেখে।
মিজানুর রহমান শুধু মুরগির খামারই গড়ে তোলেন নি। তার রয়েছে ১০ বিঘা জমিতে কলা, দুই বিঘা জমিতে মাল্টা, দুই বিঘা জমিতে মরিচের চাষসহ নানা ধরনের সবজির বাগান।
মিজানুর আরও বলেন, চাকরি বা বিদেশে না গিয়ে এলাকায় মুরগির ফার্ম গড়ে শিক্ষিত বেকার যুবকরা স্বাবলম্বী হতে পারেন। এজন্য শুধু মনোবল থাকলেই হবে।
এদিকে মিজানুর রহমানের দেখাদেখি একই পাড়ার হামিম রেজা, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, মতিয়ার রহমান, রেনুফা খাতুন, সিরাজুল ইসলাম, মইনাল হোসেন, ইউসুব আলীসহ বেশ কয়েকজন গড়ে তুলেছেন লেয়ার মুরগির খামার। তারাও এখন বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়েছেন।
খামারি মতিয়ার রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মিজানুর রহমান এ এলাকার যুবকদের আইকন। তার দেখাদেখি এলাকার ১০-১২ জন খামার গড়ে তুলেছেন। প্রথম দিকে আমি তার কাছ থেকে খামার স্থাপন ও ওষুধপত্রসহ নানা ধরনের পরামর্শ নিয়েছি। এখন আমার খামারে ৪শ’ লেয়ার ও ১ হাজার ব্রয়লার মুরগি রয়েছে। প্রতি মাসে আমি প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করে থাকি।
দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের গাংনী এরিয়া অফিসের সমন্বয়কারী হেলাল উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, খামারি মিজানুর রহমান এখন ওই এলাকার বেকার যুবকদের আইকন। তাকে অনুসরণ করে এখন অনেকেই স্বাবলম্বী হতে শুরু করেছেন। আমরা তাকে হাঙ্গার প্রজেক্ট থেকে উজ্জীবক প্রশিক্ষণ ছাড়াও আয়বর্ধক অনেকগুলো প্রশিক্ষণ দিয়েছি। হাঙ্গার প্রজেক্ট মূলত কাউকে ঋণ দেয়না। ঋণের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে নানা ধরনের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী খানম বাংলানিউজকে বলেন, পয়সা জোগাড় করে বিদেশে না গিয়ে বা চাকরির পেছনে না ছুটে শিক্ষিত বেকার যুবকরা উদ্যোক্তা হয়ে স্বাবলম্বি হতে পারে। বর্তমান সরকার বেকার যুবকদের নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। বিশেষ করে বেকারদের বিভিন্নভাবে প্রশিক্ষণ, ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে। তারা সরকারের এসব সুবিধা গ্রহণ করে নিজের ভাগ্যের উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখতে পারে।
নিজেদের জমি না থাকলেও অন্যের জমি বর্গা নিয়ে শাক সবজি বা বাণিজ্যকভাবে বিভিন্ন ফসল যেমন- মাল্টা, চায়না লেবু বা পেয়ারার বাগান গড়েও স্বাবলম্বী হতে পারে। এক্ষেত্রে সরকার তাদের সব ধরনের সহযোগিতাও করবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২১
জেডএ