ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এখনো সম্ভব হয়নি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২১
নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এখনো সম্ভব হয়নি মহিলা পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন

ঢাকা: বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনকালে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নে লক্ষণীয় অগ্রগতি হয়েছে ঠিকই কিন্তু নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এখনো সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।  

বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ পালন উপলক্ষে মহিলা পরিষদ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন এ কথা বলা হয়।

 

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম।

এ সময় লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে নারী আন্দোলন, মানবাধিকার আন্দোলন এবং সরকারি-বেসরকারি নানাবিধ উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা ও ভয়বহতা ক্রমাগত উদ্বেগজনকহারে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।  

নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য সবক্ষেত্রে নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করা অন্যতম শর্ত। পাশাপাশি নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে গৃহীত সব কার্যক্রম অব্যাহত রাখা উচিত।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ১৬টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো- পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করে নারীর প্রতি সহিংসতামুক্ত সংস্কৃতি চর্চা করতে হবে, মানবাধিকার সম্পর্কে সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধ গড়ে তুলতে হবে, নারীর জন্য ক্ষতিকর প্রথা (বাল্যবিবাহ, যৌতুক, পারিবারিক সহিংসতা, বিচারবহির্ভূত সালিশি কার্যক্রম, বহুবিবাহ) বন্ধ করতে হবে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, প্রশাসন ও বিচারিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত সবাইকে নারীবান্ধব ও জেন্ডার সংবেদনশীল করে তুলতে হবে এবং সিডওসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দলিলগুলো প্রশিক্ষণের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন ২০১০ এর প্রচার ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে, ধর্ষণের ঘটনার বিচার সংক্রান্ত আইনের সংস্কারসহ প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে, অপরাধীকে কোনরকম রাজনৈতিক-প্রশাসনিক-সামাজিক ও আশ্রয়-প্রশ্রয় বন্ধ করতে হবে, সামাজিক-রাজনৈতিক বা ধর্মীয় সমাবেশের নামে নারীর প্রতি নেতিবাচক প্রচার-প্রচারণা (অনলাইন, অফলাইন) কঠোরভাবে দমন করতে হবে, গণমাধ্যমে নারীর প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য, ছবি প্রকাশ ও প্রচারণা বন্ধ করতে হবে।

এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে যৌন হয়রানি ও নিপীড়নরোধে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে আইন প্রণয়ন করতে হবে, নির্যাতনের শিকার নারীকে দোষারোপ করা বন্ধ করতে হবে, তরুণ সমাজকে পরিকল্পিতভাবে মানবাধিকারে উদ্বুদ্ধ করে মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু সাংস্কৃতিক কার্যক্রম নিতে হবে, সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ এর ধারা ১৫৫ (৪) বাতিল করতে হবে, জাতিসংঘের সিডও সনদের অনুচ্ছেদ-২ ও ১৬(১)(গ) এর ওপর থেকে সংরক্ষণ প্রত্যাহার করে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে, বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইন পরিবর্তন করে সব নাগরিকের সমঅধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অভিন্ন পারিবারিক আইন (বিবাহ ও বিবাহ বিচ্ছেদ, ভরণপোষণ, অভিভাবকত্ব, দত্তক, সম্পত্তির উত্তরাধিকার) চালু করতে হবে বলেও এ সময় সুপারিশ করেন তারা।  

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতার ইস্যুতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যই যথেষ্ট নয়। তবে প্রকাশিত তথ্যগুলোর আলোকে সংগঠন সহিংসতার শিকার নারীদের জন্য আইনি সহায়তা দিয়ে থাকে, তাদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে সহায়তা করে। পাশাপাশি নারীর প্রতি  সহিংসতা প্রতিরোধে কেন্দ্র ও জেলা পর্যায়ে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে, বাস্তবমুখী পদক্ষেপও নেওয়া হয়ে থাকে।

আয়োজনে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, সহ-সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম, লিগ্যাল এইড সম্পাদক সাহানা কবীর, প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার সম্পাদক এবং গণমাধ্যম সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) রীনা আহমেদ, ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক রেহানা ইউনূস এবং সংগঠনের আইনজীবী অ্যাড. রাম লাল রাহা, অ্যাড. ফাতেমা খাতুনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সংগঠক ও কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২১
এইচএমএস/এমআরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।