ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মৎস্য সংকট: হতাশা লালপুর শুটকি পল্লীর জেলেদের

মেহেদী নূর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২১
মৎস্য সংকট: হতাশা লালপুর শুটকি পল্লীর জেলেদের

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: অবৈধভাবে মৎস্য আহরণের ফলে ক্রমেই কমছে দেশীয় প্রজাতির মাছের সংখ্যা। এক সময় নদ-নদীতে প্রচুর পরিমাণ দেশীয় মাছ থাকলেও এখন তা অনেকটাই কমে গেছে।

এমনিতে করোনার কারণে গত দুই বছর মৎস্য আহরণ ও শুটকি প্রক্রিয়াজাত করণের সঙ্গে জড়িতরা ভালো নেই। তার ওপর দেশীয় প্রজাতি মাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এই পেশার সঙ্গে জড়িতদের জীবন ও জীবিকায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

বছরের এ সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুরের মেঘনা নদীর পূর্ব পাড়ে জেলে পল্লীতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের ভরপুর থাকত। যা দিয়ে এখানকার শুটকি পল্লীতে চলত নানা প্রকার শুটকি উৎপাদনের কাজ। তবে বর্তমান মৌসুমে দু’মাস পার হয়ে গেলেও নদী নালা ও খাল বিলে পর্যাপ্ত মাছ না পাওয়ায় এখনও জমে ওঠেনি  শুটকি পল্লীর ব্যস্ততা। মাছ সংকটের কারণে এক সময়ের জমজমাট এই পল্লী এখন অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। নেই পাইকারদের আনাগোনা। প্রায় দুই হাজারের বেশি শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। এক সময় ঐতিহ্যবাহী এই শুটকি পল্লীতে দেড় শতাধিক ডাঙি (মাচা) ছিল। বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫০ থেকে ৬০টিতে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জেলে পল্লীতে শ্রমিক ও মালিকরা অনেকটাই অবসর সময় পার করছেন। বেশিরভাগ ডাঙিই শুটকিশূন্য। কেউ কেউ অল্প কিছু মাছ রোদে শুকাচ্ছেন। তাদের চোখে মুখে হতাশার ছাপ।

শুটকি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িতরা জানান, প্রতিটি মাচায় আগে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার মাছ কেনা বেচা হতো। এখন তা নেমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায়। এমনিতে করোনার কারণে বিপাকে থাকা ব্যবসায়ীরা ভালো নেই। তার ওপর মাছ সংকটের কারণে এই শিল্প হুমকির সম্মুখীন।

শুটকি প্রক্রিয়ায় জড়িত সুমন দাস বাংলানিউজকে বলেন, এবার ভরা মৌসুমে অধিকাংশ ডাঙি (মাচা) খালি। নদ-নদীতে মাছ কম থাকায় জেলেরা মাছ ধরতে পারছে না। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার শুটকির পরিমাণ একেবারে কম।

শুটকি ব্যবসায়ী রাহুল দাস বাংলানিউজকে বলেন, গত বছর প্রতিদিন ৪৫ লাখ টাকার মাছ কিনতাম। এবার প্রতিদিন ৪০ হাজার টাকার মাছ কিনতে হচ্ছে। শৈল, গজার, টাকি, গনিয়া, চান্দা বালিয়ারা পাওয়া গেলেও এবার শুধু পুঁটি আর টেংরা মাছ কিনছি প্রতিদিন।  

শুটকি পল্লীর শ্রমিক সুবীর দাস ও ডলি রানী দাস বলেন, এবার পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ না পাওয়ায় আমাদের অনেক শ্রমিকই বেকার হয়ে পড়েছে। মালিকই যদি ঋণগ্রস্ত হয় তাহলে আমরা কীভাবে বাঁচব।  

এদিকে মৎস্য সংকট দূর করতে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা তাজমহল বেগম বাংলানিউজকে বলেন,  মৎস্য সম্পদ রক্ষায় আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে অবৈধ মৎস্য আহরণ ও মা মাছ শিকার থেকে জেলেদের বিরতির থাকতে হবে। কারণ মা মাছের ডিম থেকে প্রচুর পরিমাণ মাছ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। তাই মা মাছকে ডিম পাড়ার সুযোগ দিতে হবে। তাই মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে জেলেদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি যারা অবৈধভাবে মৎস্য শিকার করছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। চলতি মৌসুমে অবৈধ মৎস্য শিকারীদের বিরুদ্ধে ১৫৯টি অভিযান ও ২২টি মোবাইল কোট এবং ৫৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া শুটকি পল্লীতে কর্মরতদের জীবনমান উন্নয়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

ঐতিহ্যবাহী এই শুটকি পল্লীতে ভাদ্র মাস থেকে শুরু হয় ডাঙি (মাচা) তৈরির কাজ। এরপর আশ্বিন থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত বছরের ৫ মাস চলে এখানে শুটকি উৎপাদনের কাজ। এখানকার শুটকির গুণগতমান ভালো হওয়ায় দেশ-বিদেশে এর বেশ কদর রয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২১ 
এসআইএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।