কক্সবাজার থেকে ফিরে: তোমার ঘরে বসত করে কয়জনা... বা মধু হই হই বিষ খাওয়াইলা... গান গেয়ে সাইফুল ইসলাম মাসুম (১২) প্রতিদিন রোজগার করেন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া স্কুলছাত্র বড় দুই বোনের যৌতুকের টাকা জোগাড় করতেই সমুদ্রসৈকতে ঘুরে গান গেয়ে ও দর্শনার্থীদের শরীর ম্যাসাজ করে বেড়ায়।
বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে রাতে সাইফুল ইসলাম মাসুম কোন ক্লাসে পড়ে জানতে চাইলে বাংলানিউজকে সে বলে, কক্সবাজার সার্কিট হাউস স্টেডিয়ামের পাশের পিউটারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি। পঞ্চম শ্রেণি থেকে ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে উঠবো। আগামী ৮ ডিসেম্বর ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হবে। তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা দেব বাংলা,ইংরেজি ও গণিত। আমি প্রতিদিন স্কুলে যাই।
কেন এত রাতে সমুদ্র সৈকতে এসেছে জানতে চাইলে মাসুম জানায়, তিন বছর আগে তার বাবা মারা গেছেন। এরপর থেকেই মাকে সাহায্য করতে কিছু না কিছু করার চেষ্টা করছে। আগে সৈকতে পান-সিগারেট ও বাচ্চাদের খেলনা বিক্রি করতো। এখন পর্যটকদের গান গেয়ে শোনায় আর মাথা ও শরীর ম্যাসাজ করে দেয়।
বড় হয়ে কী হতে চাও জানতে চাইলে মাসুম বলেন, পড়ালেখা করে চাকরিজীবী হতে চাই। আমি ইউনিসেফের কাজ করতে চাই। আমার মা মানুষের বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে দেখেছেন ইউনিসেফের কর্মকর্তাদের অনেক সম্মান করে মানুষ। এ কারণেই আমার মা পছন্দ বা ইচ্ছা আমি যেন বড় হয়ে ইউনিসেফের কর্মকর্তা হই।
টাকা উপার্জন করে কি করে জানতে চাইলে এই স্কুলছাত্র বলে, পরিবারে আমি সবার ছোট। আমার বড় দুই বোন আছে। তাদের দুজনেরই বিয়ে হয়ে গেছে। আমি যা টাকা উপার্জন করি সব টাকা মায়ের হাতে তুলে দেই। মা আর আমি মিলে প্রতিমাসে বোনদের যৌতুকের টাকা দেই। বোনদের বিয়ের সময় দুই বোনকে যে টাকা যৌতুক দেওয়ার কথা ছিল, তার পুরোটা দেওয়ার আগেই বাবা মারা যাওয়ায়, বোনদের যৌতুকের টাকা দিতে হচ্ছে মা আর আমাকে। এ পৃথিবীতে মা ছাড়া আমার কেউ নাই।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২১
এমএমআই/এসআইএস