ঢাকা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উদ্যোগে আয়োজিত গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ পায়নি বাংলাদেশ। তবে এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ না পাওয়ার বিষয়টি একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ‘চাপ’ ও ‘রাজনীতি’ হিসেবে দেখছে সরকার।
যে কারণে গণতন্ত্র সম্মেলন:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল, তিনি জয়লাভ করতে পারলে বিশ্বের দেশগুলোর গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে পদক্ষেপ নেবেন। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিনি গণতন্ত্র সম্মেলনের ডাক দিয়েছেন। সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য হলো—কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখা। এতে বিশ্বের ১১০টি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আগামী ৯-১০ ডিসেম্বর ভার্চ্যুয়ালি এই গণতন্ত্র সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। আর সম্মেলনের ফলো-আপ হিসেবে আগামী বছর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে আরেকটি সম্মেলনের আয়োজন করবে যুক্তরাষ্ট্র।
দক্ষিণ এশিয়ায় যেসব দেশ বাদ পড়েছে:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ডাকা সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আমন্ত্রণ পেয়েছে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও মালদ্বীপ। সম্মেলনে বাদ পড়েছে আফগানিস্তান, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রিডম হাউসের ২০২১ সালের প্রতিবেদনে আফগানিস্তান বাদে দক্ষিণ এশিয়ার সবগুলো দেশের অবস্থান একই। এসব দেশে ‘আংশিক গণতন্ত্র’ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে সেই প্রতিবেদনে। সেখানে পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। তবে পাকিস্তান জো বাইডেনের গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেলেও বাংলাদেশ কেন পায়নি, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব রাজনীতি:
গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রিত দেশের তালিকা দেখে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এটাকে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব রাজনীতির অংশ হিসেবে দেখছেন। যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলনে চীন, রাশিয়া বাদ পড়েছে। তবে চীনকে বাদ দিলেও আমন্ত্রণ পেয়েছে তাইওয়ান। যে কারণে ক্ষুদ্ধ হয়েছে চীন। তাইওয়ানকে সম্মেলনে ডেকে যুক্তরাষ্ট্র বড় ধরনের ভুল করেছে বলে জানিয়েছে চীন। সম্মেলন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রের কথা বলে ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধন করছে বলেও অভিযোগ করেছে দেশটি। গণতন্ত্র সম্মেলনে মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুধুমাত্র ইরাক ও ইসরায়েল এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেয়েছে। তবে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত সৌদি আরব, মিশর, জর্ডান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ পায়নি।
তালিকায় দুর্বল গণতন্ত্রের দেশ:
যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলনের তালিকায় অনেক দুর্বল গণতন্ত্রের দেশের নাম রয়েছে। সে কারণে এই তালিকা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা থেমে নেই। তালিকায় ফিলিপাইনের নাম রয়েছে। তবে ফিলিপাইনের দুর্বল গণতন্ত্র ও দেশটির প্রেসিডেন্ট রদ্রিগোর দুতের্তোর শাসন নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। একইসঙ্গে ইউরোপের গণতন্ত্রে পিছিয়ে থাকা দেশ পোল্যান্ডও রয়েছে সম্মেলনের তালিকায়। ইরাকের গণতন্ত্রও নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তবে এসব দেশ তালিকায় স্থান পেয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কড়া বক্তব্য:
যুক্তরাষ্ট্রের সম্মেলনে আমন্ত্রণ না পাওয়ার বিষয়টি খুব একটা আমলে নিচ্ছেন না পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, কে দাওয়াত দিল, না দিল তাতে আমাদের কিছু আসে যায় না। আমাদের গণতন্ত্র আমাদের ঠিক করতে হবে। এটা অন্য কেউ করে দিয়ে যাবে না। আবার তিনি এও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন ইস্যুতে বিভিন্ন দেশকে চাপে রাখতে চায়। এজন্য তারা কখনো গণতন্ত্রের কথা বলে, কখনো সুশাসনের কথা বলে, কখনো দুর্নীতির কথা বলে। এটা তাদের রাজনীতি।
আরও পড়ুন:
গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ না পাওয়া নিয়ে ভাবছে না সরকার: মোমেন
যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলনে নামই নেই বাংলাদেশের!
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২১
টিআর/এনএসআর