ঢাকা: বাংলাদেশে খেলতে আসা পাকিন্তান ক্রিকেট দলের পক্ষে মাঠে স্লোগান ও পাকিস্তানের পতাকা উড়ানোকে কেন্দ্র করে সমালোচনা ও প্রতিবাদ হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। অথচ সংসদ অধিবেশনে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের পতাকা উড়ানোর সমালোচনাকে ‘বিদ্বেষপূর্ণ কথা’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ।
শনিবার (২৭ নভেম্বর) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে তিনি পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের পক্ষে সোচ্চার কণ্ঠে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, সমর্থকরা মাঠে পতাকা উড়িয়েছে। এই পতাকা উড়ানো কেন্দ্র করে নানা কথা বলা হচ্ছে। সংসদে এমপিরাও বলেছেন। পাকিস্তান খেলতে এসেছে, তারা আমাদের মেহমান, অতিথি। এটাকে কেন্দ্র করে কেন এসব বলা হচ্ছে। বিদ্বেষপূর্ণ কথা বলা হচ্ছে। তাদেরকে তো আনা দরকার ছিল না, কেন আসতে দিলেন। একটা দেশের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ করা সঠিক না। এ সময় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। নিজের বক্তব্যে হারুনুর রশিদ যুদ্ধাপরাধ মামলায় মোমিন তালুকদারের বিচারের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, তিনি এ সংসদের সদস্য ছিলেন। রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি বিদেশ সফর করেছেন। এ সময় স্পিকার তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, আপনি বিচারের বিষয়ে কথা বলতে পারেন না।
এরপর নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী হারুনুর রশিদের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ২৩ বছর এই জাতি লড়াই সংগ্রাম করে স্বাধীনতা পেয়েছিল। অধিকার হারা মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পেয়েছিল। সেই জায়াগায় যখন আমাদের আঘাত করা হয়, তখন আমরা ব্যথিত হই, বাংলাদেশের মানুষ ব্যথিত হয়, ৩০ লাখ শহীদ অপমানিত হয়, আমাদের মা-বোনদেরকে অপমান করা হয়। বিএনপির এমপি হারুনুর রশিদ যেভাবে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে এই সংসদে যা বললেন, তাতে তাদের প্রকৃত চরিত্র বেরিয়ে এসেছে। তারা যে রাজাকার, আল-বদর, আল-সামসদের পক্ষ নিয়ে কথা বলছে, রাজনীতি করছে, এই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সেন্টিমেন্ট তারা ধারণ করে না- সেটাই প্রমাণ হয়েছে। বিএনপির রাজনীতিই হচ্ছে সেটা।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে জাতিকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। আর ঠেলে দিয়ে জিয়াউর রহমান হত্যাকারীদের শুধু পুনর্বাসন, লানন-পালনই করেনি, সেই সঙ্গে পাকিস্তানি ধারা বাংলাদেশে প্রবর্তনের জন্য সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংসের চেষ্টা করেছে। একই ধারায় বিএনপি এখনও রাজনীতি করে যাচ্ছে। তার প্রমাণ হারুনুর রশিদ এখানে উপস্থাপন করলেন পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করে। পাকিস্তান যে অপরাধ করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেহেতু শান্তিকামী মানুষের নেতা ছিলেন, সমগ্র পৃথিবী বঙ্গবন্ধুর সেই শান্তির আদর্শকে সাধুবাদ জানিয়েছিল। সেটাকে বিকৃত করে এখানে উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাংলাদেশকে দ্বিখণ্ডিত করেছে জিয়াউর রহমান, ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল জিয়াউর রহমান।
তিনি আরও বলেন, একইভাবে খালেদা জিয়া সেই ধারা অনুসরণ করেছে। তারা মনে করেছিল এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে। এ কারণে তাদের মনকষ্ট বার বার ফুটে উঠছে। হারুনুর রশিদের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সেটা বেরিয়ে এসেছে। আমরা এর ধিক্কার ও প্রতিবাদ জানাই। পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে এবং সেটাকে নিয়ে আমরা চলছি। তার মানে এই নয় যে পাকিস্তানের অনেক অমীমাংসিত বিষয়ে সুরাহা হয়নি সেই জায়গা থেকে বাংলাদেশ সরে গেছে, ব্যাপারটা এ রকম নয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আবার মুক্তিযুদ্ধে গর্ব এবং অহঙ্কারের জায়গায় ফিরে গেছে এটাই হারুনুর রশিদদের বিএনপিদের কষ্ট। আমরা বুঝি তাদের সেই কষ্ট ও দুঃখ আমরা বুঝি, কিন্তু সে জায়গায় বাংলাদেশ আর ফিরে যাবে না।
বাংলাদেশে সময়: ১৬১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২১
এসকে/এমএমজেড