ঢাকা: ব্যাংক ঋণ নিয়ে ও ই-কমার্সের নামে বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ করে জাতীয় সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিরোধী দলের সদস্যরা। এ সময় তারা কমিশন গঠন করে বিষয়গুলো তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
শনিবার (২৭ নভেস্বর) জাতীয় সংসদে ব্যাংক সাক্ষ্য বহি বিলে জনমত যাচাই-বাছাই ও সংশোধনী প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলের সদস্যরা এ ক্ষোভ প্রকাশ এবং কমিশনের গঠনের দাবি জানান। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
বিরোধী দলের সদস্যদের বক্তব্যের পর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তাদেরকে টাকা পাচারকারীদের তালিকা দিতে বলেন। টাকা কারা পাচার করছে সেটা তিনি জানেন বলেও উল্লেখ করেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকার বেশি। কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে রাজনীতিবিদ, আমলাসহ অনেকে টাকা পাচার করেছেন বলে অভিযোগ আছে। আমরা বারবার অনুরোধ করছি, এ নিয়ে তদন্ত হোক। কারণ এই অভিযোগে আমলা, রাজনীতিবিদদের বদনাম হয়। আমাদের দায় নিতে হয়। টাকা পাচার হয় কি না, হলে কারা করে এটা বের করতে ব্যাংক কমশিন গঠন করে তদন্ত করতে হবে। রাজনীতিবিদের স্বার্থেই এটা হওয়া উচিত।
বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, অর্থমন্ত্রীকে আমরা অনেক প্রশ্ন করি, তিনি কোনো উত্তর দেন না। ঠাণ্ডা মাথায় এড়িযে যান। ই-কমার্সের নামে লুটপাট হচ্ছে। হাজার হাজার কোটি টাকা জনগণরে কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। অথর্মন্ত্রী বলছেন, দায় তার না। বাণিজ্যমন্ত্রী বলছেন, দায় তার না। তাহলে কে দায় নেবে? এর জন্য কি সরকারের দায় নেই? এক লাখ কোটি টাকা ঋণ খেলাপী। হাজার হাজার কোটি টাকা চলে গেল। দায় কে নেবে? এসব বিষয় জানাতে হবে। আশ্বস্ত করতে হবে।
বিএনপির মোশাররফ হোসেন বলেন, রাঘব বোয়ায়লরা হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে মেরে দিয়ে আয়েশি জীবন যাপন করছেন। গরীব মানুষ, কৃষকরা ঋণ পায় না। কৃষকদের অল্প টাকা ঋণ খেলাপি হলে, ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে পরিশোধ করতে দেরি হলে বারবার তার বাড়িতে পুলিশ যায়। হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করছে যারা তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
জাপার রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, অর্থমন্ত্রী দক্ষ, ভালো জ্ঞান রাখেন, সহনশীল সব কিছু করেন। কিন্তু ব্যাংকের অনিয়ম দুর্নীতি, পাচার হলে কত টাকা পাচার হয়েছে এসব বিষয়ে জানানো উচিত। এজন্য একটি ব্যাংক কমিশন গঠনের প্রয়োজন। কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে সংসদের আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেন, অর্থমন্ত্রী কথা কম বলেন বললে ভুল হবে। উনি কথা বলেনই না প্রায়। কাগজে কলমে মন্দ ঋণ এক লাখ কোটি টাকার মত। বিশেষজ্ঞরা বলেন, কার্পেটের নিচে লুকিয়ে রাখা ঋণ হিসাব করলে সেটা মোট চার সাড়ে চার লাখ কোটি টাকা হবে।
তিনি বলেন, রাজনীতিবিদ, আমলারা টাকা পাচার করেন, এমন শোনা যায়। কারা কত পাচার করে অর্থমন্ত্রী যদি পরিষ্কা চিত্র দেন তাহলে রাজনীতিবিদ ও সৎ আমলারা ,মুক্ত থাকতে পারেন।
জাপার রওশন আরা মান্নান বলেন, কথা কম বলা ভাল। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে কথা বলতে হয়। অর্থমন্ত্রী যদি মাঝে মধ্যে খুলে বলেন ঋণ খেলাপীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন তাহলে মানুষ জানতে পারে। কথা না বললে মানুষের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়। বিদেশে টাকা পাচার হয়, কী ব্যবস্থা নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী যদি বলেন তাহলে মানুষ একটু শান্তি পায়।
বিলটির উপর বিরোধী দলের সদস্যদের বক্তব্যের পর অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন,অনেকে অনেকভাবে বলেছেন, এই সংসদেও বলেছেন, দেশ থেকে টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। আমি আপনাদের বলেছি, যারা পাচার করে আমাকে তাদের তালিকা দেন। আমি তো পাচার করি না। আমি বিশ্বাস করি আপনারাও পাচার করে না। সুতরাং পাচার কে করে, আমি জানব কেমন করে, যদি আপনারা না দেন। আমি তো চুপ করে থাকব না, আমি ব্যবস্থা নেব।
বাংলাদেশে সময় ১৮২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২১
এসকে/এমএমজেড