নরসিংদী: নরসিংদীতে ইউপি নির্বাচনে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ২০-২৫ জন গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ৬০ জন আহত হয়েছেন।
রোববার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে নজরপুর, করিমপুর, আমদিয়া ও শীলমান্দী ইউনিয়নে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন, মো. সবুজ মিয়া ( ২২), মাজারুল ইসলাম ( ৩০), শাহালম মিয়া ( ৩২), সাদেক মিয়া ( ১৮) হুমায়ূন মিয়া ( ২৯), রওশুনারা বেগম ( ৪০), কামরুল মিয়া ( ২৮), হালিম মিয়া ( ৩০), শুকুর আলি ( ২০), ইসমাইল মিয়া ( ২৫), আলিউল্লা (১৯), দেলোয়ার হোসেন (৩৫), সাকিব (২৩), ইকরামনি (১২), সজিব (২৩), সেলিম মিয়া (৫২), কাজল মিয়া (৪৬), হিমেল (৩২), আলামিন (২৮), মোয়াজ্জেম হোসেন অপু (২৫), রনি আহম্মদ (৩০), ইমন আহম্মদ (২৫), ইয়ামিন (২০) , রিপন (৩২), সেলিম (২৮), রিফাত (১৭), আজিজুল (১৯), কাউছার (২৮), হোসেন আলী (১৮), শানু বেগম (৪৫), সেন্টু মিয়া (৩৯) ও আনোয়ার হোসেন (৩০)।
স্থানীয়রা জানায়, নজরপুর ইউপি নির্বাচনে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী আনারস প্রতীকের জালাল উদ্দিন সরকার এবং নৌকা প্রতীকের সাইফুল হক স্বপনের সমর্থকদের মধ্যে থেমে থেমে সংঘর্ষ হয়। নজরপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্রে রোববার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত লাঠিসোটা ও টেটা নিয়ে সংঘর্ঘ হয় বলে জানা যায়। সকালে ভোট শুরুর কিছুক্ষণ পরই চেয়ারম্যান পদে নৌকা এবং আনারস প্রার্থীর সমর্থকরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। দুইদলই কেন্দ্রে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে। পরে ভোট কেন্দ্রের বাইরে দুই পক্টা ও লাঠিসোটা নিয়ে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ধাওয়া করে। এতে গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়।
সংঘর্ষে আহত দেলোয়ার হোসেন নামে একজন বাংলানিউজকে বলেন, দড়িনবীপুরে নৌকার সমর্থকরা কেন্দ্র দখল করতে এলে আমরা বাধা দেই। পরে তারা টেঁটা, লাঠি, আগ্নেয়াস্ত্রসহ আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে গুলিবিদ্ধসহ অনেকে গুরুতর আহত হন।
এদিকে, করিমপুর, আমদিয়া ও শীলমান্দী ইউনিয়নে কেন্দ্র দখল, জাল ভোটকে কেন্দ্র করে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে গুলিবিদ্ধসহ ৩০ জন আহত হন।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্ত্যবরত মেডিক্যাল অফিসার ডা. মো. আবদুল বাকী বাংলানিউজকে বলেন, সকাল থেকে নির্বাচনী সহিংসতায় ৪৯ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ২০-২৫ জন ছাড়া গুলিতে আহত হন। গুরুতর আহত দুইজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
নরসিংদী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) হারুনুর রশীদ বাংলানিউজকে বলেন, নজরপুর কেন্দ্রের বাইরে সামান্য সমস্যা থাকলেও ভোটকেন্দ্রের ভেতরে কোনো সমস্যা নেই। এখানে সুষ্ঠুভাবেই ভোট হচ্ছে।
তিন ইউনিয়নে ভোট বর্জন
এদিকে জালভোট ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগ এনে সদর উপজেলার আমদিয়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (আনারস প্রতীক) নাজিম উদ্দিন ভূইয়া রিপন, কাঁঠালিয়া ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জহিরুল ইসলাম হিরন মোল্লা ও করিমপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া ভোট বর্জন করার ঘোষণা দেন।
নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, আমি সকাল থেকে প্রতিটি কেন্দ্রে ঘুরেছি। ১০ কেন্দ্রের কোনোটিতেই আমার কোনো এজেন্ট নেই। চারটি কেন্দ্রে আমি উপস্থিত থেকে এজেন্ট দিলেও চলে আসার পরই তাদের বের করে দেওয়া হয়েছে। বহিরাগতরা এসে প্রতিটি কেন্দ্র দখল করে নিয়েছেন, তাঁরা প্রকাশ্যে সিল মারছেন। তাদের জীবন হুমকির মধ্যে থাকায় নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন তিনি।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্ত্যবরত মেডিক্যাল অফিসার ডা. মো. আবদুল বাকী বলেন, সকাল থেকে নির্বাচনী সহিংসতায় ৬০ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে থেকে ২৫ জন ছড়া গুলিতে আহত হয়েছে। গুরুতর আহত তিনজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
নরসিংদী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) হারুনুর রশীদ বলেন, কয়েকটি কেন্দ্র ছাড়া সবগুলোতেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হয়েছে। কিছু কেন্দ্রে বিচ্ছিন্ন ঘটনার কারণে কয়েকজন আহত হয়েছে। আর মাথায় ইটের আঘাত পেয়ে এক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তবে প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়ার পর তিনি এখন সুস্থ আছেন। এদিকে সবখানেই পর্যাপ্ত পুলিশ রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২১
এনটি