ঢাকা: নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ করছেন শিক্ষার্থীরা।
দীর্ঘদিন ধরে হাফ পাস বাস্তবায়নসহ নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে শর্তসাপেক্ষে ১ ডিসেম্বর থেকে হাফ পাস বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন পরিবহন মালিকরা। তবে, কয়েকদিনের ব্যবধানে রাজধানীতে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনার জেরে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে সড়কে অবস্থান অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থীরা।
মৌখিক আশ্বাস নয়, বরং সব দাবি মেনে প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তারা। এদিকে রামপুরা-ধানমন্ডি এলাকার সড়ক অবরোধে তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে যান চলাচল বন্ধ থাকায় যানজট ছড়িয়ে পড়েছে আশে-পাশের সড়কগুলোতে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে নাকাল নগরবাসী। জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া মানুষ পড়েছেন ভোগান্তিতে।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল থেকে একে একে রাজধানীর রামপুরা, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, সায়েন্সল্যাব, মোহাম্মদপুর, বনানী এলাকার সড়কে নেমে আসেন আশে-পাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। সায়েন্সল্যাব থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা কয়েক দফা মিছিল করলেও সড়কে বেশি ক্ষণ অবস্থান করেননি।
মোহাম্মদপুরে অবস্থান শেষে স্বল্প সময়ের মধ্যে সড়ক ছেড়ে দিলেও রামপুরা ও ধানমন্ডি-২৭ নম্বর এলাকায় সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। একরামুন্নেসা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাইনুদ্দিন দুর্জয়ের মৃত্যুর ঘটনায় সকাল ১০টা থেকে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ইম্পেরিয়াল কলেজ, ন্যাশনাল আইডিয়াল ও রাজধানী আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা রামপুরা ব্রিজের সড়কে বসে স্লোগান দিতে থাকেন। এতে সড়কের দুইপাশে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে।
এ সময় শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন পরিবহনের চালকদের লাইসেন্সসহ অন্যান্য কাগজপত্র যাচাই করতে দেখা যায়। জরুরি প্রয়োজনের গাড়ির চালকদের সঙ্গে কথা বলে তাদেরকে ছেড়ে দিতে দেখা হচ্ছে।
রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে রয়েছে। আপাতত যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ধানমন্ডি-২৭ নম্বর রাপা প্লাজার সামনে সড়কের উভয়পাশ আটকে বিক্ষোভ করছেন মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মোহাম্মদপুর গভর্মেন্ট কলেজ, লালমাটিয়া মহিলা কলেজ, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ আশপাশের বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে নিরাপদ সড়কের দাবি ছিল তাদের। কিন্তু নানা কারণে সেগুলো বাস্তবায়িত হয়নি। তারা চান অবিলম্বে যেন সড়কে সাধারণ মানুষের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।
নিরাপদ সড়কের জন্য তাদের ৯ দফা দাবির একটি ছিল অর্ধেক ভাড়া কার্যকর করা। বাকি দাবিগুলোর বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বাকি দাবিগুলো মেনে প্রজ্ঞাপন জারি না করা পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
ঢাকার সড়ক মোটেও নিরাপদ নয় উল্লেখ করে এক শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষার্থীরা নিয়মিতই মরছে এই সড়কে। নটরডেমের শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার পর গতকাল আরেক এসএসসি শিক্ষার্থী মারা গেল। সুষ্ঠু বিচার ও ব্যবস্থাপনা না থাকায় প্রায়ই এমনটি হচ্ছে। সড়ক নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না। ধানমন্ডি এলাকায়ও বিভিন্ন গাড়ির লাইসেন্স ও ফিটনেস সনদ যাচাই করতেও দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত কমিশনার (এডিসি) রুবাইয়াত জামান জানান, সড়কে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পর্যাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করার পর পুলিশ সহনশীল ভূমিকায় রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
ইতোমধ্যে হাফ ভাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পুলিশ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে সড়ক থেকে সরে যেতে অনুরোধ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২১
পিএম/এএটি