ঢাকা: দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলো চলাচলের জন্য নিরাপদ থাকে এবং যানবাহন চালকরা যাতে সড়ক আইন ও নিয়ম-কানুন মেনে গাড়ি চালান সেই প্রত্যাশা নিয়ে বার বার আন্দোলন ও সড়ক অবরোধ করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু শিক্ষার্থীদের এসব আন্দোলনের পর কিছুদিন চালকরা নিয়ম মানলেও পরে তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
এর আগে, ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে এমইএস বাসস্ট্যান্ডে জাবালে নূর পরিবহনের দুই বাসের প্রতিযোগিতায় বাসচাপায় নিহত হন শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব এবং একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম।
সম্প্রতি রাজধানীর গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) গাড়ির ধাক্কায় নিহত হন নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান। এ শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছিলেন শিক্ষার্থীরা। তাদের সড়ক অবরোধ ও আন্দোলন শেষ হতে না হতে সোমবার (২৯ নভেম্বর) রাত পৌনে ১১টার দিকে রামপুরায় অনাবিল পরিবহনের বাসচাপায় মাইনুদ্দিন ইসলাম দুর্জয় নামে এক স্কুলছাত্র নিহত হয়।
সোমবার রাতেই রামপুরা এলাকায় বিক্ষুব্ধ জনতা নয়টি বাস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) সকাল থেকে রামপুরা, ধানমন্ডিসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আবারও আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে ঘাতক অনাবিল পরিবহনের বাসের হেলপার চান মিয়াকে আটক করেছে র্যাব। এ ঘটনায় রামপুরা থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে নিহত দুর্জয়ের মা বাদী হয়ে নিরাপদ সড়ক আইনে একটি মামলা করেন। বাস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেছে।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে। এদিকে সড়কে যানবাহন চলাচলে কীভাবে শৃঙ্খলা ফেরাতে হয় তা শিক্ষার্থীরা দেখিয়ে দিচ্ছেন। নয় দফা দাবির মধ্যে মাত্র একটি দাবির একাংশ মানা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সব দাবি মানা না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
রামপুরা ব্রিজে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা রামপুরা ব্রিজ থেকে মেরুল বাড্ডার ইউলুপ পর্যন্ত রাস্তা অবরোধ করেছেন। তবে সড়কে জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবাহন দেখে ছেড়ে দিচ্ছেন তারা। যেসব যানবাহনের চালকদের লাইসেন্স বা প্রয়োজনীয় কাগজ নেই তাদের আটকে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া তারা সড়কে মানুষের চলাচলে রিকশা, মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার লেন অনুযায়ী চলতে বাধ্য করছেন। পথচারীদের হাঁটা চলায় ফুটপাত ব্যবহারের জন্য বাধ্য করছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত রামপুরা ইম্পেরিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী রাকিব বাংলানিউজকে বলেন, আমরা চাই সড়কে শৃঙ্খলা। সড়কে নিরাপদে যাতে সবাই চলাচল করতে পারেন। আর চালকরা যাতে নিয়ম মেলে চলেন। কিন্তু বাসের চালকরা বেপরোয়া। কোনো দিনই তারা নিয়ম মানেন না। বারবার শিক্ষার্থীদের রক্ত সড়কে ঝরছে। তাই আমাদের দাবিতে আমরা অটল। নিরাপদ সড়ক চাই, নয়তো আন্দোলন চলবেই।
আন্দোলনে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ক্যামব্রিয়ান কলেজ, রামপুরন ইম্পেরিয়াল কলেজসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন।
সড়ক অবরোধ: সরেজমিনে আরও দেখা যায়, রামপুরা ব্রিজে শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে হাতিরঝিল এলাকায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। গুলশান এলাকার লেকপাড় রোডেও প্রচণ্ড গাড়ির চাপ। এদিকে মালিবাগ ও মগবাজারসহ পুরো এলাকায় রয়েছে প্রচণ্ড যানজট।
শিক্ষার্থীদের দাবি: নাঈমসহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সব শিক্ষার্থীর ঘটনায় মামলার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে করা; নাঈমসহ দুর্ঘটনায় নিহত সব শিক্ষার্থীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া; দুর্ঘটনায় আহত সব যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকের যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা; ঢাকাসহ সারা দেশে সড়ক, নৌ ও রেলপথে ভাড়ায় শিক্ষার্থীদের হাফ পাস প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে নিশ্চিত করা; বৈধ-অবৈধ যানবাহনের চালকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বৈধতার আওতায় আনা ও বিআরটিএর সব কর্মকাণ্ডের ওপর নজরদারি এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করা; সারা দেশে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা স্বয়ংক্রিয় ও আধুনিক এবং পরিকল্পিত নগরায়ণ নিশ্চিত করা; গণপরিবহনে নারীর প্রতি যৌন হয়রানি ও সহিংসতা বন্ধ করা; জনসাধারণের জন্য ফুটপাত, পথচারী–সেতুসহ নিরাপদ চলাচল ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; পরিকল্পিত বাস স্টপেজ ও পার্কিং নির্মাণ এবং এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের বাসভাড়া হাফ পাসের দাবি মেনেছে। কিন্তু তা আংশিক। শুধু রাজধানীতে হাফ পাস চলবে। কিন্তু আমাদের দাবি ছিল সারা দেশে শিক্ষার্থীদের হাফ পাস কার্যকর করতে হবে। কিন্তু একটি দাবির আংশিক মানা হয়েছে।
শিক্ষার্থী ইয়াসিন বলেন, নিরাপদ সড়কের জন্য আমাদের নয় দফা দাবির একটি অর্ধেক ভাড়া কার্যকর করা হয়েছে। বাকি দাবিগুলোর বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বাকি দাবিগুলো মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২১
এসজেএ/আরআইএস