ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বিজয়ের মাস

এখনও দেশের সূর্য সন্তানরা থাকেন ভাঙা ঘরে!

সাজিদুর রহমান রাসেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০২১
এখনও দেশের সূর্য সন্তানরা থাকেন ভাঙা ঘরে! বীর মুক্তিযোদ্ধা নিতাই চন্দ্র ঘোষ এখন আর আগের মতন কথা বলতে পারেন না। ছবি: বাংলানিউজ

মানিকগঞ্জ: বীর মুক্তিযোদ্ধা নিতাই চন্দ্র ঘোষ প্রায় আট বছর ধরে প্যারালাইসিস হয়ে বিছানায় দিন কাটাচ্ছেন দেশের এই সূর্য সন্তান। তার সোয়ার ঘর ভাঙা।

সেই ঘরের টিনের চালা ও বেড়ার ফাঁকা দিয়ে রাতের তাঁরারা উঁকি দেয় আর বৃষ্টির দিনে তাকে ভিজিয়ে দেয়। সরকারিভাবে যে টাকা ভাতা পান দেশের এই সূর্য সন্তান তাতে তার ও স্ত্রীর ওষুধ কেনার পর তেমন কোন টাকা আর থাকে না অবশিষ্ট।

বেশ কয়েক বছর আগে প্যারালাইসিস হয়ে বিছানায় দিন কাটাচ্ছেন এই সূর্য সন্তান। এমনকি এখন তিনি ভালোভাবে কথাই বলতে পারেন না। চোখের ইশারায় কথা বলতে হয় তাকে। এক সময় দেশকে স্বাধীন করার জন্য পাক বাহিনীর সঙ্গে গেরিলা যুদ্ধে নিজেরা নিজেরা ইশারায় কথা বলে যুদ্ধ করেছেন। এখনও সেভাবেই তার সহধর্মিনীর সঙ্গে কথা বলে তার দিন কাটছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা নিতাই চন্দ্র ঘোষের বাড়িতে ঢুকেই চোখে পড়ে কাচা ঘর। সেই ঘরের চালের ওপরের অংশে ওবেড়ায় বেশ কয়েক অংশে ছোট-বড় ছিদ্র। এক সময় শরীরে যখন শক্তি ছিল তখন ছেলেদের নিয়ে সময়টা বেশ ভালোই কেটেছে তার। কিন্তু বয়সের ভারে নিতাই এখন শুধু চেয়ে হাউ-মাউ করে কাঁদেন আর কি যেন ভাবেন।

নিতাইয়ের স্ত্রী এখন তার অসুস্থ স্বামীকে নিয়েই কাটাচ্ছেন দিনের বেশির ভাগ সময়। নিতাইয়ের দাম্পত্য জীবনে দুই ছেলে। তারা লেখাপড়া করেননি। বড় ছেলে টাঙ্গাইলে একটি মিষ্টির দোকানের কর্মচারী আর ছোট ছেলে বাড়ির উঠানে মুদি দোকান করে কোনোমতে জীবন অতিবাহিত করছেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা নিতাই চন্দ্র ঘোষের ছোট ছেলে তুষ্ট ঘোষ বাংলানিউজকে বলেন, আমার বাবা বেশ কয়েক বছর ধরে অসুস্থ। তার চিকিৎসাও ভালো মতো আমরা করাতে পারছি না। আমরা দুই ভাই যে কাজ করি তা থেকে আমাগো পেটের ভাত যোগার করাটাই কষ্টকর। তবে বাবা সরকারিভাবে যে টাকা পান তা দিয়ে তাদের দুইজনের ওষুধের টাকাটা হয়। সরকার যদি আমার বাবা-মার জন্য একটি ঘর তৈরি করে দিতো তবে, বাবা মারার আগেও শান্তি পেতেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

নিতাই চন্দ্রের স্ত্রী রানু ঘোষ বলেন, আমার স্বামী যে টাকা ভাতা পায় সেই টাকা দিয়ে আমাদের দুইজন ওষুধ কিনেই প্রায় শেষ হয়ে যায়। বৃষ্টি হলে ঘরের চালের ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ে। এছাড়া ঘরের সব খুঁটিগুলো পচে গেছে, যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে সেই একটা চিন্তায় রাত-দিন কাটাই। শেখের বেটির কাছে আমার আবদার, আমি স্বামী নিয়ে ভাঙা ঘরে থাকি আমারে থাকার জন্য একটা ঘর যেন করে দেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা নিতাই চন্দ্র ঘোষের সঙ্গে প্রতিবেদকের কথা হলে তবে, তিনি কোন কথা স্পষ্ট করে বলতে পারেননি। কোথায় যুদ্ধ করেছেন ও কার আন্ডারে যুদ্ধ করেছেন শুধু এই কথা টুকু বলতে পেরেছেন।

সাটুরিয়া উপজেলার বীব মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আ খ ম নূরুল হক বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এই উপজেলায় অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকারিভাবে ১২টি ঘরের টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন।  একসঙ্গে এ ঘরের কাজ শুরু হবে বলেও জানান তিনি ।  

বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০২১
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।