ঢাকা: জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বহুমুখী কর্মের মাঝে নিজেকে পরিণত করেছিলেন দেশের অগ্রগণ্য ব্যক্তি হিসেবে। তিনি মারা গেলেও এ দেশের প্রগতিশীল চর্চার সঙ্গে জড়িত মানুষদের মাঝে বেঁচে থাকবেন কর্মের মাধ্যমে।
জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের শেষ শ্রদ্ধানুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এমন মন্তব্য করেন।
বুধবার (১ ডিসেম্বর) বাংলা একাডেমি ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আজিমপুর কবরস্থানে বাবার কবরে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
এর আগে প্রথমে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে নিয়ে আসা হয় রফিকুল ইসলামের মরদেহ। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একাডেমির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় সেখানে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সচিব আবুল মনসুর, মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদার নেতৃত্বে বাংলা একাডেমি, কবি নজরুল ইন্সটিটিউট, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মশতবর্ষ জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি, কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় (আসানসোল, ভারত), জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব।
বাংলা একাডেমিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রফিকুল ইসলামের ছেলে বর্ষন ইসলাম বলেন, আব্বা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ-এ তিন আয়োজন দেখে যেতে চেয়েছিলেন। আজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের অনুষ্ঠানে তিনি ক্যাম্পাসে এসেছেন, কিন্তু মরদেহ হয়ে।
তিনি বলেন, ‘আব্বার জীবনে কোনো ব্যর্থতা ছিল না। তিনি এ-টু-জেড সফল মানুষ ছিলেন। দেশকে তিনি ভালোবাসতেন। আমি আব্বাকে দেশের বাইরে চিকিৎসা করাতে চাইলেও তিনি রাজি হননি। ’
এরপর শহীদ মিনারে রফিকুল ইসলামের মরদেহে রাষ্ট্রপতির পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এসএম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ প্রমুখ।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আনিস স্যার চলে গেলেন, রফিক স্যার চলে গেলেন। আমরা সত্যিই অভিভাবকশূণ্য হয়ে পড়লাম। আমাদের ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে, প্রতিটি সংগ্রামে, সংকটে, স্বাধীকার, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র- প্রতিটি সংগ্রামে তিনি ছিলেন এমন এক বাতিঘর, যিনি জাতিকে পথ দেখিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদ চেতনা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। জাতির যেকোনো সংকটে তিনি সম্মুখ সারিতে নেতৃত্ব দিতেন, আমাদেরকে পথ দেখাতেন।
রফিকুল ইসলাম সারাজীবন নজরুল চর্চাকে নিজের জীবনের ব্রত করেছিলেন বলে মন্তব্য করে কাজী নজরুল ইসলামের নাতনি খিলখিল কাজী বলেন, নজরুল চর্চায় তিনি যে অবদান রেখে গেছেন, তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি পরিবারের অভিবাবক ছিলেন। নজরুল জীবনী তিনি লিখে গেছেন। এটা তার সবচেয়ে বড় কাজ। তিনি যা রেখে গেছেন, তা নিয়ে আমরা পথ চলবো।
শহীদ মিনারে রফিকুল ইসলামের মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি, ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাবি বাংলা বিভাগ, ঢাবি কলা অনুষদ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সংগঠন।
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রফিকুল ইসলামের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে। সেখানে তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর আজিমপুর কবরস্থানে বাবার কবরে রফিকুল ইসলামের দাফন সম্পন্ন হয়।
এর আগে মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রফিকুল ইসলাম। রাতে উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০২১
এইচএমএস/জেএইচটি