ঢাকা: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীকে স্মরণীয় ও প্রাঞ্জল করতে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের আয়োজনে আগামী শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) থেকে শুরু হচ্ছে ১১ দিনব্যাপী বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা নাট্যোৎসব।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তন ও পরিক্ষণ থিয়েটার হলে এ উৎসবের নাটকগুলো মঞ্চায়ন করা হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আগামী শুক্রবার বিকেল ৫টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নন্দনমঞ্চে উৎসব উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স্বাধীন বাংলাদেশের সংস্কৃতির অগ্রযাত্রায় অসামান্য ভূমিকা রাখা ৫০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা সংস্কৃতিজন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন উৎসব উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব মো. শাহনেওয়াজ। সভাপতিত্ব করবেন উৎসব উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন। উৎসব উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকবে ‘স্মরণে ৭১’ শীর্ষক কোরিওগ্রাফির মঞ্চায়ন।
এছাড়া পুরো উৎসবজুড়ে থাকবে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের ১৪টি নাট্যদলের বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মঞ্চসফল নান্দনিক নাটক মঞ্চায়ন। এরমধ্যে আগামী ৩ ডিসেম্বর পরিক্ষণ থিয়েটার হলে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের নাটক ‘ঘুমনেই’, ৪ ডিসেম্বর পরিক্ষণ থিয়েটার হলে চট্টগ্রামের উত্তরাধীকার নাটক ‘মৃত্যু পাখি’, ৫ ডিসেম্বর পরিক্ষণ থিয়েটার হলে দৃশ্যকাব্যের নাটক ‘বাঘ’, ৬ ডিসেম্বর মূল হলে শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্রের নাটক ‘রাইফেল’, ৭ ডিসেম্বর মূল হলে বুনন থিয়েটারের নাটক ‘সিক্রেট অব হিস্ট্রি’, পরিক্ষণ থিয়েটার হলে ঢাকা পদাতিকের ‘কথা ৭১’, ৮ ডিসেম্বর পরিক্ষণ থিয়েটার হলে বাংলাদেশ পুলিশ থিয়েটারের নাটক ‘অভিশপ্ত আগস্ট’, ৯ ডিসেম্বর মূল হলে প্রাঙ্গণেমোর প্রদর্শন করবে ‘কনডেমড সেল’, পরিক্ষণ থিয়েটার হলে সংলাপ গ্রুপ থিয়েটার প্রদর্শন করবে তাদের নাটক ‘মানব সুরৎ’।
এছাড়া ১০ ডিসেম্বর মূল হলে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায় আনবে ‘শ্রাবণ ট্র্যাজেডি’, পরিক্ষণ থিয়েটার হলে থিয়েটার আর্ট ইউনিট আনবে ‘কোর্ট মার্শাল’, ১১ ডিসেম্বর মূল হলে বরিশালের নাট্য মঞ্চায়ন করবে নাটক ‘তীলক’, ১২ ডিসেম্বর মূল হলে পদাতিক নাট্য সংসদ (টিএসসি) মঞ্চায়ন করবে তাদের নাটক ‘কালরাত্রি’, ১৩ ডিসেম্বর থিয়েটার মঞ্চায়ন করবে ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’।
উৎসব উপলক্ষে জাতীয় নাট্যশালার লবিতে একুশে পদকপ্রাপ্ত আলোকচিত্র শিল্পী পাভেল রহমানের ছবি নিয়ে ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন’ স্থিরচিত্র প্রদর্শনী রয়েছে এবং বাংলাদেশ থিয়েটার আর্কাইভস কর্তৃক বাংলাদেশের ৫০ বছরের নাটকের পোস্টার ও স্থিরচিত্র প্রদর্শনী থাকবে। উৎসবে ’একটি অমিমাংসিত রাজনৈতিক বাস্তবতা: প্রেক্ষিত মহাকালের ঘুমনেই’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া এ উৎসবে বাংলাদেশের ৫০ বছরে সংস্কৃতিচর্চা, মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে সব প্রতিষ্ঠান নিয়মিত গবেষণা ও প্রসারে ভূমিকা রেখে চলেছে এমন ৯টি প্রতিষ্ঠানকে (মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, সিরাজগঞ্জ উত্তরণ মহিলা সংস্থা, থিয়েটার পত্রিকা, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, ছায়ানট, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার, কেন্দ্রীয় কঁচি-কাচার মেলা, পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ থিয়েটার আর্কাইভস) আগামী ১০ ডিসেম্বর সম্মাননা দেওয়া হবে।
উৎসবের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে উৎসবের সদস্য সচিব মো. শাহনেওয়াজ জানান, বাঙালি সংস্কৃতির হাজার বছরের ঐতিহ্যের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও বিকশিত মাধ্যম নাটক। নাটকের মাধ্যমে মানুষের অনেক কাছাকাছি পৌঁছানো যায়। মানুষের সুখ-দুঃখের অংশিদারিত্ব নিয়ে এ শিল্পটি অত্যন্ত আশাবাদী হয়ে এগিয়ে চলছে দীর্ঘদিন যাবত। বাঙালি সংস্কৃতি ও রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বিকাশে নাটক সব সময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। মহাকাল নাট্য সম্প্রদায় জন্মলগ্ন থেকেই তার নাটকের বিষয় নির্বাচন থেকে শুরু করে সব সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বৈচিত্রের সন্ধানী। মহাকাল এর গর্বিত উনচল্লিশ বছর সাফল্যের অর্জন। জাতির জনকের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা এবং যার সারা জীবনের ত্যাগ- তিতিক্ষা জেল-জুলুম সংগ্রাম এবং ৩০ লাখ শহীদের রক্তদান এবং দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের অর্জন আমাদের এ প্রিয় স্বদেশ বাংলাদেশ। জাতির পিতার শতবর্ষ এবং প্রিয় মাতৃভূমির ৫০ বছর উদযাপন আমাদের সংস্কৃতিচর্চার শক্তি অর্জন ও ধারাবাহিক সংস্কৃতিচর্চার জন্য অপরিহার্য। সেই জায়গা থেকে বিশ্ব মহামারির এ দুঃসময় কাটিয়ে দর্শক তথা সামাজিকগণকে হলমুখী করতে এবং মানসিকভাবে স্বস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে এ উৎসব অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০২১
এইচএমএস/আরবি