বান্দরবান: বান্দরবানে কলাগাছের আঁশ থেকে সুতা তৈরির উদ্ভাবনী প্রকল্পের উদ্বোধন ও এক দিনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে বান্দরবানের কুহালং ইউনিয়নের আমতলীপাড়াতে এই সুতা তৈরির উদ্ভাবনী প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কলা গাছ থেকে সুতা তৈরির উদ্ভাবনী প্রকল্পের একদিনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং উদ্ভাবনী প্রকল্পের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
এ সময় অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. কায়েসুর রহমান, চেমী মৌজার হেডম্যান পুলু প্রু, বান্দরবান প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলাম বাচ্চু,লার্ক গ্লোবাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান সায়েদ মুস্তফা জাবেদসহ ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ, গ্রাউসের কর্মকর্তা ও পাড়াবাসীরা উপস্থিত ছিলেন। বান্দরবান জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. কায়েসুর রহমান জানান, এই প্রকল্প বান্দরবানে প্রথম, আর এই প্রকল্পের সার্বিক তত্ত্বাবধান ও সমন্বয়ের দায়িত্ব নিয়েছে বান্দরবান জেলা প্রশাসন।
১১ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১৬ ডিসেম্বর এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে, আর এই প্রকল্পের মাধ্যমে এলাকাবাসী পাহাড়ের পরিত্যক্ত কলা গাছ কেটে এনে মেশিনের মাধ্যমে পিষে নরম করে সুতা বের করে তা পরিষ্কার করে শুকিয়ে বিক্রি করার উপযোগী করে তুলবে আর তাদের কাছ থেকে দেশের নানা প্রান্তে ব্যবসায়ীরা এসে সেই সুতা কিনে নেবেন।
এ সময় বক্তব্য রাখেন লার্ক গ্লোবালের চেয়ারম্যান সায়েদ মুস্তফা জাবেদ বলেন, পাইলটিং প্রকল্পের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে বান্দরবানের ক্রাউ আমতলীপাড়া ও খামাদংপাড়াকে। সমীক্ষায় এ গ্রামের পরিবারগুলোর আর্থ-সামাজিক অবস্থা নিরূপণের জন্য প্রতিটি পরিবারের গড় মাসিক আয়, স্বাস্থ্য, শিক্ষাভিত্তিক পরিসংখ্যান, কর্মক্ষম লোকের তথ্য-উপাত্তগুলো নির্ণয় করা হয়। তন্তু তৈরির প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ, আর এ প্রকল্পের জন্য মেশিনসহ সার্বিক অর্থায়নে এগিয়ে আসে বেসরকারি সংস্থা উদ্দীপন, আর তন্তু তৈরির পর বাজারজাতকরণের সব দায়িত্ব নেয় সিএইচপি এবং লার্ক গ্লোবাল। এ সময় সুতা বিক্রি করে বিক্রির টাকা সরাসরি উৎপাদনকারীর বিকাশ অ্যাকাউন্টে চলে আসবে বলে নিশ্চিত করে সবার কাছে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, মুজিববর্ষ উদযাপন এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বান্দরবানের কুহালং ইউনিয়নের ক্রাউ আমতলীপাড়া এবং রাজবিলা ইউনিয়নের খামাদংপাড়ার ৫টি পরিবারের ১০ জনসহ দুইপাড়ার ২০ জন পুরুষ-নারীকে কলাগাছ থেকে সুতা তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রশিক্ষিত করার কার্যক্রম শুরু হলো আর এই উদ্ভাবনী প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়ন হলে বান্দরবানের অন্যান্য পাড়াগুলোতে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে আর এতে পাড়াবাসী অনেকটাই লাভবান হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, বান্দরবান পার্বত্য জেলায় কলা গাছের প্রাচুর্য রয়েছে এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য এনজিওদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় কলা গাছ থেকে ফাইবার তৈরির বিষয়টি আমার নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে বান্দরবানে পাইলটিং প্রকল্প হিসেবে কলা গাছের তন্তু তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক গ্রাম সমীক্ষা শুরু করে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ এবং গ্রাউস, প্রাথমিকভাবে ৬৩টি গ্রামের ওপর সমীক্ষা করে এ প্রকল্পের জন্য ৯টি পাড়া ও গ্রামকে নির্বাচন করা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজ শুরু হয়েছে ।
তিনি আরো বলেন, ৫টি কলাগাছ থেকে ১ কেজি সুতা উৎপাদন করা সম্ভব তাছাড়া যেসব পরিবার এ প্রকল্পে সরাসরি জড়িত থাকবে না তারা ও উৎপাদনকারীর কাছে কলাগাছ বিক্রির মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হবে, পাশাপাশি বান্দরবানের বিভিন্ন পাড়ার জনসাধারণেরও আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২১
এএটি