‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ভারত অবদান রেখেছে এবং আজ আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে দ্রুত অগ্রসর হয়েছে, যা বাকি বিশ্বের জন্য এক অনুপ্রেরণা’ বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং।
তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ ভারতীয় সেনা ও মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘১৯৭১ সালের যুদ্ধে ভারত জয়ী হয়েছিল, আজ আমি সেইসব ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রত্যেক সেনার সাহসিকতা, বীরত্ব ও আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধা জানাই।
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রীর ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে রবিবার দিল্লির ইন্ডিয়া গেটে আয়োজিত অনুষ্ঠানের উদ্বোধনীতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ মন্তব্য করেছেন তিনি। এসময় ১৯৭১ সালে শহীদ ভারতীয় সেনা কর্মকর্তাদের স্মরণে ‘ওয়াল অব ফেম’এরও উদ্বোধন করেন রাজনাথ।
তার অভিমত, ‘১৯৭১ সালের যুদ্ধ ছিল এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ- যেখানে ভারতের নৈতিকতা, গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য এবং ন্যায় বিচার ফুটে উঠেছিল। ইতিহাসে এই জিনিস খুব কমই দেখা যায় যেখানে একটি যুদ্ধে অন্য একটি রাষ্ট্রকে পরাজিত করে একটি রাষ্ট্র (ভারত) তার আধিপত্য প্রকাশ করেনি- বদলে সেই রাষ্ট্রটির (বাংলাদেশ) রাজনৈতিক প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়েছে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭১ সালের যুদ্ধে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে অসংখ্য বাঙালি ভাই-বোনেদের ওপর যেভাবে অত্যাচার ও অন্যায় নেমে আসতো তখন সেটা অন্য দেশের ওপরও প্রভাব ফেলতো। কখনও কখনও আমরা ভাবতাম যে আমাদের বাঙালি ভাই-বোনেদের ভুলটা কি ছিল? তারা কেবল তাদের অধিকারের দাবি তুলেছিল, তারা নিজেদের শিল্প-সংস্কৃতি-ভাষা সংরক্ষণের দাবি তুলেছিল, রাজনীতি ও সরকারে প্রতিনিধিত্বের দাবি তুলেছিল। বাঙালি ভাই-বোনেদের উপর অন্যায়-অত্যাচার মানবতার পক্ষে ভয়ঙ্কর ছিল। ফলে এই পরিস্থিতিতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষদের অন্যায় ও শোষণ থেকে মুক্ত করাটাই আমাদের রাজধর্ম, রাষ্ট্রধর্ম ও সৈন্য ধর্ম ছিল। ’
এসময় পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে রাজনাথ বলেন, ‘সন্ত্রাস ও ভারত বিরোধী কার্যকলাপ চালিয়ে ভারতকে বিভক্ত করতে চায় পাকিস্তান। কিন্তু ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সেই চক্রান্তকে ভারতীয় সেনাবাহিনী ব্যর্থ করে দিয়েছিল এবং এখন সন্ত্রাসকে একেবারে শিকড় সমেত উপড়ে ফেলার জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনী কাজ করে চলেছে। আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে জয়ী হয়েছি এবং ছায়া যুদ্ধেও সফল হবো। ’
তার মতে, ‘১৯৭১ এর যুদ্ধ আমাদেরকে একসাথে পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করায়। এই যুদ্ধই আমাদের বলে দেয় যে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগ একটা ঐতিহাসিক ভুল ছিল। একটি নির্দিষ্ট ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তানের জন্ম হলেও তা এক থাকতে পারেনি। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর থেকেই আমাদের এই প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারতের ওপর ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে আসছে। ’
সম্প্রতি তামিলনাড়ুতে হেলিকপ্টার দুর্ঘনায় ভারতের ‘চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ’ (সিডিএস) জেনারেল বিপিন রাওয়াত, তার স্ত্রী এবং আরও ১১ জন সেনা সদস্যের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে রাজনাথ সিং বলেন, “অত্যন্ত জাঁকজমক ভাবে এই অনুষ্ঠান করার কথা ছিল, কিন্তু জেনারেল বিপিন রাওয়াতসহ ১৩ জনের মৃত্যুর কারণে আমরা স্থির করেছি যে ‘স্বার্ণিম বিজয় পর্ব’ খুবই সাদামাটা ভাবে করা হচ্ছে। বিমানবাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন বরুন সিং-ও বেঙ্গালুরুর সেনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আমরা তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। ”
অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে এদিন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক এবং মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ভিডিও বার্তা দেখানো হয়। এদিকে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ব্যবহৃত সমরাস্ত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে এক প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। দু’দিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠানের সমাপনী আগামীকাল সোমবার।
রাজনাথ সিং ছাড়াও এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী অজয় ভাট, সেনাপ্রধান মনোজ মুকুন্দ নরভানে, বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল ভি.আর. চৌধুরী ও নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল আর. হরি কুমার ও প্রতিরক্ষা সচিব অজয় কুমার প্রমুখ।
সৌজনৌ বাংলাদেশ প্রতিদিন
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২১
নিউজ ডেস্ক