ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ধর্ষণের পর বিয়ে করে হত্যা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২১
ধর্ষণের পর বিয়ে করে হত্যা

ঢাকা: ২০১৯ সালে মাসুদ ও শারমিনের পরিচয় হয়। এর কিছু দিন পর শারমিন রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় মাসুদের নামে একটি ধর্ষণ মামলা করেন।

এরপর মামলার নিষ্পত্তির জন্য উভয় পরিবারের সম্মতিতে ওই বছরের ১৭ নভেম্বর শারমিনের চাচার বাসায় তাদের বিয়ে হয়। বিয়ে হলেও শারমিনের সঙ্গে সংসার করতে আগ্রহী ছিলেন না মাসুদ।

দৈনন্দিন কলহের জেরে পরিকল্পিতভাবে বরিশালগামী এমভি কুয়াকাটা-২ লঞ্চের লস্কর কেবিনে শারমিনকে হত্যা করেন মাসুদ।

সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিন জানান, গত ১০ ডিসেম্বর (শুক্রবার) সকালে ঢাকা-বরিশাল পথে চলাচলকারী এমভি কুয়াকাটা-২ লঞ্চ বরিশাল নৌ-বন্দরে পৌঁছালে লঞ্চের স্টাফরা লস্কর কেবিনে অজ্ঞাতপরিচয় তরুণীর মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে। পরে জানা যায় ওই তরুণীর নাম শারমিন আক্তার (২৭) ও তার বাবার নাম মো. এনায়েত হোসেন ফকির। এ ঘটনার পরদিন নিহত শারমিনের বাবা বাদী হয়ে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

তিনি আরও জানান, লঞ্চের সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত আসামিকে গ্রেফতারে ছায়া তদন্ত শুরু হয় এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৫ এর অভিযানে সোমবার ভোরে কক্সবাজার শহর থেকে ঘাতক মাসুদ হাওলাদারকে (১৯) গ্রেফতার করা হয়।

তিনি বলেন, গ্রেফতার মাসুদ ২০১২ সাল থেকে আশুলিয়ার একটি কোম্পানিতে পিকআপ ভ্যানের সহযোগী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আর শারমিন গত ১২ বছর ধরে ঢাকার তেজগাঁওয়ের কুনিপাড়ায় তার চাচার বাসায় থেকে গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। ২০১৯ সালের শুরুর দিকে তাদের পরিচয় হয় এবং বিয়ের আগে শারমিন বিমানবন্দর থানায় মাসুদের নামে একটি ধর্ষণ মামলা করেন এবং পরবর্তীতে উক্ত মামলার নিষ্পত্তির জন্য উভয় পরিবারের সম্মতিক্রমে ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর শারমিনের চাচার বাসায় তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তারা একত্রে বসবাস না করে নিজ নিজ বাসায় বসবাস করেন।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার মাসুদ জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তিনি শারমিনকে বিয়ে করলেও তার সঙ্গে সংসার করার বিষয়ে আগ্রহী ছিল না। কিন্তু শারমিনকে ডিভোর্স দিতে চাইলেও দেনমোহর বাবদ পাঁচ লাখ টাকা পরিশোধ করার ক্ষমতা তার নেই। এ বিষয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। হত্যাকাণ্ডের ১৫ থেকে ২০ দিন আগে শারমিনকে তিনি হত্যার পরিকল্পনা করেন। হত্যাকাণ্ড ঘটনোর পাঁচ দিন আগে শারমিন সর্দি এবং কাঁশিতে আক্রান্ত হন। মাসুদ শারমিনের এ অসুস্থতার সুযোগে তাকে কাশির সিরাপের সঙ্গে বিষপান করানোর পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মাসুদ চারদিন আগে আশুলিয়া বাজার হতে বিষ ক্রয় করেন। তারপর মাসুদ নিজে বরিশালে ড্রাইভিং লাইসেন্সের কাগজ জমা দিতে যাবে বলে শারমিনকে বিভিন্নভাবে ফুসলিয়ে নলছিটিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজি করানোর চেষ্টা করতে থাকেন। পরে বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) মাসুদের সঙ্গে বরিশালে যাওয়ার জন্য রাজি হন। এদিন দুপুর আনুমানিক দুপুর ১টার দিকে মাসুদ এবং শারমিন মিরপুর-১ থেকে বরিশাল যাওয়ার উদ্দেশে বাস যোগে সদরঘাট যাত্রা করেন। আশুলিয়া বাজার থেকে ৫০ টাকা দিয়ে কাশির সিরাপ ক্রয় করেন এবং আগে কিনে আনা বিষের কিছু অংশ কাশির সিরাপের বোতলে মিশিয়ে নেন।

তিনি বলেন, মাসুদ বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানান, হত্যার সময় যাতে শারমিনের আর্তচিৎকারে আশেপাশের কেউ কোনো কিছু শুনতে না পায় এজন্য তিনি পরিকল্পিতভাবেই বরিশালগামী এমভি কুয়াকাটা-২ লঞ্চের লস্কর কেবিন ভাড়া নেন। লঞ্চের ইঞ্জিন রুমের পাশেই লস্কর কেবিন অবস্থিত ছিল। গত ৯ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ৯টার সময় লঞ্চটি বরিশালের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। লঞ্চ যাত্রা শুরু করার পর মাসুদ তার সঙ্গে থাকা বিষ মেশানো কাশির সিরাপ শারমিনকে খাওয়ান। বিষ খাওয়ার পর শারমিন তিন থেকে চার বার বমি করে অসুস্থ এবং দুর্বল হয়ে পড়েন। অসহায় শারমিন তখন মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর শারমিন সম্পূর্ণ নিস্তেজ হয়ে পড়লে কেবিনের দরজা তালা দিয়ে মাসুদ লঞ্চের রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেতে যান। রেস্টুরেন্ট থেকে ফিরে মাসুদ কেবিনের সামনে এসে দেখতে পান, শারমিন কেবিনের দরজার ফাঁক দিয়ে বিষের বোতলটি কেবিনের মেঝেতে ফেলে দিয়েছেন। মাসুদ তখন পানি দিয়ে কেবিনের দরজার সামনে পড়ে থাকা বিষ পরিষ্কার করেন। পরে পুনরায় কেবিনে প্রবেশ করে দেখেন শারমিন শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছেন। মাসুদ তখন ব্যাগ থেকে তার শার্ট বের করে শারমিনের শ্বাসরোধ করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন। লঞ্চ যখন চরমোনাই ঘাটে এসে পৌঁছায়, তখন মাসুদ কেবিন থেকে বের হয়ে লঞ্চের দরজায় কিছুক্ষণ অবস্থান করেন। লঞ্চ বরিশাল শহরের ঘাটে এসে পৌঁছালে মাসুদ স্বাভাবিকভাবে লঞ্চ থেকে বের হয়ে সড়ক পথে বাড়িতে চলে যান।

তিনি বলেন, মাসুদ ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাত জেলার (বরিশাল, মুন্সিগঞ্জ, ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার) বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করেন। অবশেষে র‌্যাব গোয়েন্দা শাখার সহায়তায় র‌্যাব-১৫ এর একটি দল গত ১৩ ডিসেম্বর ভোরে মাসুদকে কক্সবাজারের সুগন্ধা সৈকত এলাকা থেকে গ্রেফতার করেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২১
এসজেএ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।