ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ভূমিহীন হওয়ায় পুলিশে চাকরি পাচ্ছেন না সজল

জাহিদুল ইসলাম মেহেদী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২১
ভূমিহীন হওয়ায় পুলিশে চাকরি পাচ্ছেন না সজল

বরগুনা: পরিবার ভূমিহীন হওয়ায় বাংলাদেশ পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগ পরীক্ষা সাধারণ পদে উত্তীর্ণ হয়েও চাকরি হওয়ার অনিশ্চয়তা বরগুনার বেতাগী উপজেলার সজল চন্দ্র কর্মকার অন্তরের।

পুলিশ ও সজলের পরিবার সূত্রে জানা যায়, পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে আবেদন করে বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের দক্ষিণ হোসনাবাদ গ্রামে বসবাসরত সজল চন্দ্র কর্মকার অন্তর।

গত ১৪ নভেম্বর বরগুনা পুলিশ লাইন্সে শারীরিক যোগ্যতা যাচাই হয়। সেখানে উত্তীর্ণ হন সজল। এরপর ১৭ ও ২৪ নভেম্বর তারিখে লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক ও মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষাতেও পাস করেন সজল।

চাকরিপ্রার্থী সজল বাংলানিউজকে বলেন, সবকিছুতে পাস করার পরও আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বরগুনা জেলা পুলিশ লাইন্সে ২৫ নভেম্বর সাধারণ মেডিক্যাল পরীক্ষা ও ফিঙ্গার প্রিন্টের পর ৪ ডিসেম্বর সকালে ঢাকায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালেও আমার মেডিক্যাল পরীক্ষা করানো হয়। এরপর পুলিশ ভেরিফিকেশন শুরু হয়। বেতাগী থানা, ও ডিএসবি থেকে আমার ভাড়া বাড়িতে তদন্তে আসে। তাদের কাছে ভূমিহীন সার্টিফিকেট জমা দিয়েছি।

তিনি বলেন, যারা ফিঙ্গার দিয়ে এসেছিল তাদের ফোন দিয়ে চাকরির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। রোববার বরগুনা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে গিয়ে পুলিশ সুপার স্যারকে পাইনি। অনেকক্ষণ পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরম স্যার এসে জানান- ‘তোমার সব ঠিক থাকলেও স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় তোমার চাকরিটা আমরা দিতে পারছি না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে দেখো কিছু করতে পারো কিনা। ’

এদিকে সজলের বাবা অমল কর্মকার বাংলানিউজকে জানান, তাদের পরিবারের সকলের বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা বরগুনার বেতাগীতে। তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন সবকিছুই বেতাগীতে তাই এখান থেকেই আবেদন করেছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মহরম আলী বলেন, সজলের পৈতৃক বাড়ি পটুয়াখালীরর লাউকাঠি গ্রামে। তারা বরগুনার বেতাগীতে থাকে। অথচ আবেদন ফরমে তারা সে তথ্য দেয়নি। সে পটুয়াখালী থেকে আবেদন করতে পারতো কিন্তু তা সে করেনি।

বরগুনা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মো. মেহেদী হাছান বলেন, শুধু জন্মসনদ বা এনআইডি এখানে থাকলেই হবে না। তার স্থায়ী ঠিকানা লাগবে। সেটি তার নেই। পটুয়াখালীতে তার চাচা ও বাবার কিছুটা জমি রয়েছে। সে যদি পটুয়াখালী জেলা থেকে আবেদন করতো তবে ঠিক ছিল। পুলিশে নিয়োগ পেতে হলে জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হয়। সজলের মেধা তালিকায় চতুর্থ হয়েছে অন্য সবদিক দিয়েই সে পারফেক্ট।

এ বিষয়ে বরগুনা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক বলেন, পুলিশে চাকরি নিতে হলে স্থায়ীভাবে জমি না থাকার কারণে আমরা কিছু করতে পারছি না।

বরগুনা জেলা প্রশাসক মো.হাবিবুর রহমান বলেন, বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমেই শুনলাম। যেহেতু সজল চাকরি পেয়েছেন জমি না থাকার বিষয়টি জেলা প্রশাসন দেখবে বলে আশ্বস্ত করছি।

বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামান বলেন, নিয়োগের বিষয়টি সম্পূর্ণই ওই নিয়োগ বোর্ডের সভাপতির ওপর নির্ভর করে। পুলিশের চাকরির বিষয়ে অনেক বিষয় থাকে যেগুলো খতিয়ে দেখা হয়। এ ব্যাপারে আমার কোনো সিদ্ধান্ত নেই।

বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, সারাদেশে এ নিয়ে এমন ঘটনা তিনটির সন্ধান পাওয়া গেছে। বরগুনার সজল চন্দ্র কর্মকার অন্তর, বরিশালের আসপিয়া ও খুলনার মীম।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।