খুলনা: খুলনায় নানান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়েছে।
সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) মধ্যরাত থেকেই ফুলে ফুলে ভরে ওঠে গল্লামারী স্মৃতিসৌধ।
মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনৈতিক নেতারা, সরকারি কর্মকর্তা এবং সাধারণ মানুষ পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের।
দিবসটি পালন উপলক্ষে সকাল ১০টায় খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক।
প্রধান অতিথি তার বক্তৃতায় বলেন, যখনই বাঙালি বৈধ পন্থায় ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করেছে তখনই দখলদার পাকিস্তানি স্বৈরাচারেরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। নির্বাচনে ভরাডুবির পর এই ষড়যন্ত্র পাকাপোক্ত হয়। এ দেশের মানুষ যাতে কখনও মাথা উচু করে দাঁড়াতে না পারে সেজন্য ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকেই বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু হয়, যা চূড়ান্ত পরিণতি পায় ১৪ ডিসেম্বরে। কিন্তু পাকিস্তিানিদের সেই নীলনকশা সফল হয়নি। বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।
খুলনা জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন খুলনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আলমগীর কবির, সরদার মাহবুবার রহমান, খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এসএম জাহিদ হোসেন প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পুলক কুমার মন্ডল।
যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যে দিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে সকাল ৯টায় উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে অদম্য বাংলায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এরপরই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল, বিভিন্ন ডিসিপ্লিন, বিভিন্ন আবাসিক হল, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, খুবি অফিসার্স কল্যাণ পরিষদ, খুবি কর্মচারীবৃন্দ ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা, ডিনরা, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত), ডিসিপ্লিন প্রধান, ছাত্রবিষয়ক পরিচালক, প্রভোস্টরাসহ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ ভবনের সম্মেলন কক্ষে ওয়েবিনারে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন।
আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের খ্যাতনামা শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. আবুল কাশেম।
তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের তাৎপর্য, প্রেক্ষাপট এবং ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ এবং তৎপরবর্তী সময় পর্যন্ত বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা ও অবদান তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা, শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মো. ওয়ালিউল হাসানাত। সঞ্চালনা করেন বাংলা ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. রুবেল আনছার। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বাদ যোহর বিশ্ববিদ্যালয় জামে মসজিদে দোয়া মাহফিল ও বিশ্ববিদ্যালয় মন্দিরে প্রার্থনা করা হয়।
একইভাবে, শেখ হাসিনা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাব-গাম্ভীর্যের সাথে পালন করা হয়েছে। এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কালো ব্যাজ ধারণ করেন। ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ডা. মো. মাহবুবুর রহমানসহ সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অংশগ্রহণে গল্লামারী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে নীরবে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।
এছাড়া আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠন, বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠন, খুলনা প্রেসক্লাব, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২১
এমআরএম/এমজেএফ