ঢাকা: হাত কাঁপছে থরথর করে, পানটা বানিয়ে দেওয়ার শক্তি নেই। সিগারেটের প্যাকেটটা এগিয়ে দিয়ে বের করে নিতে বলেন ক্রেতাকেই।
৮০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধের নাম আবুল হোসেন। বাড়ি যশোর জেলার মনিরামপুর গ্রামের কাশিমপুর গ্রামে। ঢাকার কাটাবন এলাকায় ফেরি করে বিক্রি করেন পান-সিগারেট।
রোববার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে ওই এলাকায় লালবাগ জোনের এসি-ল্যান্ড অফিসের সামনে ওই বৃদ্ধের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
অন্য দশজনের মতো ভালোভাবেই জীবনটা কেটে যেতে পারতো আবুল হোসেনের। জানালেন, একটা ফ্যাক্টরিতে চাকরি করতেন। তবে মাঝ বয়সে এসে দুইবার স্ট্রোক করায় হাতে আর তেমন শক্তি পান না। তাই হাতটা কাঁপে তার।
দুই ছেলে তিন মেয়ের জনক আবুল হোসেন। কিছু পড়ালেখা করিয়ে মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেরা পড়ালেখা না করলেও নিজের মতো করে চলছে তাদের সংসার। তবে নিজে ও বৃদ্ধ স্ত্রীকে কারও ওপর নির্ভরশীল রাখতে চান না। তাই দোকান করে যে দুই-তিনশ টাকা রোজগার হয়, তা দিয়ে নিজে ও বাড়িতে থাকা স্ত্রীকে নিয়ে কষ্টে হলেও দিনটা পার করে দিচ্ছেন। এই আয়ে ঢাকায় ঘর ভাড়া দিয়ে থাকা সম্ভব নয়, বলে ফুটপাতেই কাটিয়ে দেন রাতটা। দিনের বেলায় ফেরি করে দোকান করেন।
পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত ১০ বিঘা জমি পাকিস্তান আমলেই সরকারি নিলামে উঠে যায়। সামান্য একটু মাথা গোঁজার মতো জায়গা বাড়িতে আছে। সেখানকার ঘর ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ভেঙে পড়ার পর তা আর ওঠাতে পারেননি। জীবনের বাকি সময়টা সেখানে কাটিয়ে দিতে পারতেন। তবে জীবিকার এই নিরন্তর লড়াই তাকে জীবন সায়াহ্নেও ঢাকা শহরের ফুটপাত থেকে সরাতে পারছে না।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন বলেন, ‘আমি মুক্তিফৌজে (বাহিনী) আছিলাম। এগার নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করছি। অফিস-আদালত চিনি না। আমার নাম কেউ উঠায়ও নাই, কোনো ভাতা-টাতাও পাই না। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২১
কেআই/এমজেএফ