ঢাকা: স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এ বছর মহান বিজয় দিবস উদযাপিত হচ্ছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে।
করে নেওয়া হয়েছে উন্নয়নমুখী বিভিন্ন কর্মসূচি।
এ বছর ২৬ মার্চ বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি করে। স্বাধীনতার এ ৫০ বছর পূর্তি অর্থাৎ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দাঁড়িয়ে পেছনের দিকে তাকালে সহজেই অনুধাবন করা যায় মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতি জীবনকে উৎসর্গ করে এবং জীবনের বিনিময়ে যে বিজয় ছিনিয়ে আনে সেই আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। অর্থনৈতিক মুক্তির যে প্রত্যাশা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল সেখানে পৌঁছাতে না পারলেও বাংলাদেশ আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আর্থসামাজিক মানুষের জীবন যাত্রার মান, অবকাঠামোর উন্নয়ন, আধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভরতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে প্রভুত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। তবে দেশ ও জাতির এ অগ্রগতির পথে এখনও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির তৎপরতা বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও জাতিকে পরাজিত শাক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
মৃক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক বাংলানিউজকে বলেন, যে প্রত্যাশা নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম সেটা তো এখনও পুরণ হয়নি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া দীর্ঘ ২৯ বছর দেশ শাসন করেছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, পরিকল্পনা নিয়ে দেশকে এগিয়ে নেয়নি। সেটা
হলে আজ প্রশ্ন আসতো না কেন মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশা পূরণ হলো না।
১৯৪৭ সালে পশ্চাৎপদ চিন্তার ভিত্তিতে গঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের কাঠামোর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বাংলাদেশের মানুষ ছিল শোষিত, বঞ্চিত, অত্যাচারিত, নিষ্পেষিত। সব প্রকার উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত এবং অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর পূর্ব বাংলা ছিল পশ্চাৎপদ একটি জনপদ। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতার পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ যখন মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে তখনই
স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়। শুরুতেই হোঁচট খায় বাংলাদেশ। এর পর দীর্ঘ চড়াই-উৎরাই, উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে।
দেশে বর্তমানে ক্ষমতায় রয়েছে স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ। এ সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। গত ১৩ বছর ধরে শেখ হাসিনার সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। এ সরকাররের সময়ই আগামী ৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। চলতি বছরই
বাংলাদেশ স্বল্পন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে। এ সময়ের মধ্যে দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে নানা উদ্যোগ, পরিকল্পনা ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যেই তথ্যপ্রযুক্তিতে দেশ অনেক দূর এগিয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান আজ বাস্তবে পরিণত হয়েছে।
সম্প্রতি চালু হয়েছে ৫-জি নেটওয়ার্ক। আধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর দেশ গড়ে তুলতে একের পর এক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশ আধুনিক অবকাঠামো সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে পারমাণবিক বিশ্বে, স্থান করে নিয়েছে মহাকাশে। উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সরকার গঠনের শুরু থেকে মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মাথা পিছু আয় আজ দুই হাজার ৫০০ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
দারিদ্র্যের হার নেমে এসেছে ২০.৫ শতাংশে। খাদ্যে দেশ স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। জাতীয় বাজেট ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। শিক্ষা, চিকিৎসার ক্ষেত্রে দেশ অনেক এগিয়েছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও দেশ এগিয়েছে। মুক্তিযু্দ্ধের সময় গণহত্যার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের
বিচার হয়েছে এবং এ বিচার কাজ অব্যাহত আছে।
এ সময়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম বিশেষ করে অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের কাজ। যা বদলে দেবে বাংলাদেশের দৃশ্যপট ও অর্থনৈতিক গতিধারাকে। শুধু প্রকল্প গ্রহণই নয়, প্রকল্প বাস্তবায়ন ও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে।
উন্নয়নের মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিশ্ব ব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করে স্বপ্নের পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ এগিয়ে যাচ্ছে, যা এখন বাস্তবায়নের দ্বার প্রান্তে। এ সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হবে ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে আরেক চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প দেশের সর্ববৃহৎ ও প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ। যা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ হাসিনা সরকার এ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পারমাণবিক বিশ্বে পদার্পণ করে এবং বিশ্ব পরমাণু ক্লাবের সদস্য পদ লাভ করেছে। রাশিয়ার প্রযুক্তি ও সহযোগিতায় এক লাখ এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই ইউনিট বিশিষ্ট এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৩ ও ২৪ সালে।
বাংলাদেশ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছে কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণেরও প্রস্তুতি চলছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে স্যাটেলাইট বিশ্বে।
ইন্টারনেট জগতে বাংলাদেশ চতুর্থ জেনারেশনে (৪-জি) থেকে ৫০তম বিজয় দিবসের প্রাককালে ৫-জিতে প্রবেশ করেছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে দ্রুত এগিয়ে নিতে কৃষি, শিল্প উৎপাদনের পাশাপাশি অবকাঠামো, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। সারা দেশে একশটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে।
রাজধানী ও রাজধানীর বাইরে বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলকে বিবেচনায় নিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে এবং হচ্ছে। যোগাযোগ ক্ষেত্রে দেশে এক যুগান্তকারী উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।
রাজধানীতে যানজট দূর করতে নির্মাণাধীন মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। এ মেট্রোরেল এখন দৃশ্যমান এবং একটি অংশ চালুর পর্যায়ে রয়েছে। রাজধানীর উপকণ্ঠ হেমায়েতপুর থেকে গুলশান হয়ে ভাটারা এবং বিমানবন্দর থেকে রামপুরা হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত আরও দুটি মেট্রোরেল প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে ও স্থানে নির্মাণ হয়েছে বেশ কয়েকটি ফ্লাইওভার। নির্মাণ হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।
উন্নয়নের পূর্ব শর্ত বিদ্যুতের চাহিদা মোটাতে শেখ হাসিনা সরকার এ সেক্টরকে অগ্রাধিকার দিয়ে এগিয়ে নিচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশে ২১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে। চাহিদার থেকে ৯ হাজার মেগাওয়াট বেশি। এর পর আরও কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে।
দেশের সমুদ্র বন্দরগুলোকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। সমুদ্র পথে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও এগিয়ে নিতে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে শুরু করা হয়েছে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের কাজ।
বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তি ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতির বিষয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, দেশে উন্নয়ন যেটা হয়েছে সেটা আওয়ামী লীগের সময়ই হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছর ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রায় ১৭ বছর। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চলতি ১৩ বছর মেয়াদের সময় অনেক অর্জন হয়েছে। কিন্তু দঃখজনক হলো স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও স্বাধীনতা বিরোধীরা দেশকে এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, ধর্মীয় উস্কানি দিচ্ছে। যারা দেশের অস্থিত্বে বিরোধী, মৌলিক
চেতনার বিরোধী, এদেশকেই চায়নি, এখনও চায় না। দেশে রাজনৈতিক ভিন্ন মত থাকতে পারে, সরকারের পরিকল্পনা নিয়ে ভিন্ন মত থাকতে পারে কিন্তু দেশে মৌলিক চেতনা, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার সঙ্গে কারো দ্বিমত থাকতে পারে না। পৃথিবীর কোনো দেশে নেই।
এদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপসহ প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে পরিণতি আরও খারাপ হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০২১
এসকে/আরবি