নওগাঁ: নওগাঁ হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে জেলা শহরের এটিএম মাঠে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
স্থানীয় সংগঠন ‘একুশে পরিষদ নওগাঁ’র আয়োজনে জেলার ধামইরহাট উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার পরিচিত মুখ কিশোরী তাসমিনা আক্তারসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে ৩২টি ঘোড়সওয়ারি খেলায় অংশ নেয়।
এ সময় শিশু, বৃদ্ধ, নারী-পুরুষসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ ঘোড়দৌড় উপভোগ করতে আসে।
ঘোড়দৌড় উপভোগ করতে আসা কায়েস উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ঘৌড়দৌড় একটি আন্তর্জাতিক মানের খেলা। আগে অনেক ঘোড়দৌড় খেলা হতো। এখন আর এ খেলা দেখাই যায় না। চমৎকার এ খেলা দেখে খুব আনন্দ পেয়েছি।
আরেক দর্শক শরীফুল ইসলাম খান বলেন, ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা একটি প্রাচীন ঐতিহ্য। নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা ভুলেই গিয়েছিল ঘৌড়দৌড় নামে প্রতিযোগিতা হয়। এবং আজকে যারা এ ঘৌড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছেন, তাদের অনেক ধন্যবাদ। আশা রাখি, এ ঐতিহ্য যেন ধরে রাখা হয়।
ঘোড়সওয়ারি তাসমিনা আক্তার বাংলানিউজকে বলে, আমি দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘৌড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি এবং প্রথম হয়েছি। আজকের খেলায়ও অংশ নিতে পেরে ভালো লাগছে।
তাসমিনা আরও বলে- ঘোড়া দেখে অনেক মেয়েরাই ভয় পায়। আমি যে আজকে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা অংশ নিচ্ছি, এটা দেখে যেন অন্য মেয়েরাও ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে, সেটি আমার মূল লক্ষ্য। মেয়েরাও কোনো জায়গায় পিছিয়ে থাকবে না।
মান্দার কুলিহার থেকে আসা ঘৌড়দৌড় প্রতিযোগী শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আয়োজকদের পাশাপাশি আমাদেরও অনেক টাকা খরচ হয়। দূর-দূরান্তে ঘোড়া নিতে অন্য গাড়ি ভাড়া করতে হয়। এছাড়াও ঘোড়া লালন পালনের খরচ তো আছেই। তারপরও আমার দাবি, এ ধরনের গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা যাতে বার বার আয়োজন করা হয়। তাহলে আমাদের ঘোড়া লালন-পালন ও প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আমাদের আগ্রহের সৃষ্টি হবে।
আয়োজক কমিটির সভাপতি ডিএম আব্দুল বারী বাংলানিউজকে জানান, বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও কৃষ্টি কালচার আমরা তুলে ধরতে চাই। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা আজ এ খেলার আয়োজন করেছি।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা ও চেতনা তুলে ধরতেই ১৮ ডিসেম্বর নওগাঁ হানাদার মুক্ত দিবসে ঘোড়দৌড় খেলার আয়োজন করে থাকি। পাশাপাশি নওগাঁর গণমানুষের এক সময় প্রাণের খেলা ও দর্শনীয় বিষয় ছিল এ ঘৌড়দৌড়। নতুন প্রজন্মের কাছে গ্রাম-বাংলার হারানো ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত এবং ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। আগামীতেও গ্রামীণ ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে ধারাবাহিকভাবে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হবে।
ঘৌড়দৌড় প্রতিযোগিতার আগে একটি বর্নাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে সেখানে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন।
সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট ডি এম আব্দুল বারীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নির্মল কৃষ্ণ সাহা, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মির্জা ইমাম উদ্দিনসহ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২১
এসআরএস