পাবনা: নির্বাচনী সহিংসতা ও খুনের ঘটনার পরে পাবনার ভাঁড়ারা ইউনিয়ন এখন আতঙ্কের জনপদ পরিণত হয়েছে। প্রতিপক্ষের হামলা ও মামলা আতঙ্কে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম।
প্রতিপক্ষের সমর্থক ও সন্ত্রাসীরা নৌকার চেয়ারম্যান সর্থকদের বাড়িতে রাতের আধারে লুটপাট করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গ্রাম গুলোতে এখন সুনসান নীরবতা। নির্যাতন আর প্রাণ ভয়ে এলাকাতে এখন পুরুষ মানুষ নেই বললেই চলে। দিনের বেলাতে কিছু মানুষের দেখা মিললেও রাতের বেলাতে বাড়িতে থাকছেন না কেউ। এলাকার নারী ও শিশুরা মানবেতর জীবন যাপন করছে।
সম্প্রতি ১১ ডিসেম্বর পাবনা সদরের ভাড়ারা ইউনিয়নে নির্বাচনী সহিংসতায় খুন হয় ইয়াসিন আলম নামে আনারস প্রতিকের সতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী। ঘটনার পরে প্রতিপক্ষের হামলায় চেয়ারম্যান সমর্থকদের প্রায় শতাধীক বসতবাড়িতে ভাঙচুর ও তিনশতাধিক গবাদিপশু লুট হয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকলেও মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাটছে না। এদিকে পাশের গ্রাম চরতারাপুরে দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় মোবাইলে ভিডিও ধারণ করায় খুন হয় এক স্কুল শিক্ষার্থী। আর দেবত্বর ইউনিয়নের নির্বাচনী প্রচার চালানোর সময় নৌকার সমর্থকদের হামলায় নিহত হন আরো এক যুবক। এই নিয়ে চতুর্থ দফা নির্বাচন কেন্দ্রিক তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে চরম উত্তেজনা তৈরি হয়েছে পাবনাতে।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, আমরা এলাকার সাধারণ মানুষ ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে মানবেতরজীবন যাপন করছি। খুনের ঘটনার পরে প্রতিপক্ষের হামলা মামলায় কোনো পুরুষ মানুষ বাড়িতে থাকতে পারছেন না। নারীদের ওপরেও চলছে নানা ধরনের নির্যাতন। আর এই সব অপকর্মের মূলে রয়েছেন সুলতান খান।
বর্তমান পরিস্তিতি নিয়ে চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খানের স্ত্রী নারগীস আক্তার বলেন, আমাদের এই এলাকাতে এক সময় নকশাল সর্বহারাদের অভয় আশ্রম ছিল। তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে সেখানে দল প্রতিষ্ঠিত করেছেন এই সাঈদ খান। আর আজ তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। দলের নেতা কর্মীদের ওপরে নির্যাতন করা হচ্ছে। বসতবাড়িতে লুটপাট করা হচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে সতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সুলতান মাহামুদ খান বলেন, আমার বিরুদ্ধে ওই সাঈদের পরিবার ও তার সমর্থকেরা এখনো ষড়যন্ত্র করছেন। ঘটনার দিনে সাঈদ চেয়ারম্যান নিজে মাইকিং করে সকলকে বলেছে তার ভাই মারা গেছে। পরবর্তীতে যখন বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে আমার ভাই মারা গেছে তখন ঘটনা উল্টে গেছে। ঘটনার পরে সাঈদ চেয়রাম্যান নিজের তার দলবল নিয়ে ওই আওরঙ্গবাদ এলাকাসহ তার আশে পাশের এলাকাতে হামলা করেছে। আমার নেতাকর্মীদের বসত বাড়িতে হামলা করে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। পরে যখন সাঈদ চেয়ারম্যানের নামে হত্যা মামলা হয়েছে তখন ওই এলাকার সাধারণ মানুষ সাঈদ সমর্থকদের কিছু বাড়িতে হামলা করেছে এটা সত্য।
ঘটনার বিষয়ে পাবনা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলম বলেন, ঘটনার দিনে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা হয়েছে। হামলা ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করেছে র্দূবৃত্তরা। উভয় পক্ষ একে অন্যের ওপরে হামলা করেছে। ঘটনার পরে এলাকাতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মামলার পরে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রায় সবাই আত্মগোপনে রয়েছেন। তবে আমরা অভিযান চালিয়ে এজহারনামীয় ৯জনকে অস্ত্রসহ আটক করেছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০২১
এসআইএস