সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, মুন্সিগঞ্জ ও ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের এক শিশু শ্রমিকসহ আটজনকে ইটভাটার মধ্যে তালাবদ্ধ কক্ষে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে।
স্বজনদের দাবি, চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানার টোরামুন্সিরহাট এলাকার হান্নান ব্রিকস ও মামুন ব্রিকস নামের দু’টি ইটভাটায় তাদের আটকে রাখা হয়েছে।
সর্দারসহ কয়েকজন সহযোগী শ্রমিক পালিয়ে যাওয়ার ঘটনার জেরে তাদের মূলত জিম্মি হিসেবে আটকে রাখা হয়েছে বলে দাবি স্বজনদের।
আটকে রাখা শ্রমিকরা হলেন- শ্যামনগর উপজেলার হরিনগর ছোট ভেটখালী গ্রামের রউফ মোল্যার ছেলে মাহফুজ হোসেন (১৪), মাজেদ গাইনের ছেলে মাকসুদুল (২০), গফ্ফার মোল্যার ছেলে আব্দুর রউফ (৩৮), গাবুরার খোলপেটুয়া গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে সুমন (২৩), শাহ আলম (২৬), শামিম (২৬), আবুল গাজীর ছেলে রিপন (১৮) ও ধুমঘাট গ্রামের মুজিবুল (২২)।
জানা গেছে, দুই মাস আগে মনিরুল ইসলাম নামে এক সর্দারের মধ্যস্থতায় ওই শ্রমিকদের সেখানকার ইটের ভাটায় কাজ করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ছয় সপ্তাহ কাজের পর শ্রমিক সর্দার অপর কয়েকজন শ্রমিককে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর উল্লিখিত শ্রমিকদের জিম্মি করা হয়েছে।
জিম্মি শ্রমিকদের বরাত দিয়ে তাদের স্বজনরা জানিয়েছেন, শুরুতে চারদিন তাদের খেতে না দিয়ে সার্বক্ষণিক তালাবদ্ধ করে আটকে রাখা হতো। তবে গত শনিবার থেকে পাহারায় রেখে ওই আট শ্রমিককে দিয়ে সারাদিন কঠিন পরিশ্রমের কাজ করানো হচ্ছে।
মাগরিবের আজানের পর আবার তাদের একই ঘরে ঢুকিয়ে তালাবদ্ধ করা হচ্ছে বলে দাবি করে উদ্বিগ্ন স্বজনরা জানান, ঘটনার পর থেকে পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগও করতে দেওয়া হচ্ছে না তাদের।
পাশের ভাটার শ্রমিকদের সহায়তা নিয়ে জিম্মি এক তরুণ মোবাইল ফোনে কল দিয়ে জানান, অন্য শ্রমিকরা পালিয়ে যাওয়ার শাস্তি হিসেবে সকাল থেকে হাড় ভাঙা খাটুনি করানো সত্ত্বেও তাদের খাবার দেওয়া হচ্ছে না। পাশের ভাটার শ্রমিকদের থেকে রুটি পানি নিয়ে তারা গত পাঁচ-ছয়দিন কোনো রকমে বাঁচার চেষ্টা করছেন। জিম্মি ওই তরুণের দাবি, সর্দার ভাটা মালিকের কাছে না ফেরা পর্যন্ত তাদের জিম্মি করে রাখার কথা বলা হয়েছে।
পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ার কৌশল হিসেবে তাদের প্রত্যেকের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এত কষ্ট সহ্য করতে পারছি না, দয়া করে আমাগো একটু উদ্দার করো।
জিম্মি মাহফুজের বাবা আব্দুর রউফ মোল্যা ও রিপনের বাবা আবুল হোসেন গাজী জানান, তাদের ছেলেদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও বাড়িতে ফিরতে না দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। শাস্তি হিসেবে না খেতে দিয়ে কঠিন পরিশ্রমের কাজ করানোর পাশাপাশি বাড়ি ফিরতে চাইলে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। তারা নিজেদের সন্তানদের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
থানা পুলিশ করলে তাদের জিম্মি সন্তানদের ‘উধাও’ করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও তারা দাবি করেন।
এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মোড়ল জানান, ভোট নিয়ে ব্যস্ততার কারণে এমন ঘটনার বিষয়ে তিনি কোনো খোঁজ নিতে পারেননি।
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াহিদ মুর্শেদ জানান, এমন বিষয়ে কেউ এখন কোনো অভিযোগ করেননি। এজন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার থানায় অভিযোগ করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০২১
এসআই