বান্দরবান: দিনে দিনে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের পাহাড়ে উৎপাদিত অপ্রচলিত বিভিন্ন ফল-ফলাদিতে ভরে উঠছে স্থানীয় বাজার। ফরমালিনমুক্ত এসব ফল সংগ্রহে প্রতিদিনই স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকদের উপস্থিতিও দেখা যাচ্ছে বাজারগুলোতে।
বান্দরবানের পাহাড়ে উৎপাদিত ফলগুলোর মধ্যে বর্তমানে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ‘ক্যারাগুলা’। অনেকেই এটিকে বান্দরগুলা বলে ডাকেন। মারমা ভাষায় ফলটিকে বলা হয় ‘চাংগ্ররই সি’। চাং অর্থ পরিষ্কার, গ্ররই অর্থ প্রিয় এবং সি অর্থ ফল।
ক্যারাগুলা পার্বত্য এলাকায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়। ফলটি হালকা সবুজ রঙের হয়ে থাকে এবং এর গায়ে ছোট ছোট কাটা দিয়ে আবৃত।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা ফলটি শুটকি মাছ ও কাঁচা মরিচ দিয়ে ভর্তা করে খেয়ে থাকে। এটি খেতে বেশ সুস্বাদু, পাশাপাশি সেখানে রয়েছে পর্যাপ্ত ভিটামিন ‘সি’। অনেকেই আবার ফলটি কাঁচা খেয়ে ফেলেন, তবে কাঁচা খাওয়ার শুরুতেই কামড় দিলে টক ও হাল্কা তিতা অনুভূত হয়। বিশেষ করে পাহাড়ি পাড়াগুলোতে যেকোনো অনুষ্ঠানে ক্যারাগুলা ফল দিয়ে বিভিন্ন সুস্বাদু তরকারি তৈরি করা হয়।
বান্দরবান কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এ পর্যন্ত বান্দরবানে বাণিজ্যিকভাবে ক্যারাগুলা ফলের কোনো বাগান গড়ে ওঠেনি। পাহাড়ের বিভিন্নস্থানে বিক্ষিপ্তভাবে এই ফলের গাছ রয়েছে, সেখান থেকে এই ফল সংগ্রহ করা হয়। ক্যারাগুলা প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে দিন দিন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পাশাপাশি তিন পার্বত্য জেলার বাঙালি ও পর্যটকদের মধ্যেই ক্যারাগুলার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে।
বান্দরবান সদরের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কয়েকটি খাবার রেস্টুরেন্ট ঘুরে দেখা যায়, ক্যারাগুলা ফলের চাটনি বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচ, শুটকি মাছের গুঁড়া, পিঁয়াজ, লবণ, তেল আর সামান্য ধনেপাতা দিয়ে তৈরি এই চাটনি পর্যটকদের কাছে এক লোভনীয় খাবারে পরিণত হয়েছে।
বান্দরবানের মারমা বাজারের বিক্রেতা মনুচিং মারমা বাংলানিউজকে বলেন, ক্যারাগুলা খুব মজার। নানাভাবে এটা রান্না করে খাওয়া যায়। আমরা প্রতি কেজি ৬০০ টাকা দরে বিক্রি করছি। এই ফল কিনতে ক্রেতাদের ভিড় লাগে। তবে সরবরাহ কম থাকায় সবার চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না।
মারমা বাজারের আরেক বিক্রেতা লাপ্রু মারমা বাংলানিউজকে বলেন, এই ফলগুলো আমরা অনেক গহীন বন থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে আসি। এগুলো তেমন উৎপাদন হয় না। বনে যা পাই তা বিক্রি হয় ভালো দামে।
তিনি আরও বলেন, বান্দরবান থেকে আমরা এগুলো রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলাতেও সরবরাহ করি। পার্বত্য এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয় এই ফল। অনেক পর্যটক ঘুরতে এসে এই ফল কিনে নিয়ে যান।
বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক বলেন, বান্দরবানে বাণিজ্যিক ক্যারাগুলা চাষ হয় না। এটি পাহাড়ে বিক্ষিপ্তভাবে উৎপাদন হয়। ফলটি মূলত বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনসাধারণ সংগ্রহ করে খেয়ে থাকে। ফলটিতে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। ক্যারাগুলা ফলের চাহিদা বাড়ছে। সমতলে চাহিদা বাড়লে আমরা বাণিজ্যিক উৎপাদনের পরিকল্পনা নেবো।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২১
এমজেএফ