ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ফরিদপুরে নির্মিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক ‘বঙ্গবন্ধু মানমন্দির’

হারুন-অর-রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২১
ফরিদপুরে নির্মিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক ‘বঙ্গবন্ধু মানমন্দির’

ফরিদপুর: পৃথিবীতে পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত তিনটি রেখা কল্পনা করা হয়, সেগুলো হলো- কর্কটক্রান্তি, মকরক্রান্তি ও বিষুবরেখা। ঠিক তেমন উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত রেখা আছে চারটি।

সেগুলো হলো- শূন্য ডিগ্রি, ৯০ ডিগ্রি, ১৮০ ডিগ্রি এবং ২৭০ ডিগ্রি দ্রাঘিমা।

চারটি উত্তর-দক্ষিণ রেখা এবং তিনটি পূর্ব-পশ্চিম রেখা-সব মিলিয়ে ১২ জায়গায় ছেদ করেছে।

এই ১২টি বিন্দু হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিন্দু। ১২টি বিন্দুর ১০টি বিন্দুই পড়েছে সাগরে-মহাসাগরে, তাই মানুষ সেখানে যেতে পারে না। একটি পড়েছে সাহারা মরুভূমিতে, সেখানেও মানুষ যায় না। শুধু একটি বিন্দু পড়েছে সমতল মাটিতে, যেখানে মানুষ যেতে পারে। আর সেই বিন্দুটিই পড়েছে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ভাঙ্গারদিয়া গ্রামের কৃষি জমিতে।

ফরিদপুর জেলা শহর থেকে ভাঙ্গা যাওয়ার সড়কে পুখুরিয়া নামক স্থান থেকে সদরপুর উপজেলার দিকে যেতে স্থানীয় বাইশরশি শিব সুন্দর একাডেমি সংলগ্ন নুরুলগঞ্জমুখী রাস্তা ধরে তিন কিলোমিটার এগোলে ভাঙ্গারদিয়া গ্রাম। সেখানে বিল ধোপডাঙ্গা মৌজায় সোবহান মাতুব্বর, বারেক মাতুব্বর, ইকবাল মাতুব্বর, কুটিপাগলা, জাকির হোসেন, ইউসুফ মাতুব্বর, আজিজুল মাতুব্বর, শাহ জাহান শেখ ও মোফাজ্জেল হোসেনের প্রায় পাঁচ একর কৃষি জমিকে প্রাথমিকভাবে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানমন্দির’ প্রকল্পের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে।

স্থানীয়রা আশা করছেন এই আন্তর্জাতিক মানমন্দির’ ও পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণ করা হলে কৃষিনির্ভর এই অঞ্চলের মানুষের জীবনমানের ব্যাপক উন্নয়ন হবে, বদলে যাবে জীবনধারা। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটার পাশাপাশি কয়েকগুণে বেড়ে যাবে জমির দাম, যার সুফল ভোগ করবে এই এলাকার সাধারণ মানুষ।

স্থানীয় গ্রামবাসী সোবহান মাতুব্বর, সেলিম মাতুব্বরসহ কয়েকজন ব্যক্তি বাংলানিউজকে জানান, এই বিখ্যাত জায়গাটির পরিচিতি যাতে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে সেজন্য এলাকার সবাই আমরা সরকারকে জমি লিখে দিতে রাজি আছি। এখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানমন্দির হোক। তাতে এখানে দেশবিদেশের মানুষ আসবে। আমাদের জীবনমানও বদলে যাবে।

এদিকে গুগল ম্যাপেও খুব সহজেই ছেদবিন্দুটি দেখা যায়। ফরিদপুরের কাছে ভাঙ্গা গুগল ম্যাপে গিয়ে 23.5N 90E লিখলে সেটি কর্কট ক্রান্তি এবং ৯০ ডিগ্রি দ্রাঘিমা কোথায় ছেদ করেছে সেটা দেখিয়ে দেবে।  

মানমন্দির তৈরি করার জন্য ভাঙ্গাকে একেবারে আদর্শতম জায়গা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কেননা ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার পথ হচ্ছে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে এবং এশিয়ান হাইওয়ের করিডোর-১ এর অংশ। এখানে বঙ্গবন্ধুর নামে মানমন্দির নির্মিত হলে তা হয়ে উঠবে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।  

এদিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে মহাকাশ অবলোকন কেন্দ্র স্থাপনে এ বছরের (২০২১ ইং) ১ জুন একনেকে একটি প্রকল্প পাস হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা থেকে মহাকাশ অবলোকন করা যাবে। এছাড়া মহাকাশ গবেষণার সুযোগও তৈরি হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেই একনেক সভায় এ প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা নগরের পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় অংশ নেন।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাকাশ অবলোকন কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করবে। ২০২৪ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২১৩ কোটি ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। সম্পূর্ণ বাংলাদেশি অর্থায়নে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করা হবে।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, কর্কট ক্রান্তিরেখা ও ৯০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমার সংযোগস্থলে মহাকাশ অবলোকন কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে জনসাধারণের জন্য মহাকাশ পর্যবেক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করা, মহাকাশ বিজ্ঞানচর্চার প্রসারে তথা বিজ্ঞানমনস্কতা সৃষ্টিতে উৎসাহিতকরণ, শিক্ষাবান্ধব বিনোদনের মাধ্যমে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা এবং শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য মহাকাশ গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করা।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত কেন্দ্রে সাধারণ জনগণের জন্য থাকবে বিভিন্ন ধরনের মহাকাশ বিজ্ঞান বিষয়ক ওয়ার্কশপ ও প্রশিক্ষণের সুযোগ। এছাড়া এখানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অ্যাস্ট্রনমি বা অ্যাস্ট্রফিজিক্স অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণকারীদের জন্য উপযোগী প্রশিক্ষণ ক্যাম্প আয়োজনের সুযোগ থাকবে। গবেষকদের জন্য থাকবে মহাকাশ বিজ্ঞানে গবেষণার সুযোগ।

এছাড়া কেন্দ্রটি একটি শিক্ষা সহায়ক বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে। যার সুবিধা পেতে শুধু বাংলাদেশি নয়, বিদেশি পর্যটকদেরও আগমন ঘটবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দেশ-বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তির উন্নয়ন হবে। জাতীয় জীবনের আর্থ-সামাজিক পরিসরে ইতিবাচক দিকে গতি সঞ্চার করবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সূচক।

এ ব্যাপারে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বাংলানিউজকে বলেন, ইতোমধ্যে একাধিকবার ভাঙ্গারদিয়া গ্রামের ওই জমি সরকারি লোকজন পরিদর্শন করেছেন। আন্তর্জাতিক মানের এ মানমন্দির ও পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণ করতে বেশ কয়েক একর জায়গার প্রয়োজন হবে। তবে এখানে বঙ্গবন্ধুর নামে মানমন্দির নির্মিত হলে তা হয়ে উঠবে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।