সাভার (ঢাকা): ঢাকার ধামরাই উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের চৌটাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা তুলতে গেলে কমিশন দেওয়াসহ বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের কাছে টাকা আদায়ের বিরুদ্ধে আভিযোগ উঠছে প্রধান শিক্ষিকা নিগার সুলতানার বিরুদ্ধে। এছাড়া বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ফান্ডের অর্থ আত্মসাৎ এরও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
বুধবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে অভিযোগ ও তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ধামরাই উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তাজমুন্নাহার।
এর আগে, যুধিষ্টির বিশ্বাস নামে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ফান্ডের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নিগার সুলতানা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে নিয়মবর্হিভূতভাবে বিভিন্ন অংকের টাকা আদায় করে আসছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের উপ-বৃত্তির টাকা তুলতেও প্রধান শিক্ষিকাকে কমিশন দিতে হয়।
এদিকে মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) তদন্ত কমিটির বিদ্যালয় পরিদর্শনের খবর পেয়ে সকাল থেকে স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবকরা বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ভিড় করেছে। অভিভাবকদের একত্রিত হয়ে প্রধান শিক্ষিকা নিগার সুলতানার অপসারণ চেয়ে স্লোগান দেন।
সাদিয়া রহমান নামে এক অভিভাবক বলেন, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হওয়া সত্ত্বেও প্রধান শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রশ্নপত্র ছাপানো, পরীক্ষার খাতা খরচ, বিদ্যালয় পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ বিভিন্ন বাহানায় বিভিন্ন অংকে অর্থ আদায় করতেন। এছাড়াও উপবৃত্তির টাকা তুলতে গেলেও শিক্ষার্থী প্রতি ১০০-২০০ টাকা হারে তাকে কমিশন দিতে হয়। এভাবে একটা প্রাথমিক বিদ্যালয় চলতে পারে নাকি? আমাদের স্বচ্ছলতা থাকলে বা খরচ দিয়ে পড়াতে হলেতো বাচ্চদের বেসরকারি স্কুলেই ভর্তি করতাম, তাহলে সরকারি স্কুলে বাচ্চাকে কেন পড়াবো?
অন্যদিকে, বিদ্যালয়ের সাবেক ম্যানেজিং কমিটির সহ-সভাপতি শীতল সরকার বলেন, প্রধান শিক্ষিকা নিগার সুলতানা বরাবরই নিজের খেয়াল খুশি মতো বিদ্যালয় পরিচালনা করেন। আমি ২ বছর কমিটিতে থাকাকালীনও একাধিকবার তাকে সতর্ক করি, তবে তিনি তা কর্ণপাত করেননি। এর আগেও শিক্ষার্থীদের উপ-বৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছিল। তখন শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকা ফেরত দিয়ে সেবারের মতো পার পেয়েছিলেন তিনি।
যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষিকা নিগার সুলতানা দাবি করেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। বিষয়টি নিয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
বিদ্যালয়ে পরিদর্শনকালে ক্ষোভ প্রকাশ করে তদন্ত কমিটির সদস্য ও উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, নিয়মানুয়ায়ী তদন্ত কমিটিকে তদন্তে সহযোগিতা করতে বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তারা এদিন কেউ বিদ্যালয়ে উপস্থিত হননি। বারবার তাদের উপস্থিত থাকলেও বলা হলেও তারা কমিটির কথায় কোনো কর্ণপাত করেননি।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সরলা সরকার বাংলানিউজকে বলেন, ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে সেদিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে পারিনি। বিষয়টি নিয়ে তিনি দুঃখ প্রকাশ করছি। এখানে লুকোচুরির কিছু নেই। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে সবই সত্য। আমরা বারবার তাকে সতর্ক করলেও তিনি আমাদের কথা শোনেননি। এমনকি কয়েক দফায় তিনি আমাকে বিদ্যালয়ের ফান্ডের টাকা উত্তোলনে ফাঁকা চেকে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছেন। কিন্তু পরবর্তীকালে সেই টাকা তিনি কিভাবে, কোন খাতে ব্যয় করেছেন, তা জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি।
ধামরাই উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তাজমুন্নাহার বলেন, অভিযোগ তদন্তে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার ফাতেমা বেগমকে প্রধান করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, এবং তদন্ত শেষে পরবর্তী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্তে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসাইন মো. হাই জকি বাংলানিউজকে বলেন, অভিযোগটি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২১
এনটি