খুলনা: খুলনায় পাটকল শ্রমিকরা ডিসি অফিস ঘেরাও করেছেন। উৎপাদন বন্ধকৃত রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকলের মধ্যে ৫টির শ্রমিকরা এ কর্মসূচিতে অংশ নেন।
বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ডিসি অফিস ঘেরাও করে রাখেন তারা। খালিশপুর ও দৌলতপুর জুটমিল, চট্টগ্রামের কেএফডি, আর আর এবং সিরাজগঞ্জের জাতীয় জুটমিলের শ্রমিকরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, বকেয়া বেতন, করোনাকালীন ২ মাসের লকডাউনের টাকা, ২ মাসের নোটিশ পেয়ের টাকা, খালিশপুর জুটমিলের শ্রমিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহার, নাম ভুলে শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত পাওনা টাকা সঠিক হিসাব অনুযায়ী পরিশোধের দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। ঘেরাও কর্মসূচি চলাকালে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন কারখানা কমিটির সভাপতি ও সিবিএ সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মনির হোসেন মনি এবং সঞ্চালনা করেন কমিটির সদস্য ডালিম কাজী।
এতে বক্তব্য রাখেন, পাটকল রক্ষা সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের সদস্য সচিব এস এ রশীদ, বাম গণতান্ত্রিক জোট খুলনার সমন্বয়ক মিজানুর রহমান বাবু, গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা সমন্বয়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) খুলনা জেলা সভাপতি মো. মোজাম্মেল হক খান, প্লাটিনাম জুটমিলের সাবেক সিবিএ নেতা মো. খলিলুর রহমান, কারখানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, কারখানা কমিটির সহ-সভাপতি আবু বক্কার সিদ্দিক, সহ-সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাকিম, কারখানা কমিটির কোষাধ্যক্ষ চাঁন মিয়া সর্দার, ক্রিসেন্ট জুট মিলের শ্রমিকনেতা মোশাররফ হোসেন, ছাত্র ফেডারেশন খুলনা মহানগরের আহ্বায়ক আল আমিন শেখ।
এ সময় বক্তারা বলেন, বন্ধকৃত রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫ টি পাটকলের মধ্যে ৫ টি জুট মিলের মধ্যে খালিশপুর ও দৌলতপুর জুট মিল খুলনা জেলায় অবস্থিত। পাটকল বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত এ ৫ মিলের শ্রমিকরা অপরাপর মিলের শ্রমিকদের মতো মজুরি কমিশনের সব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে এসেছে। কিন্তু আজ ১৮ মাসের অধিক সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও ৫ মিলের শ্রমিকেরা এরিয়ার টাকা পায়নি। শ্রমিকরা বঞ্চিত হয়েছে সরকার ঘোষিত ২ মাসের লকডাউনের টাকা ও দুই ঈদের বোনাসের টাকা থেকেও।
তারা আরও বলেন, ২০০৯ সালের জাতীয় নির্বাচনের ইশতেহারে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন দেশের কোনো নাগরিক বেকার থাকবে না, প্রত্যেক ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়া হবে এবং নির্বাচিত হলে দেশের কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা বন্ধ থাকবে না। বন্ধ সব শিল্প প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু করা হবে। অথচ ২০২০ সালের ৩০ জুন পাটকল বন্ধের পর থেকে এক বছরের অধিক সময় শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
চলমান করোনা পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের অবস্থা আরও অসহনীয় হয়ে উঠেছে। এ ৫টি মিলে প্রায় ১২ হাজার শ্রমিকের পরিবার সংবিধান স্বীকৃত ন্যূনতম মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের সন্তানদের পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বৃদ্ধ পিতা-মাতা, শিশু ও গর্ভবতীদের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে।
বক্তারা বলেন, এমন অবস্থায় সংগ্রামরত শ্রমিকদের পাওনা অবিলম্বে পরিশোধ করার বিকল্প কিছু নেই। একই সঙ্গে লীজ বা ব্যক্তিমালিকানাধীন নয়, সব মিলে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে পুনরায় উৎপাদন চালু ও আধুনিকায়ন এবং সব শ্রমিকদের পুনরায় চাকরিতে পূনর্বহাল করতে আহ্বান জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০২২
জেডএ