ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অপারেশনের অপেক্ষায় হাসপাতালের বেডে সেই বাচেনা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২২
অপারেশনের অপেক্ষায় হাসপাতালের বেডে সেই বাচেনা হাসপাতালের বেডে বাচেনা খাতুন। ছবি: বাংলানিউজ

চুয়াডাঙ্গা: অপারেশনের পর ডাক্তারের ভুলে ২০ বছর ধরে পেটে কাঁচি বয়ে বেড়ানো সেই বাচেনা খাতুনের ঠাঁই হয়েছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। সহায় সম্বল বিক্রি করে চিকিৎসার পেছনে টাকা খরচের পর নিঃস্ব হয়ে হাসপাতালের বেডে অসহ্য যন্ত্রণায় দিন পার হচ্ছে তার।

 

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে পেটের ভেতরে থাকা কাঁচি বের করা হবে- ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের এমন আশ্বাসে হাসপাতালের বিছানায় দিন গুনছেন তিনি।

বাচেনা খাতুনের অভিযোগ, চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয় গাংনীর রাজা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বহন করার কথা থাকলেও চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে এক প্রকার বন্দি করে রাখা হয়েছে তাকে। তবে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে রোগীর অস্ত্রোপচার প্রক্রিয়ায় দেরি হচ্ছে।

পিত্তথলিতে পাথর অপারেশনের জন্য মেহেরপুরের গাংনীর রাজা ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছিল চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার চিৎলা ইউনিয়নের হাপানিয়া গ্রামের বাচেনা খাতুন। ২০০২ সালের ২৫ মার্চ ওই ক্লিনিকে তার অপারেশন করে ক্লিনিক মালিক ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজা। সেসময় পেটের মধ্যে একটি ৯ ইঞ্চি লম্বা কাঁচি রেখেই অপারেশন শেষ করা হয়। এরপর কেটে গেছে ২০টি বছর। ২০ বছর ধরেই ডাক্তারের ভুলের খেসারত দিচ্ছেন বাচেনা খাতুন।

শেষমেশ গত ৪ জানুয়ারি বাচেনা খাতুনের ঠাঁই হয়েছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। এ হাসপাতালেই ফের অস্ত্রোপচারের পর বের করা হবে ৯ ইঞ্চির কাঁচি। শেষ হবে বাচেনা খাতুনের ২০ বছরের কষ্ট। তবে গত ৫দিন ধরে হাসপাতালের বেডে দিন পার করলেও অপারেশন কবে হবে তা এখনও স্পষ্ট জানেন না তিনি।

বাচেনা খাতুন বলেন, ঘটনার জানাজানি হলে সেদিন থেকেই আমাকে হাসপাতালে রাখা হয়েছে। আজ নয় কাল বলে অপারেশন করার দিন পার হচ্ছে। তবুও অপারেশন করা হচ্ছে না। এরই মধ্যে যন্ত্রণা বেড়েছে আরও কয়েকগুণ।

ভুক্তভোগীর অভিযোগ, গাংনীর রাজা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ সব ধরনের চিকিৎসা দেওয়ার আশ্বাসে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি রেখেছে। দিনের পর দিন পার হয়ে গেলেও কোনো ধরনের সহযোগিতা করা হয়নি। এমনকি খোঁজ খবরও আর নেওয়া হচ্ছে না। প্রতিদিনই ডায়াবেটিস পরীক্ষাসহ খাদ্য-খাবার কিনতে কিনতে একেবারে শেষ তিনি।

২০ বছর পর ঘটনার জানাজানি হলে ভুক্তভোগীর বাড়িতে ভিড় জমায় গণমাধ্যমকর্মী, মানবাধিকারকর্মীসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতেই বাড়ি থেকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেয় রাজা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালে নিয়ে তাকে এক প্রকার বন্দি করে রাখা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বাচেনা খাতুন।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বারবার অস্ত্রোপচারের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হলেও তার অস্ত্রোপচার সম্পন্ন না করায় ক্ষুব্ধ স্বজনরা।  

বাচেনা খাতুনের পূত্রবধূ জানিয়েছেন, বারবার অস্ত্রোপচারের দিন করা হচ্ছে। তারপরও নানা কারণে সে দিন পিছিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে নিজেদের জমানো টাকাও শেষ হয়েছে। কিভাবে কি করবেন তা নিয়েই চিন্তিত পরিবারের সবাই।

তবে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জারি কনসালটেন্ট (সিনিয়র) ডা. ওয়ালিউর রহমান নয়ন বলেছেন, বেশ কিছুদিন ধরেই রোগীটি আমাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। তার সমস্যা হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ না আসা পর্যন্ত অস্ত্রোপচার প্রক্রিয়া শুরু করা যাচ্ছে না। তবে সোমবার (আজ) তার অস্ত্রোপচার হতে পারে।

এ ব্যাপারে গাংনীর রাজা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগযোগ করা হলে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

** পেটে কাঁচি রেখেই সেলাই, ধরা পড়ল ২০ বছর পর!

বাংলাদেশ সময়: ১১২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।