সিরাজগঞ্জ: ‘এমপি সাহেবের বড় বাড়ি যাওয়ার সড়ক এটি! এই পথে গেলে ফিরে আসার ইচ্ছে হয় না। সারা শরীর ব্যথায় ভরে যায়! দুর্ঘটনার ঝুঁকি তো আছেই’।
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার তাড়াশ-কুন্দইল সড়কের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানালেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মজিবর রহমান। ব্যাটারিচালিত অটোভ্যানে যাচ্ছিলেন তিনি। তার কথায় সায় দিলেন ভ্যানচালক আবু সাঈদও। তাদের দুইজনেরই বাড়ি মাকড়শোন গ্রামে।
তারা একযোগে বলে উঠলেন ‘শুধু এমপি সাহেব নয়, আওয়ামী লীগের সেন্ট্রাল নেতা ড. হোসেন মনসুর স্যারের বাড়ি যাওয়ার রাস্তাও এটিই’।
‘এমন একটি সড়ক দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার ২০/২৫ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে’।
রোববার (৯ জানুয়ারি) সরেজমিনে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার তাড়াশ-কুন্দইল রাস্তায় গেলে এ ধরনের মন্তব্য করেন ভ্যান-অটোরিকশা চালক ও বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রীরাও।
উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় চার বছর আগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের আওতাধীন তাড়াশ-কুন্দইল সড়কটির পূর্বের অংশে ৩৬শ মিটার পাথর বিটুমিনের কার্পেটিং করা হয়। এর বাকি অংশ সাব মার্চিবল (ডুবো সড়ক) সড়ক নির্মাণ করা হয়। এরপর রাস্তাটি আর সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কয়েক বছরের বন্যায় রাস্তাটির কার্পেটিং করা অংশের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। উঠে গেছে রাস্তার নিচের অংশের খোয়া এবং ইট। ফলে রাস্তাটি দিয়ে যানবাহন চলাচলে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা বলেন, ‘চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ ও গুরুদাসপুর উপজেলার অন্তত চারটি ইউনিয়নের অন্তত ২৫টি গ্রামের মানুষের যোগাযোগের অন্যতম সড়ক এটি। ধান, সরিষা ও ভুট্টাসহ এ অঞ্চলের কৃষকের উৎপাদিত কৃষি পণ্য সরবরাহ করা হয় এ পথেই। হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতে যাওয়ার রাস্তাও এটি। এ রাস্তাটি সংস্কার না করায় অন্তত লক্ষাধিক মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে’।
কথা হয় সান্দ্রা গ্রামের ভ্যানচালক মিনার, লালুয়া মাঝিড়া গ্রামের রাজমিস্ত্রি মাসুদ রানা, ভ্যানচালক আয়নাল, ছোবাব ও আব্দুল হামিদসহ অনেকের সঙ্গে।
তারা বলেন, রাস্তার পুরো অংশেই বড় বড় গর্ত রয়েছে। এই কারণে মাঝেমধ্যেই ছোটখাট দুর্ঘটনায় পড়তে হয় যানবাহনগুলোকে। স্থানীয়রা আরও বলেন, এ রাস্তার মাঝামাঝি স্থানে মাকড়শোন গ্রাম। ওই গ্রামের বড় বাড়ি নামে পরিচিত।
ওই বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেছেন সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজ। পার্শ্ববর্তী কুশাবাড়ি নামক গ্রামে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও পেট্রো বাংলার সাবেক চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুরের জন্ম।
প্রভাবশালী দুই নেতার জন্মস্থান হওয়া সত্ত্বেও এ সড়কটি চরম অবহেলায় পড়ে রয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাড়াশ উপজেলা প্রকৌশলী মো. আবু সায়েদ বলেন, ‘৭/৮ মাস আগেই ওই রাস্তার টেন্ডার হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজও শুরু করেছিল। কিন্ত বরাদ্দ না থাকার কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে। সম্প্রতি বরাদ্দ হয়েছে। খুব শিগগিরই রাস্তার কাজ শুরু হবে’। ঠিকাদার মোহাম্মদ আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘এই রাস্তা সংস্কারের জন্য ১২ কোটি টাকার প্রকল্প পাস হয়। আমরা দরপত্র জমা দিয়ে ওয়ার্ক ওয়ার্ডার পেয়েছি কাজও শুরু করেছিলাম। কিছু কাজ করার পর জানতে পারি ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সঙ্গে সরকারের চুক্তি সই না হওয়ায় বরাদ্দ অনুমোদন হয়নি। এ কারণে কাজ বন্ধ করে দেই। শুনেছি বরাদ্দ হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করা হবে’।
সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের এমপি ডা. আব্দুল আজিজ বলেন, ‘রাস্তাটি বেশ আগেই টেন্ডার হয়েছে। ঠিকাদার কিছু কাজও শুরু করেছিল। এরপর হঠাৎ করেই কাজ বন্ধ করে দেন। তাড়াশ উপজেলায় এমন অনেক রাস্তাই টেন্ডার এবং ওয়ার্ক ওয়ার্ডার হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার কাজ শুরু করেনি’।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২২
এএটি