ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

হোটেল-রেস্তোরাঁয় নেই স্বাস্থ্যবিধি

গৌতম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২২
হোটেল-রেস্তোরাঁয় নেই স্বাস্থ্যবিধি

ঢাকা: দেশে করোনা ভাইরাসের নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রন সংক্রামণের বিস্তার রোধে বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে ১১ দফা বিধি-নিষেধ কার্যকর হয়েছে। কিন্তু রাজধানীর অধিকাংশ হোটেল ও রেস্তোরাঁয় মাস্ক পড়া গুরুত্ব পেলেও ভ্যাকসিন সনদ আছে কি-না তা যাচাই করাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য বিধি মানছে না কর্তৃপক্ষ।

তারা বলেন, টিকার সনদ নিয়ে হোটেলে খেতে আসতে হবে এ বিষয়ে জনগণ এখনও সচেতন হয়নি। এজন্য সরকারকে আরও ব্যাপক প্রচারণা করতে হবে। আমরা শুধু আপাতত মাস্ক পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করছি।

প্রসঙ্গত, সরকার ঘোষিত বিধি নিষেধে হোটেল রেস্তোরাঁয় খাবর সংগ্রহ ও বসে খেতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ মাস্ক পরিধান করা, করোনার টিকা সনদ দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

শনিবার (১৫ জানুয়ারি) রাজধানীর রায়সাহেব বাজার, গুলিস্তান ও পল্টন এলাকার বিভিন্ন হোটেল ও রেস্তোরাঁ ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও ভ্যাকসিন সনদ আছে কি-না তা যাচাই করছে না হোটেল ও রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ। শুধু মাস্ক পড়ায় গুরুত্ব দেওয়া হলেও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। খাবার সংগ্রহ বা বসে খাওয়ার ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা হচ্ছে না। কিছু মানুষ এ বিষয়ে অসচেতন হলেও হোটেল কর্তৃপক্ষের আচরণ আরও উদাসীন। তারা মনে করে স্বাস্থ্যবিধি শুধু খাবার খেতে আসা লোকদের দায়িত্ব। তাদের এখানে কিছু করার নেই। কারণ অধিকাংশ লোকই জানে না বসে খাওয়ার ক্ষেত্রে হোটেল-রেস্তোরাঁর লোকদের ভ্যাকসিন সনদ দেখাতে হবে৷ এই দায়িত্ব তারা নিতে রাজি নয়। তারা শুধু মাস্ক পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায়।

হোটেলে ঢোকার সময় ভ্যাকসিন সনদ দেখা হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে রায়সাহেব বাজারের মতিঝিল ঘরোয়া হোটেলের ম্যানেজার লুৎফর বাংলানিউজকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানতে সাধারণ জনগণ উদাসীন। আমরা হোটেলে খাবার খেতে আসা সবাই মাস্ক পড়ে ঢুকছে কিনা সেটা দেখছি। তবে এখন পর্যন্ত টিকার সনদ কারো কাছে চাইনি। মাস্ক না পড়লে হোটেলে ঢুকতে না দিলে তাতেই কাস্টমার রেগে অন্য হোটেলে চলে যায়।

তিনি বলেন, আমাদের স্টাফরা মোটামুটি সবাই মাস্ক পরছে এবং অনেকেই টিকা নিয়েছে। যাদের বাকি আছে তারাও শিগগিরই নেবে।

এবিষয়ে রায়সাহেব বাজারের আদি ইসলামিয়া রেস্তোরাঁর ম্যানেজার ফারুক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, অনেকই টিকার সনদ নিয়ে বাইরে বের হয় না। টিকার সনদ দেখতে চাইলে অনেকেই রেগে যায়। বলে আপনি কি আমাদের চেনন না। সনদ দেখিয়ে এই রেস্তোরাঁয় খেতে আসব কেন। আসলে সরকারের বিধিনিষেধ সম্পর্কে এখনও অনেকেই ভালো করে জানে না। আমরা সবাইকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। এ জন্য একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সে রেস্তোরাঁর প্রবেশ মুখে সব সময় বসে থাকে।

গুলিস্তান ঠাঁটারিবাজারের স্টার হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে খেতে আসা ব্যবসায়ী আসলামের কাছে জানতে চাইলে বাংলানিউজকে বলেন, আমি যখন হোটেলে ঢুকি তখন কেউ আমাকে কিছুই জিজ্ঞেস করেনি। শুধু আমাকে কেন? কাউকেই জিজ্ঞেস করেনি হোটেল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া স্টাফদের অনেকেই মাস্ক নেই।  

এ বিষয়ে স্টার হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের সুপারভাইজার আবদুল আজিজ বাংলানিউজকে বলেন, সরকার যে বিধিনিষেধ দিয়েছে তাকে আমরা স্বাগত জানাই। করোনা টিকা সদনের যে বিষয়টি কথা আপনি বললেন, আসলে সকালে আমাদের অনেক চাপ থাকে তখন অনেক স্টাফের প্রয়োজন হয়। তাই প্রবেশমুখে যিনি ছিলেন সে অন্য কাজে ছিল। সেজন্য হয়তো এ বিষয়টি লক্ষ্য করা হয়নি। তবে আমরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই টেবিল বসিয়েছি। স্টাফরা সবাই মাস্ক পড়ছে। দুই একজন হতো মাঝে মাঝে খুলে ফেলে। কাজ করলেতো আর সারাক্ষণ মাস্ক পড়ে থাকা যায় না।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া আমাদের এখনে সামাজিক অনুষ্ঠানের কোন অর্ডার বা আয়োজন আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। আমরা সরকারের বিধিনিষেধ শতভাগ মানার চেষ্টা করছি। কিন্তু জনগণকেতো সহসা মানানো যায় না। এ ব্যপারে জনগণ উদাসীন।

পল্টনের ক্যাফে ঝিল রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার তুষার বাংলানিউজকে বলেন, মেট্রো রেলের কাজের জন্য আমাদের রেস্টুরেন্ট প্রায় বন্ধ হওয়ার মতো। এখানে লোকজন কম আসে। যা আসে মাত্র হাতে গোণা। তাই আমরা বিধিনিষেধের দিকে তেমন কোনো নজর দিচ্ছি না। শুধু মাস্ক পড়া নিশ্চিত করছি। এর বেশি কিছু করলে রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দিতে হবে। তখন ২৫ / ৩০ জন স্টাফ তাদের কী হবে? এখন যা বেচাকেনা হয় তা দিয়ে কোনরকমে তাদের বেতন-ভাতা দিতে পারি। আমরা সরকারের বিধিনিষেধ মানতে চেষ্টা করছি।

ক্যাফে বৈশাখী রেস্তোরাঁর ম্যানেজার টেলোমিয়া বাংলানিউজকে বলেন, টিকা সনদ নিয়েতো মানুষ আর ঘোরে না। রাস্তার কতজন লোকের কাছে এই সনদ পাবেন। আমরা চেষ্টা করতে পারি। তাহলে কাস্টমার কমে যাবে। করোনার জন্য গত বছর তো প্রায় রেস্তোরাঁ বন্ধ ছিল। এবছর যদি তাই হয় তাহলে মরে যাব। আমরা মাস্কের বিষয়টি গুরুত্বসহ কারে নজর দিচ্ছি।   কারণ যিনি সচেতন তিনি মাস্ক পড়েন। যেহেতু সচেতন তিনি টিকাও নিয়েছেন। এখন একজন লোক যদি সারাদিন দরজায় দাঁড় করিয়ে রাখি সনদ চেক করার জন্য তাহলে তার কাজগুলো কে করবে? এজন্য আমাকে আরও একজনকে নিয়োগ দিতে হবে। সেই ক্ষমতা আমার নেই। তাই মাস্ককেই গুরুত্ব দিচ্ছি।

এদিকে সোমবার (১০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়, করোনা ভাইরাসজনিত রোগ (কোভিড-১৯)-এর নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব ও দেশে এই রোগের সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ১৩ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সার্বিক কার্যাবলি/চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হলো।

সরকার ঘোষিত বিধি-নিষেধগুলো হলো- দোকান, শপিংমল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকে মাস্ক পরিধান করতে হবে। অন্যথায় তাকে আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ এবং আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য অবশ্যই করোনা টিকা সনদ প্রদর্শন করতে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরিধানের বিষয়ে সব মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় ইমামরা সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন। সর্বসাধারণের করোনার টিকা এবং বুস্টার ডোজ নেওয়া ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় প্রচার এবং উদ্যোগ নেবে। এক্ষেত্রে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সহায়তা নেবে। কোভিড আক্রান্তের হার ক্রমবর্ধমান হওয়ায় উন্মুক্ত স্থানে সর্বপ্রকার সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং সমাবেশসমূহ পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২২
জিসিজি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।