ঢাকা: বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বিদায়ী বৈঠক করেছেন। বৈঠকে তারা দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও বাড়ানোর ওপর জোর দেন।
বুধবার (১৯ জানুয়ারি) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে ড. মোমেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে তার মেয়াদে বাংলাদেশে সক্রিয় কাজের জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ যে ভ্যাকসিন সহায়তা পেয়েছে তার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোভ্যাক্স প্রোগ্রামের অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ২৮ মিলিয়ন ডোজ পেয়েছে এবং অদূর ভবিষ্যতে আরও ভ্যাকসিন পাবে।
বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে দুই দেশের ঘনিষ্ঠ সম্পৃক্ততার প্রশংসা করেন মোমেন। ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত জন কেরির বাংলাদেশ সফরের কথা আনন্দের সঙ্গে স্মরণ করেন। উভয় পক্ষই আশা প্রকাশ করেন, আগামী মাসে ধারাবাহিক সংলাপ এবং সফর হবে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটন ডিসি সফরের সুবিধার্থে ধন্যবাদ জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের দক্ষিণাঞ্চলে উপকূলীয় বাঁধ পুনরুদ্ধার এবং আরও উন্নয়নে বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য তার অনুরোধে সাড়া দেওয়ার জন্য মার্কিন সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন এ বিষয়ে ইউএসএআইডি প্রশাসক অধ্যাপক সামান্থা পাওয়ারকে একটি চিঠি দেন, যা তিনি ইতিবাচক সাড়া দেন। ফলস্বরূপ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ সরকারের অন্যান্য প্রাসঙ্গিক মন্ত্রণালয়গুলি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে উপকূলীয় বেড়িবাঁধকে শক্তিশালী করার জন্য সম্ভাব্য প্রকল্পগুলি চিহ্নিত করার জন্য ইউএসএআইডির সঙ্গে একটি যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু করার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ড. মোমেন রাষ্ট্রদূত মিলারকে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিষয়েও ব্রিফ করেন, নির্বাচনের অবাধ ও সুষ্ঠু প্রকৃতির ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের জন্য বাংলাদেশ উন্মুক্ত থাকবে।
বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজনসহ মানবাধিকার ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার উপায় নিয়েও আলোচনা করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী ভাসানচরে মানবিক কার্যক্রমে অংশ নিতে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মানবিক কার্যক্রমে সবচেয়ে বড় দাতা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানান।
সরকার ও জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ আতিথেয়তার কারণে বাংলাদেশে তার কর্মজীবনের সেরা সময় বলে উল্লেখ করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সব ধরনের সহযোগিতা ও সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে শুধু মানবিক সহায়তার মাধ্যমে নয়, প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে রাজনৈতিক নিষ্পত্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
মিলার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত সংলাপের মাধ্যমে মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত থাকতে ইচ্ছুক।
এর আগে বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২২
টিআর/এমজেএফ