ঢাকা: রাজধানীর হাতিরঝিলের বেগুনবাড়ি এলাকায় ফুটপাতের পাশে রক্তাক্ত আহত অবস্থায় পড়েছিলেন দৈনিক সময়ের আলোর সিনিয়র রিপোর্টার হাবীবুর রহমান (৩৪)। পাশে তার মোটরসাইকেলটিও পড়েছিল।
এদিকে, সুরতহাল রিপোর্ট সম্পন্ন করেন হাতিরঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ খলিফা। সুরতহাল রিপোর্টে তিনি উল্লেখ করেছেন, মৃতের মুখ থেতলানো, চোয়াল বিচ্ছিন্ন, গালে এক ইঞ্চি কেটে ঝুলে গেছে। প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা হাবীবুর রহমানের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি প্রায় অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। সড়ক দুর্ঘটনা নাকি হত্যার শিকার হয়েছেন সাংবাদিক হাবীবুর রহমান তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে রহস্য। নিহত হাবীবুর রহমানের সহকর্মীরা তার এই মর্মান্তিক মৃতু্যর বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছেন। ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে পুলিশের সহায়তা চেয়ে অনুরোধ জানিয়েছে সহকর্মীরা।
এদিকে, হাতিরঝিলের বেগুনবাড়ি এলাকায় ঘটনার কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ পাওয়া যায়নি। পুলিশ জানায়, সেই এলাকার ক্যামেরাগুলো নষ্ট ছিল। ফলে ওই সময় কি ঘটেছিল তা এখনও জানা যায়নি।
হাতিরঝিল থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) কায়েস উদ্দিন বলেন, মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) রাত ২টা ৩৮ মিনিটে রাসেল নামের এক পথচারী ৯৯৯-এ ফোন করে দুর্ঘটনার খবর দেন। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যায় পুলিশ। ততক্ষণে কে বা কারা সাংবাদিক হাবীবুর রহমানকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে দুর্ঘটনা কবলিত মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় একটি ইউডি মামলা হয়েছে। ঘটনাটি হাতিরঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ খলিফা বলেন, হাবীবুর রহমানের মৃত্যু মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নাকি অন্য কোনো কারণে তা তদন্তের পর বলা যাবে।
এর আগে, মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে রাজধানীর হাতিরঝিলের বেগুনবাড়ি এলাকার ফুটপাত থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় সাংবাদিক হাবীবুর রহমানকে উদ্ধার করেন পথচারীরা। পরে আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করা করেন। দৈনিক সময়ের আলোর সিনিয়র রিপোর্টার হাবীবুর রহমান আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী বিটের সংবাদ কাভার করতেন। ঘটনার রাতে মোটরসাইকেল যোগে তিনি বাসায় ফিরছিলেন। পথে তার রহস্যজনক এই মৃত্যু ঘটে।
হাবীবুর রহমান কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মনরা গ্রামের মোহাম্মদ পিয়ারা মিয়ার ছেলে। বর্তমানে হাতিরঝিল এলাকার ৫এ জোহরা মঞ্জিল বাসা পরিবার নিয়ে বসবাস করেন তিনি। তিনি বিবাহিত ও এক সন্তানের জনক। হাবীব তার পরিবারের বড় সন্তান এবং পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী সদস্য ছিলেন।
বুধবার দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) মর্গে তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। এরপর দুপুর আড়াইটায় তার মরদেহ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) নেওয়া হয়। সেখানে প্রথম নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তার মরদেহ নেওয়া হয় হাবীবের প্রিয় ক্যাস্পাস ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে। এরপর তার কর্মস্থল দৈনিক সময়ের আলো’র কার্যালয়ের নিচে। পরে হাবীবের মরদেহ অ্যাম্বলেন্সে করে গ্রামের বাড়ির কুমিল্লাতে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাবীবুর রহমানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২২
এসজেএ/এসআইএস