সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলাধীন ‘চাদরা গ্রুপ বিল’ নামক জলমহালটি হাই কোর্টের আদেশ অমান্য করে উপজলা প্রশাসনের যোগসাজশে রুপ্তন মিয়া নামে এক ব্যক্তি ভোগদখল করছেন আসছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে হাইকোর্টের নির্দেশক্রমে উক্ত জলমহালের ইজারাদার চারদা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি অভিজিৎ বর্মণ বাৎসরিক খাজনা বাবদ ৯ লাখ টাকা খাজনা পরিশোধ করেও তিনি জলমহালটি ভোগদখল করতে না পেরে তিনি মারাত্মকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জলমহালটি গত ১৪২৩ বাংলা সন হইতে ১৪২৮ বাংলা সন পর্যন্ত প্রথম চার বছর বাৎসরিক ২৭ লাখ টাকা ও পরবর্তী ২ বছরের জন্য ৩৪ লাখ টাকা করে খাজনায় ৬ বছরের জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনায় ইজারাপ্রাপ্ত হয় চাদরা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি অভিজিৎ বর্মন। ওই জলমহালের ইজারাদার অভিজিৎ বর্মন জলমহালটি ইজারাপ্রাপ্ত হওয়ার পর থেকেই নীতিমালা অনুযায়ী সরকারি বাৎসরিক খাজনা পরিশোধ করেই জলমহালটি ভোগদখল করে আসছিলেন।
কিন্তু ইজারাদার অভিজিৎ বর্মন তিনি ব্যক্তিগত বিভিন্ন সমস্যায় থাকার কারণে সময়মতো উক্ত জলমহালটির চলতি বছরের খাজনার টাকা পরিশোধ করতে পারিননি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন উক্ত জলমহালটির ইজারার অনুমোদন বাতিল করে খাস আদায়ের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। পরবর্তীকালে উক্ত জলমহালের ইজারাদার অভিজিৎ বর্মন জেলা প্রশাসনের ওই আদেশের বিপক্ষে ৮১০/২২ মূলে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন।
উচ্চ আদালত ইজারাদারের দায়েরকৃত রিট পিটিশনটি আমলে নিয়ে এই মুহূর্তে যতটুকু সম্ভব খাজনার অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে চালানের রশিদের কপি আদালতে দায়ের করার জন্য ইজারাদারকে নির্দেশ দেন। ইজারাদার আদালতের নির্দেশ মোতাবেক ২ লাখ টাকা চালান মূলে সোনালী ব্যাংক বাড্ডা শাখায় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ১৬ তারিখে সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে চালানের কপি উচ্চ আদালতে দাখিল করেন। পরবর্তীকালে উল্লেখিত রিট পিটিশনের শুনানি শেষে উচ্চ আদালত জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ইস্যুকৃত চাঁদরা বিল গ্রুপ নামে জলমহালটির ইজারা বাতিল ও খাস আদায়ের নির্দেশটি স্থগিত করেন।
একই সঙ্গে উচ্চ আদালত আগামী ১ মাসের মধ্যে উক্ত জলমহালের খাজনা বাবদ আরো ৭ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন চাদরা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডকে। কিন্তু ইজারাদার উচ্চ আদালতের সকল আদেশ যথাযথভাবে পালন করে এলেও উপজেলা প্রশাসন উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে তাদের পক্ষ থেকে খাস ইজারাপ্রাপ্ত রুপ্তন মিয়া নামে ওই ব্যক্তিকে জলমহাল থেকে এখনো সরিয়ে নিচ্ছেন না। এতে করে উক্ত জলমহালের বৈধ ইজারাপ্রাপ্ত চাদরা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের পক্ষ থেকে জলমহালটিতে লাখ লাখ টাকার গাছের ডাল ও বাঁশ দিয়ে সংরক্ষণকৃত মাছগুলো বড় বড় জাল দিয়ে রাতারাতি ধরে নিয়ে যাচ্ছেন খাস ইজারাপ্রাপ্ত রুপ্তন মিয়ার নেতৃত্বে তার লোকজন।
এতে করে জলমহালের বৈধ ইজারাপ্রাপ্ত সমিতি চাদরা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড জলমহালটি ভোগ দখল করতে না পারায় তারা এবার প্রায় কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে জানিয়েছেন ওই সমিতির সভাপতি অভিজিৎ বর্মণ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জলমহালের পাড়ে সরকারি সিলমোহর সংবলিত একটি বড় প্লাস্টিকের ত্রিপাল দিয়ে তাবু তৈরি করা হয়েছে এবং জলমহালটিতে ৬-৭টি ছোট-বড় নৌকায় করে বড় বড় জাল দিয়ে প্রায় ৪০-৫০ জন লোক মাছ ধরছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জেলে জানান, তারা প্রতিদিন ওই জলমহাল থেকে জাল দিয়ে প্রায় ৪-৫ লাখ টাকার মাছ ধরে আসছেন।
এ ব্যাপারে জলমহালের খাস ইজারাপ্রাপ্ত ব্যক্তি রুপ্তন মিয়া বলেন, উপজেলা প্রশাসনের কাছ থেকে আমি জলমহালটি খাস কালেকশনের মাধ্যমে ইজারায় এনেছি বলেইতো সেটি ভোগ দখল করছি। আপনার কিছু বলার থাকলে ইউএনও স্যারের সঙ্গে কথা বলেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনতাসির হাসান বলেন, এ ব্যাপারে পরবর্তীকালে দাপ্তরিক কোনো ডকুমেন্ট আমি এখনো পাইনি। পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ইজারাদার জলমহালের খাজনার বাকি টাকা পরিশোধ করলে তাকে অবশ্যই জলমহালের দখল বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২২
এনটি