মাদারীপুর: লিবিয়া থেকে ইতালি। স্বপ্নের ইউরোপ।
নিহতদের মধ্যে মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের বড়াইলবাড়ি গ্রামের পলাশ তালুকদারের ছেলে জয় তালুকদারের (২৩) মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে তার পরিবার। তার বাড়িতে চলছে পুত্র হারানো আহাজারি, শোক। এছাড়াও একই এলাকার পশ্চিম পেয়ারপুর গ্রামের ভ্যানচালক শাজাহান হাওলাদারের একমাত্র ছেলে ইমরান হোসেন (২২), মস্তফাপুরের জহিরুল ইসলাম, কেন্দুয়া ইউনিয়নের ঘটকচর এলাকার সাফায়েত হোসেন (২৩) ও সদরের বাপ্পীসহ (২০) পাঁচ তরুণের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ইতালিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মাদারীপুরের পাঁচ তরুণসহ সাত বাংলাদেশির মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়েছে। তবে নিহতদের কয়েকজনের পরিবারের দাবি, তাদের ছেলেরা বেঁচে আছেন এখনও।
নিহতদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ নভেম্বর পেয়ারপুর ইউনিয়নের বড়াইলবাড়ি থেকে জয় তালুকদার ও তার চাচাতো ভাই প্রদীপ তালুকদার (২১), মিঠু তালুকদার (২২), তন্ময় তালুকদারসহ (১৯) ছয় তরুণ ইতালিতে যাওয়ার উদ্দেশে মাদারীপুর ত্যাগ করেন। তারা দুবাই হয়ে লিবিয়ায় পৌঁছান। পরে লিবিয়ার একটি বন্দিশালায় প্রায় দেড় মাস বন্দি ছিলেন। গত ২২ জানুয়ারি ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে তাদের সাগর পথে যাত্রা শুরু হয়। ওই রাতে বাংলাদেশ, মিসরসহ বিভিন্ন দেশের ২৮০ জন অভিবাসন প্রত্যাশী ইঞ্জিনচালিত কাঠের নৌকায় করে লিবিয়ার উপকূল থেকে ইতালির লাম্পেদুসা দ্বীপের উদ্দেশে রওনা হন। যাত্রা শুরুর একদিন পরে ভূমধ্যসাগরে প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাস এবং পর টানা বৃষ্টি হয়। অভিবাসন প্রত্যাশীদের নৌকাটি ইতালির লাম্পেদুসা দ্বীপের কাছাকাছি পৌঁছায়। পরে ইতালিয়ান কোস্টগার্ড সদস্যরা নৌকা থেকে তাদের উদ্ধার করেন।
এ সময় নৌকা থেকে সাত বাংলাদেশির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। যার মধ্যে মাদারীপুরের জয় তালুকদার (২২), ইমরান হোসেন (২২), মস্তফাপুরের জহিরুল ইসলাম (২২), কেন্দুয়া ইউনিয়নের ঘটকচরের সাফায়েত হোসেন (২৩) ও সদরের বাপ্পী (২১) রয়েছেন।
পশ্চিম পেয়ারপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মৃত ইমরান হোসেনের পরিবারে উৎকণ্ঠা। ভ্যানচালক বাবা পরিবারের সুখের আশায় ধার-দেনা করে আট লাখ টাকা সংগ্রহ করেন। এরপর একই এলাকার সামাদ বেপারী নামে এক দালালের মাধ্যমে গত ২৫ অক্টোবর বাড়ি থেকে লিবিয়া হয়ে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করেন। ইমরানের পরিবার এখনো বিশ্বাস করছে না যে তাদের ইমরান মারা গেছেন।
ইমরানের চাচা সোবহান হাওলাদার বলেন, গত ২২ জানুয়ারি ইমরান বাড়িতে ফোন করেছিল। এরপর থেকে গত নয়দিন ধরে তার কোনো খোঁজ নেই। আজ শুনতে পেলাম, ইমরান মারা গেছে। বিশ্বাস হচ্ছে না। পোলার লাশটা সরকারের কাছে ফেরত আনার দাবি করছি।
ইমরানের বোন আকাশী আক্তার বলেন, অনেক আশা করে ইতালির উদ্দেশে বাড়ি ছাড়ে আমার ভাই। অনেকেই তো গেছে। সেই আশায় সেও বাড়ি ছাড়ে। আমার ভাই মইরা গ্যাছ বিশ্বাস হইতাছে না।
এদিকে মৃত অন্য তরুণদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তারা গণমাধ্যম কর্মীদের এড়িয়ে যাচ্ছেন। তাদের অনেকেরই দাবি, তাদের সন্তানরা এখনো বেঁচে আছেন। তারা মৃত্যুর খবরটিকে মিথ্যা বলে ধারণা করছেন।
পেয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান লাভলু তালুকদার বলেন, আমার এলাকায় কিছু দালাল আছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও আছে। বিচার না হওয়ায় দালালচক্র ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কেউ মারা গেলে, তার পরিবারকে কিছু টাকা দিয়ে আর ভয়-ভীতি দেখিয়ে দালালরা মীমাংসা করে নেন। এ কারণে অবৈধ পথে বিদেশযাত্রা কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না।
মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.সাইফুদ্দিন গিয়াস বলেন, মাদারীপুরের যে পাঁচ তরুণ ইতালিতে মারা গেছেন, আমরা তাদের লাশ দেশে আনার চেষ্টা করছি। ইতালি দূতাবাসের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা কিছু কাগজপত্র জমা দিতে বলেছে। সেগুলো জমা দিলে আশা করি, লাশ ফেরত পাব।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২২
এসআই