নেত্রকোনা: আমার স্বামীর জীবন কাটছে মাইনষের বাড়িতে কাম কাজ করে। আমিও তার সঙ্গে সারা জীবন কাটাইছি অন্যের বাড়ির ছনের চাউনি ও পাটকাঠির বেড়ার ঘরে।
বীর নিবাসের ভাঙা ঘর দেখিয়ে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন নেত্রকোনার মদন উপজেলার মাঘান ইউনিয়নের মান্দাউরা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিলাল তালুকদারের স্ত্রী নয়ন তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মান্দাউরা গ্রামের মৃত সুরেন্দ্র তালুকদারে ছেলে মতিলাল। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। পৈত্রিক কোনো সম্পত্তি না থাকায় কয়েক যুগ কাটিয়েছেন অন্যের বাড়িতে। তারই সহদোর বড় ভাই গীরেন্দ্র তালুকদারের আশ্রয় মিলেছে ছত্রমপুর গুচ্ছ গ্রামে। একটি বোনও ছিল তার। দীর্ঘদিন আগে বোনও ভারত চলে গেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিরোচিত অবদানের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার বীর নিবাস বারদ্ধ পায় মতিলাল। কিন্তু ঘর নিমার্ণ করার বছর ঘুরতেই সামনের অংশ ভেঙে যায়। প্রত্যন্ত হাওরাঞ্চলে মতিলালের বীর নিবাসের তেমন কোনো খোঁজও রাখেনি সংশ্লিষ্টরা।
বীর নিবাসের ঘরে লাগানো নেম প্লেটের তথ্যনুযায়ী দেখা যায়, কাজটি বাস্তবায়ন করে এলজিইডি। কোন অর্থ বছরে ঘরটি বরাদ্ধ বা নির্মাণ করা হয়েছে নেম প্লেইটে এর কোনো তথ্যও দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে মদন এলজিইডি অফিসে বেশ কয়েকদিন ঘুরেও কোনো রকম তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে মদন উপজেলায় এই বীর নিবাস প্রকল্পের বরাদ্ধ হয় বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা মতিলাল তালুকদার বলেন, আমার বাবার কোনো জমি নেই। বড় ভাই থাকেন গুচ্ছগ্রামে। ১০ শতাংশ জমি কিনে ঘরের জন্য আবেদন করার পর ঘর পেয়েছি। তিন বছর আগে সরকার আমারে ঘর করে দিয়েছে। ঘরের দরজাগুলো ভাল করে লাগানো হয়নি তাই টিন দিয়ে কোনো রকম আটকে রাখছি। ঘরের কাজ ভাল হয়নি তাই নির্মাণ করার কিছুদিন পরেই সামনের অংশ ভেঙে পরে গেছে। এ বিষয়ে কেউ কোনো খোঁজ খবরও নেয়নি।
জানতে চাইলে মদন উপজেলা প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া পিয়েল জানান, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। বীর নিবাসের ভাঙা ঘরটির খোঁজ নিয়ে দেখবো।
মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, বীর নিবাসের ঘর ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে ভেঙে যাওয়া ঘরটির খোঁজ নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংরাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২২
জেডএ