ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অসহায় নারীকে বাড়ি-দোকান করে দিলো ফরিদপুর জেলা পুলিশ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২২
অসহায় নারীকে বাড়ি-দোকান করে দিলো ফরিদপুর জেলা পুলিশ

ফরিদপুর: মানুষ মানুষের জন্য। আর মানুষের বিপদের সময় পাশে থেকে সহযোগিতা করাই মানুষের ধর্ম।

মানুষকে ভালোবাসার মাঝেই আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায়। এরকম স্বপ্ন যিনি মনে লালন করেন তিনি হলেন ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আলীমুজ্জামান বিপিএম-সেবা। তিনি অনন্য এক মানবতার দ্বার উন্মোচন করেছেন ফরিদপুরের মানুষের জন্য।

তার অফিসের দরজা অবারিত খোলা থাকে যেকোনো অসহায় মানুষের জন্য। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত যে কোনো মানুষ তার কাছে হাজির হতে পারেন। মুখ খুলে বলতে পারেন কথা, যেকোনো সমস্যা নিয়ে। তার মানবতা ছড়িয়ে পড়েছে ফরিদপুরের অলি-গলিতে। এমনই মানবতার নিদর্শন নিয়ে সোমবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় ফরিদপুর শহরের গুহলক্ষ্মীপুর মডেল টাউন এলাকায় ভিক্ষুক এক নারীকে বাড়ি ও দোকান নির্মাণ করে দিয়েছেন এসপি আলিমুজ্জামান। এর আগেও তিনি একজন বীরঙ্গনাসহ বেশ কয়েকজন অসহায় পরিবারকে বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছেন। করোনার প্রথম থেকে অসহায় মানুষকে খাদ্যসামগ্রী, মাস্ক ও স্বাস্থ্যসামগ্রী, রোজায় খাদ্য ও ইফতার বিতরণ, রাতে শীতার্ত মানুষের মধ্যে ঘুরে ঘুরে কম্বল বিতরণ করেছেন তিনি। এর মধ্যে সন্ত্রাস, চোর, ডাকাত, মাদক নিমূলে অনন্য এক নজির গড়েছেন তিনি। বছরের প্রতিটি রাতে জেলার অসহায় ভবঘুরে মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করে তিনি এখন ফরিদপুরের মানবতার ফেরিওয়ালা।  
এমনই উদ্যোগের অংশ হিসেবে সোমবার ফরিদপুর শহরের গুহলক্ষ্মীপুর মডেল টাউন এলাকায় মাহফুজা বেগম (৪৭) নামে ওই নারীর হাতে বাড়ির চাবি তুলে দেন এসপি আলীমুজ্জামান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার, কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. গাফফার হোসেন, পুলিশ লাইন্সের রিজার্ভ অফিসার-১ আনোয়ার হোসেনসহ পুলিশ কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা।  

চাবি হস্তান্তর শেষে বাড়ির আঙিনায় এসপি আলীমুজ্জামান দুটি আম গাছের চারা রোপণ করেন। জেলা পুলিশের নিজস্ব অর্থায়নে চার লাখ টাকা ব্যয়ে এ বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। বাড়ির মধ্যে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট, টিউবওয়েল, পাকা ফ্লোরের বারান্দাসহ বাড়িটিতে দুটি কক্ষ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বাড়ির সঙ্গেই একটি দোকান নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। যাতে ওই নারী ভিক্ষা না করে তার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেন।  

সুবিধাভোগী ওই নারী মাহফুজা বেগম বাড়ি পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে জানান, আমার এ খুশি প্রকাশ করার মতো নয়। সারা জীবন আমি এসপি স্যারের জন্য দোয়া করবো। দোয়া করি তার মতো প্রতি জেলায় এরকমের অফিসার জন্ম নেয়।  

তিনি জানান, তার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে চার থেকে পাঁচ বছর আগে। এখন একমাত্র ছেলে পঙ্গু হয়ে আছে, কোনো কাজ করতে পারে না। মানুষের কাছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা নিয়ে দুই বেলা আহারের ব্যবস্থা হতো। মাথা গোঁজার কোনো ঠাঁই ছিল না আমার, পরের বাড়িতে থাকতাম। এসপি স্যার অনেককে বাড়ি বানিয়ে দিচ্ছেন শুনে তার কাছে গিয়ে জানালে তিনি আমাকে বাড়িটি নির্মাণ করে দেন। এরকম মানবিক স্যারের জন্য দু-হাত ভরে দোয়া করি।

পুলিশ সুপার আলীমুজ্জামান জানান, পুলিশ জনগণ নিয়ে কাজ করে, পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি অনেক মানবিক কাজ করে থাকে, অতীতেও করেছে, যা হয়তো এখন আরও বেশি দৃশ্যমান। আমরা জনগণের খুব পাশে যেতে চাই। সেই ধারাবাহিকতায় জেলা পুলিশের নিজস্ব অর্থায়নে দরিদ্র অসহায় ওই নারীকে বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা মানুষের জন্য ব্যতিক্রম কিছু করে যেতে চাই।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২২
আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।