ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শয্যাশায়ী স্বামীর শরীরে দুর্গন্ধ তবুও পাশে স্ত্রী

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০২২
শয্যাশায়ী স্বামীর শরীরে দুর্গন্ধ তবুও পাশে স্ত্রী

ঢাকা: প্রায় দেড় বছর ধরে শয্যাশায়ী স্বামী রাসেল। গাছ থেকে পড়ে মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যায় তার।

বিছানায় শুয়ে থাকতে থাকতে বর্তমানে কোমরের পেছনের অংশে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। সেখান থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। তবুও হাল ছাড়েননি রাসেলের স্ত্রী লিলি আক্তার। এখনো তার আশা স্বামী সুস্থ হবে। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে বাড়ি ফিরবে।

মঙ্গলবার (০১ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের ১৪ নম্বর বেডে পাওয়া যায় রাসেলকে।

পাশে থাকা স্ত্রী লিলি জানান, রাসেলের বাড়ি কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মঙ্গলকান্দি গ্রামে। ২০১৩ সালে পারিবারিকভাবেই তাদের বিয়ে হয়। শুরুতে তাদের দিন ভালই কাটছিল। রাসেল রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। তাদের দুই সন্তান- রায়হান (৫) ও মীম (২)।

কান্নাভেজা চোখে লিলি বলেন, আমরা খুব সুখে ছিলাম। তবে দেড় বছর আগে এক দুর্ঘটনায় উনার (রাসেল) মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যায়। তারপর সুখের সংসারে কষ্ট চলে আসে।

স্থানীয় হাসপাতাল, সাভার সিআরপি হাসপাতাল, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ও ঢামেক হাসপাতাল―গত দেড় বছরে অনেকগুলো হাসপাতালে সেবা নিয়েছেন রাসেল। তবে হাঁটা তো দূরের কথা, এখনো উঠে বসতে পারছেন না তিনি।

লিলি জানান, মেরুদণ্ডের হাড় ভাঙার কারণে রাসেলকে বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়। শুয়ে থাকতে থাকতে তার কোমরের নিচে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। সেখান থেকে দুর্গন্ধ বেরোয়।

রাসেল-লিলি দম্পতির একমাত্র মেয়ে মীম।  ছবি: বাংলানিউজ

তিনি বলেন, আমার ছোট মেয়ের বয়স যখন ছয় মাস তাকে কোলে নিয়ে উনাকে (রাসেল) বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছি। এখন আমার মেয়ের বয়স দুই বছর। তিনি এখনো মেয়েকে কোলে নিতে পারেননি। আমরা গরীব মানুষ, এ পর্যন্ত চিকিৎসায় সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। অথচ তিনি এখনো উঠে বসতে পারেন না। আমার বিশ্বাস, আল্লাহ চাইলে তিনি সুস্থ হয়ে আবারও বাড়ি ফিরবেন।

লিলি আরও বলেন, আমার শ্বশুর মাঝে মাঝে ৫০০, ১০০০ টাকা দিয়ে যায়। আমি বাবার বাড়ি থেকে কিছু সহযোগিতা পাই। এভাবেই উনার (রাসেল) চিকিৎসা চলছে। আমার সন্তানের মুখের দিকে তাকালে কষ্টে বুক ফেটে যায়। তারা বাবার আদর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আল্লাহ যতদিন শক্তি দিয়েছে, স্বামীর সেবা করে যাবো।

লিলি যখন কথাগুলো বলছিলেন, তখন তার দুই বছর বয়সী মেয়ে মীম হাসপাতালের ওয়ার্ডে এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছিল।

বুধবার (০২ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাসেলের অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চিকিৎসকরা।

লিলি বলেন, মাঝে মাঝে ওষুধ কেনার টাকা থাকে না। এক বেলা খাওয়ালে দুই বেলা খাওয়াতে পারি না। স্বামী রাসেলের সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি।

এদিকে ১০১  নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্বরত নার্স অলিভিয়া বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, একদিকে ফুটফুটে শিশু, অন্যদিকে অসুস্থ স্বামী। সবকিছু সামলাতে হয় লিলির। শয্যাশায়ী স্বামীর প্রতি তার ভালোবাসা দেখে স্যালুট না দিয়ে পারি না।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২২
এজেডএস/এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।