মৌলভীবাজার: বয়োবৃদ্ধ বাবার জ্যেষ্ঠ মেয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভের আশায় যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন। মেয়ের বিদেশ যাওয়াকে কেন্দ্র করে এলাকায় স্থানীয় পঞ্চায়েত ও লোকজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন অপবাদ তুলে তার পরিবারকে সমাজচ্যুত করার জন্য বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেন।
সম্প্রতি এ ঘটনাটি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরার কৃষ্ণপুর গ্রামের।
ভুক্তভোগী বাবার নাম হাজী আব্দুল হাই চৌধুরী (৭০)। এমন ঘটনা এবং সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন থেকে রক্ষা পেতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাছে একটি অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ভাটেরার কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা হাজী আব্দুল হাই চৌধুরীর দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। এর মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান হলেন ঝর্ণা চৌধুরী। ঝর্ণা ২০০৮ সাল থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘পজিটিভ বাংলাদেশে’র সদস্য এবং ২০১৩ সাল থেকে প্রধান সমন্বয়ক ও নারী অধিকার নিয়ে কাজ শুরু করেন স্থানীয়ভাবে। আর এজন্য এলাকার কিছু মানুষ বিষয়টিকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে নিয়েছিলেন। সিলেটে পড়াশুনার সময় এলাকার মানুষ ঝর্ণাকে নিয়ে বিভিন্ন অপপ্রচার শুরু করেন ফেসবুকে। বিষয়টি নিয়ে সিলেটের শাহপরাণ থানায় একটি জিডি করেন ঝর্ণা।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ঝর্ণা আইন বিষয়ে সিলেটের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সম্পন্ন করে উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। সেখানে তার সংগঠনের চেয়ারম্যানসহ কয়েকজনের সঙ্গে তোলা ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করে। এরপর ঝর্ণার গ্রামের কিছু মানুষ তার বিদেশে যাওয়া ও এমন ছবি তুলে ফেসবুকে প্রকাশ এবং তার জীবনাচরণ নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করতে থাকেন ফেসবুকে।
এদিকে ঝর্ণার পরিবারকে নিয়ে এলাকায় অপপ্রচার ছড়িয়ে হেয়প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। এলাকার পঞ্চায়েতের লোকজন আব্দুল হাই চৌধুরীর কাছে জানতে চান তার মেয়ে ঝর্ণা যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে সনাতন ধর্মের এক ছেলের সঙ্গে চলাফেরা এবং ছোট কাপড় কেন পরিধান করেন? মেয়ের এমন জীবনাচরণের কারণে তাকে ‘একঘরে’ করার হুমকিও দিতে থাকেন তারা।
ঝর্ণা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমি যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর আমি ছোট কাপড় পরছি, নাস্তিক হয়ে গেছি ফেসবুকে এমন কুৎসা রটাতে থাকে স্থানীয় একটি মৌলবাদীগোষ্ঠী। স্থানীয় মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটি অনধিকার চর্চার মাধ্যমে আমার পরিবারকে সমাজচ্যুত করেছেন।
এর আগেও আমাকে নিয়ে নানা অপবাদ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আমি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে জানাই। তখন তিনি গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি ব্যবস্থা নেননি। এজন্য ওই গোষ্ঠী আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আমাদের নিয়ে মিথ্যা-অপপ্রচার করছে। এখন আমিসহ আমার পরিবার সামাজিক হেয়প্রতিপন্ন হয়েছিও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
কুলাউড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বাংলানিউকে বলেন, মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঝর্ণা চৌধুরী বাবা আব্দুল হাই চৌধুরী, মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কুলাউড়া ওসিসহ উভয়পক্ষকে নিয়ে আমাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে তারা উনাদের ভুল বুঝতে পেরেছেন এবং আমাদের কাছে লিখিতভাবে অঙ্গীকার করেছেন যে, আব্দুল হাই চৌধুরী পরিবারকে আর কখনোই সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করবেন না।
কুলাউড়া ইউএনও আরো বলেন, তারপরও বিষয়টি প্রতি আমি তাৎক্ষণিক মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি ও সম্পাদককে সতর্ক করে দিয়েছি। বলে দিয়েছি যাতে কোনোভাবেই আব্দুল হাই চৌধুরীর পরিবারকে যাতে আর হয়রানি না করা হয়।
ওসিসহ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকেও নির্দেশ দিয়েছি ওই পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।
এদিকে, ঝর্ণা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, কুলাউড়া ইউএনও মহোদয় আমাদের বলেছেন, যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনাদের পরিবারের নামে বিভিন্ন অপপ্রচার করেছেন, তাদের নামে আপনারা চাইলে সাইবার আইনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২২
বিবিবি/এএটি