বরিশাল: জালিয়াতি মামলায় বরিশালের বাকেরগঞ্জের দাড়িয়াল ইউনিয়র পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামকে জেলহাজতে পাঠানোর সংবাদ ও ছবি সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছেন চেয়ারম্যানের স্বজন ও আইনজীবী সহকারীরা। হামলায় আহত ১৮ সাংবাদিককে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বুধবার (০২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বরিশাল আদালত প্রাঙ্গণে ও এর সামনের সড়কে হামলার এই ঘটনা ঘটে।
হামলায় আহতরা হলেন—স্থানীয় দৈনিকের ফটো সাংবাদিক মো. নাঈম, আহসান আকিব, এন আমিন রাসেল, শাফিন আহমেদ রাতুল, জিয়াদ, জুয়েল, সাইফুল ইসলাম, সুজন হাওলাদার, আবু কালাম আজাদ (সোহাগ), সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়, টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরাম্যান কামাল হোসেন, অপূর্ব বাড়ৈ, শুভ হাওলাদার, শফিক হোসেন, লিটন মোল্লা, প্রথম সকাল পত্রিকার বার্তা সম্পাদক সুমাইয়া জিসান ও সুন্দরবন পত্রিকার বার্তা সম্পাদক মিজান পলাশসহ মোট ১৮ জন।
আহতরা জানান, দাড়িয়াল ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৫ জনকে জালিয়াতি মামলায় জেলহাজতে পাঠানোর ছবি তুলতে আদালত প্রাঙ্গণে যান ফটো সাংবাদিকরা। এরপর সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন চেয়ারম্যানের ভাইয়ের ছেলে সুজন হাওলাদার, সাইফুল ও আইনজীবী সহকারী কামরুজ্জামান, বাপ্পিসহ বেশ কয়েকজন। ম্যানেজ করতে না পেরে ইউপি চেয়ারম্যানের ছবি ধারণের সময় ফটো সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়।
প্রথম দফার হামলায় বেশ কয়েকজন ফটো সাংবাদিক আহত হন। পরে প্রতিবাদ করতে গেলে ফটো সাংবাদিকদের ওপর ব্যাপক হামলা চালানো হয়। এক পর্যায়ে আদালতের সামনে রাস্তায় ফেলে পেটানো হয় সাংবাদিকদের। ভাঙচুর করা হয় সাংবাদিকদের ৬/৭টি মোটরসাইকেল। এরপর অন্যান্য সাংবাদিকরা আদালত প্রাঙ্গণে গেলে তাদের ক্যামেরাও ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন আইনজীবী সহকারীরা।
পরে বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খোকন ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
কোর্ট পুলিশের উপস্থিতিতে সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে বরিশালের সর্বস্তরের মানুষ। হামলার সময় কয়েকজন সাংবাদিকের মোবাইল ও নগদ অর্থ হামলাকারীরা লুট করে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রতক্ষ্যদর্শী ও আহতরা জানান, দাড়িয়াল ইউপি চেয়ারম্যান আদালতে ওঠার আগেই সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। তাতে ব্যর্থ হয়ে কোর্ট পুলিশের সদস্য ও আইনজীবী সহকারীদের ম্যানেজ করেন যাতে সাংবাদিকরা ছবি তুলতে না পারেন। এ কারণে ছবি তুলতে বাধা দিয়ে কোর্ট পুলিশের সামনেই সাংবাদিকদের ওপর এমন হামলার ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল বিশ্বাস জানান, আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলা চালিয়েছে কিছু মাদকসেবী আইনজীবী সহকারী। আমরা দেখেছি হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া কয়েকজনের বিরুদ্ধে মাদক ও নারী নির্যাতন মামলাও রয়েছে। নেশায় বুদ হয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে আইনজীবী সহকারীরা।
বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন বলেন, আহতদের বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। আপাতত আহতদের মধ্যে ১৮ জনকে ভর্তি করেছি। আমরা আমাদের পরবর্তী সিদ্ধান্ত পরে জানাবো।
বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিমুল করিম বলেন, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি, ০২, ২০২২
এমএস/এমজেএফ