ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ভর্তুকির সার নিয়ে জাহাজ ডুবি, প্রশ্নবিদ্ধ উদ্ধার কার্যক্রম

উত্তম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২২
ভর্তুকির সার নিয়ে জাহাজ ডুবি, প্রশ্নবিদ্ধ উদ্ধার কার্যক্রম

যশোর: যশোরের অভয়নগরে ভৈরব নদে সরকারি ভর্তুকির ইউরিয়া সার বোঝাই কার্গো জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটেছে। ২০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও জাহাজ উদ্ধার কার্যক্রম শুরু না করায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

 

বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) কার্যাদেশে কাতার থেকে এ সার আমদানি করে ‘টোটাল শিপিং এজেন্সি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের দাবি, এমভি শারিব বাঁধন নামের ডুবে যাওয়া কার্গো জাহাজটিতে ৬৪০ মেট্রিক টন (১৩ হাজার ৬০০ বস্তা) ইউরিয়া সার ছিলো। এমনকি, ডুবে যাওয়া পুরো সার এতোক্ষণে নদীর পানির সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে গেছে বলেও অগ্রিম ধারণা তাদের।

যদিও কোটি টাকার এই ইউরিয়া সারবাহী কার্গো জাহাজটি ডুবে যাওয়ার সূত্রপাত থেকে এ পর্যন্ত (রাত ৮টা) টানা ২০ ঘণ্টা সময় পার হলেও উদ্ধারে ন্যূনতম কোনো প্রচেষ্টা দেখা যায়নি। ফলে দেশের সর্ববৃহৎ সারের মোকাম নওয়াপাড়ায় জাহাজডুবির এ ঘটনাটি নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

ডুবে যাওয়া জাহাজটির খুলনা নৌ-সংরক্ষণ ও পরিচালনা বিভাগ (বিআইডব্লিউটিএ) যুগ্ম পরিচালক মো. আশরাফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বুধবার (০২ ফেব্রুয়ারি) রাত ১টার দিকে কোস্টাল জাহাজটির তলা ফেটে যায়, পরে জোয়ারের পানি আসতে শুরু করলে জাহাজটিতে পানি উঠতে-উঠতে রাত ৩টার দিকে ডুবে যায়। তারপর সকালে জাহাজ কর্তৃপক্ষ আমাদের বিষয়টি জানালে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সারাদিন ঘটনাস্থলে অবস্থান করি।  

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে জাহাজ উদ্ধারে সহায়তার প্রস্তাব দেওয়া হলে জাহাজের মালিক ও অনন্যরা জানায়, আগে ঢাকা থেকে ডুবুরি দল পাঠাবো, তাদের পরামর্শ অনুযায়ী উদ্ধার কাজ নিজেরা করতে পারবো। একপর্যায়ে মালিকপক্ষ আমার কাছে কোনো সহযোগিতা না চাওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে ওই এলাকায় আমরা চিহ্নিত করে দিয়ে চলে এসেছি। তবে চ্যানেলের মধ্যে হাহাজটি ডুবে থাকায় বড় জাহাজ চলাচলে খুবই সমস্যা হচ্ছে, এজন্য দ্রুত জাহাজ উদ্ধারের তাগাদা দেন এ কর্মকর্তা।

এদিকে জাহাজটির মাস্টার সজিব ও শুকানি সুমন মির্জা সাংবাদিকদের কাছে দুই ধরনের তথ্য দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, গত ২১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে সার লোড দিয়ে জাহাজটি ২৫ জানুয়ারি অভয়নগরের ভাটপাড়ায় এসে নোঙর করে।  

জাহাজের মাস্টার সজিব আরও বলেন, সারের আনলোড ঠিকাদার মেসার্স সঞ্জয় ট্রেডিং সার আনলোড না করে সিরিয়ালের অজুহাত দিয়ে ৭-৮ দিন নোঙরে রাখা হয়। সর্বশেষ বুধবার সঞ্জয় ট্রেডিংয়ের অফিস থেকে বলা হয়, জাহাজটি নওয়াপাড়া পীর বাড়ি ঘাটে নিলে আনলোড করা হবে। বুধবার দুপুরে জাহাজটি নওয়াপাড়া পীরবাড়ি ঘাটে রাখা হলে গভীর রাতে জাহাজটি কাত হয়ে যায়। এক পর্যায়ে জাহাজের তলা ফেটে তা ডুবে যায়।  

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে সঞ্জয় ট্রেডিংয়ের সত্ত্বাধিকারী সঞ্জয় কুমার বাংলানিউজকে বলেন, এসব কথা জাহাজ মাস্টারের বানোয়াট কথা। আমাদের সারবাহী জাহাজ আনলোডের সিরিয়াল থাকায় অপেক্ষা করানো স্বাভাবিক।  

তিনি আরও বলেন, জাহাজটির তলায় ফাটল দেখামাত্রই জানালে কিছু সার উদ্ধার করা সম্ভব হতো। তবে যখন জাহাজের দুইভাগ ডুবে গেছে তখন আমাকে জানালে আমি গিয়ে মাত্র ৪৬ বস্তা উদ্ধার করেছি।  জাহাজে থাকা বাকি সার পুরোপুরি গলে পানি হয়ে গেছে বলেও তিনি ধারণা করেন।

সার আমদানীকারক ও পরিবহনের দায়িত্বে থাকা টোটাল শিপিংয়ের খুলনায় দায়িত্বরত কর্মকর্তা মো. আব্দুল মজিদ রাত সাড়ে ৮টায় বাংলানিউজকে বলেন, যত দ্রুত সম্ভব আমরা জাহাজ উদ্ধার কাজ শুরু করব।  

সার উদ্ধারকে গুরুত্বহীনভাবে দেখে জাহাজ উদ্ধারে সময়ক্ষেপণ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান।

ডুবে যাওয়া জাহাজটির মালিক ঢাকার ব্যবসায়ী বাবুল চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমি ডুবুরিদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুতই জাহাজ উদ্ধারকাজ শুরু করব, আমি নিজেও নওয়াপাড়া যাবো।

নওয়াপাড়া নৌ-বন্দরের সহকারী পরিচালক মো. মাসুদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি সার বোঝাই জাহাজ ডুবেছে, তবুও উদ্ধারের ব্যাপারে জাহাজ মালিক কিংবা সার আমদানি ও পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠানটির কোনো আগ্রহ নেই। অন্য জাহাজ চলাচলেও অসুবিধা হচ্ছে, এজন্য আমরা তাদেরকে দ্রুত জাহাজ সরানোর নির্দেশ দিয়েছি।

এদিকে, বাংলাদেশে সরকারি সার আমদানিকারকদের কয়েকটি কোম্পানি সংশ্লিষ্টদের অভিজ্ঞতা মতে, নদীর নাব্য সংকটে জাহাজে ফাটলের ঘটনা ঘটলেও সাথে সাথে তো জাহাজ ডুবে যায় না। সেক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে অন্য কার্গো জাহাজ কিংবা নৌযান ভিড়িয়ে মালামাল আনলোড করার সুযোগ থাকে। তারপরও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যেতে লাগলে একপাশে মোটর দিয়ে পানি সেচে মালামাল উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়। তবে সর্বশেষ জাহাজ ডুবে গেলেও যথাসম্ভব চেষ্টা করে জাহাজ তুলতে পারলেও সার জমাট বাঁধে, তবে ভালো থাকে।

জাহাজে থাকা ১৩ হাজার ৬০০ বস্তা সারের দাম প্রায় ১ কোটি টাকা হলেও বিদেশ থেকে এই সার আনতে সরকারের খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা।  

সরকারের ভর্তুকির এই সার নিয়ে কারণে-অকারণে প্রতিবছরই কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নানা ধরনের ফন্দি-ফিকির করে থাকে। সেক্ষেত্রে জাহাজ ডুবির এ ঘটনায় প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি ও কারণ অনুসন্ধানে অধিকতর তদন্ত প্রয়োজন বলেও মত সংশ্লিষ্টদের।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২২
ইউজি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।