খুলনা: শহরের সব ময়লা ময়ূর নদীতে ফেলা হয়। প্রচুর গন্ধ।
খুলনার ময়ূর নদীর পাড়ের আরাফাত প্রকল্প এলাকার চরমাসুরাবাদ এলাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব আকবর আলী মোল্লা এসব কথা বলেন।
গল্লামারী এলাকার ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম সবুজ বাংলানিউজকে বলেন, ময়ূর নদী এখন কচুরিপানার দখলে। দেখলেই মনে হয় এ যেন কচুরিপানার অভয়ারণ্য। পুরো নদী কচুরিপানা দখল করে নিয়েছে। গল্লামারী বাজারের ময়লা-আবর্জনা এখনও নদীতে ফেলেন অনেকে। এছাড়া গল্লামারী এলাকার অনেকে দখল করে রেখেছে নদীর পাড়।
খুলনা মহানগরের উত্তর-পশ্চিমাংশে গল্লামারী-সংলগ্ন অংশে অবস্থিত ময়ূর নদী। গঙ্গা অববাহিকার পুরনো নদী ময়ূর ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ। আগে রূপসা নদীর সঙ্গে ময়ূরের সরাসরি সংযোগ ছিল। একটা সময় ময়ূর নদীর পানির স্বাভাবিক প্রবাহ থাকলেও বর্তমানে স্লুইসগেট বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকে। ফলে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
জানা গেছে, নিম্নভূমি উদ্ধারের নামে ষাটের দশকের গোড়ার দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বটিয়াঘাটা উপজেলার তেঁতুলতলায় ময়ূর নদীর শহরের প্রবেশমুখে ১০ গেটের স্লুইস গেট নির্মাণ করে। এর ফলে স্রোতস্বিনী নদীটি জলাশয়ে পরিণত হয়, হারিয়ে যায় স্রোতস্বিনী রূপ, রুদ্ধ হয় গতিপথ। দুই তীরে বসতি স্থাপনকারী লক্ষাধিক মানুষের পয়ঃনিষ্কাশনের সহজ স্থানে পরিণত হয় সুন্দর নদীটি। ওঠে অসংখ্য কাঁচা পায়খানা, কিছু কিছু কলকারখানা। বিপুল বর্জ্যের ভারে নুয়ে পড়ে ময়ূর নদী। অবৈধ দখলদারদের কবলেও চলে যায় নদীর বিশাল একটি অংশ।
সরেজমিনে নদীর পাড় ঘুরে দেখা গেছে, এক সময়ের খরস্রোতা ময়ূর নদীতে এখন পানিপ্রবাহ নেই। আবর্জনা আর কচুরিপানায় ভরপুর নদীটি মৃতপ্রায়। প্রতিনিয়ত দখলে নদীর আয়তন সংকুচিত হচ্ছে। ময়ূর নদীর পানি আলকাতরার মতো কালো। দুর্গন্ধে নাকে রুমাল না চেপে বেশিক্ষণ থাকা দায়। দীর্ঘদিন ধরে কচুরিপানায় ভরে আছে। আবার কোথাও কোথাও কচুশাকের ক্ষেতে পরিণত হয়েছে। ঘন কচুরিপানা জন্মানোয় কোনো ধরনের কাজে এ নদীর পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। সবচেয়ে বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে কচুরিপানা পচে যাওয়ায়। পচা কচুরিপানার দুর্গন্ধে নদীর পাড়ে বসবাস যেমন মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে, তেমনি এর পানি পরিণত হয়েছে মশার প্রজনন ক্ষেত্রে। প্রায় দুই যুগ ধরে এ নদীতে নৌযান চলাচল বন্ধ। কচুরিপানার জঞ্জালে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে মরে যাচ্ছে নদীটি। হুমকিতে পড়েছে জলজ জীববৈচিত্র্য।
এদিকে পরিবেশবাদিরা নদীটি রক্ষার জন্য একাধিকবার দাবি জানিয়ে আসছেন। তারা নদী রক্ষা কমিশন, ভূমি মন্ত্রণালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পরিবেশ অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশনকে ময়ূর নদী বাঁচাতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ ও নদীটি খননের দাবি জানান।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) খুলনা জেলা নির্বাহী সদস্য এস এম ইকবাল হোসেন বিপ্লব বাংলানিউজকে বলেন, ময়ূর নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ ও অবৈধ দখলমুক্ত করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে হবে। এক্ষেত্রে নদীটি খননের কোনো বিকল্প নেই। নদী রক্ষায় আইন থাকলেও আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবে ময়ূর এখন দূষণের কবলে। যদি যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয় ময়ূর নদী বেঁচে যাবে।
খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, খুলনায় চলমান উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের পাশাপাশি ময়ূর নদী খননের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। খুব শিগগিরই সিটি করপোরেরেশন অধিভুক্ত আট কিলোমিটার এলাকায় নদী খনন কাজ শুরু করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২২
এমআরএম/আরবি