খুলনা: এক্সকাভেটর, বুলডোজার, দীর্ঘ ও উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ক্রেন, ওয়েল্ডিং মেশিন, বিভিন্ন প্রকার কাটিং মেশিন ও হ্যান্ড টুলস দিয়ে ভাঙা হচ্ছে খুলনার জিয়া (পাবলিক) হল ভবন।
দ্বিতল গ্যালারি বিশিষ্ট মিলনায়তন, আধুনিক সুবিধা সম্বলিত এই ভবনই ছিল খুলনার সভা-সমাবেশ, নাটকসহ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু।
১৯৯২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর উদ্বোধনের মাত্র ১৭ বছর পরই ২০১০ সালে বন্ধ হয়ে যায় এই হল। সেই থেকে ১২ বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকার পর নিলামে বিক্রি হয়ে যায় জিয়া হল কমপ্লেক্স। সম্প্রতি ভবনটি ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ভবনের পশ্চিম পাশ, পেছন ও সামনের অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে।
ভাঙার কাজে নিয়োজিতরা জানান, জিয়া হল নির্মাণে নিম্নমানের রড ও সিমেন্ট ব্যবহার করেছিলেন ঠিকাদাররা। যে কারণে অল্প দিনেই এটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে যায়।
খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) সূত্রে জানা গেছে, এখানে বহুতল সিটি সেন্টার নির্মাণের জন্য ২০১২ সালে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রায় ৩১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন এই প্রকল্প স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ২০১৯ সালের ২৬ জুন জিয়া হল নিলামের জন্য দরপত্র আহ্বান এর কেসিসি। ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর সৌরভ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান ৪৩ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ টাকা দিয়ে জিয়া হলের ভগ্নাবশেষ কিনতে মেয়রের কাছে আবেদন করেন। এই আবেদন সাধারণ সভায় উত্থাপন করা হয়। ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর সৌরভ এন্টারপ্রাইজের নিলাম আবেদন অনুমোদন দেওয়া হয়।
শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ভবন ভাঙার কাজের তত্ত্ববধায়ক সৌরভ এন্টারপ্রাইজের হিমেল বাংলানিউজকে বলেন, জিয়া হল ভবন অপসারণ করতে চার মাস সময় লাগবে। প্রায় ৪০-৪৫ জন শ্রমিক ভবন ভাঙার কাজ করছেন। বিভিন্ন ভারী ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে এই কাজ চলছে।
তিনি আরও বলেন, জিয়া হলের ছাদে যে রড ব্যবহার করা হয়েছিল তা খুব নিম্নমানের। চিকন ও পাতলা এসব রডের কারণে ছাদ নড়বড়ে ছিল। পাতলা পাতলা করে রড ব্যবহার করা হয়েছে। জিয়া হলের ইটসহ সব ভাঙা জিনিসপত্র এখানেই বসেই বিক্রি করে দিচ্ছি।
জানা গেছে, খুলনা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের উদ্যোগে মহানগরীর প্রাণকেন্দ্রে ৯ রাস্তার সঙ্গম মুখে শিববাড়ী এলাকায় এক দশমিক ৭২১৭ একর জমির ওপর ‘পাবলিক হল কমপ্লেক্স’ নাম নিয়ে ভবনটির প্রথম পাইলিং কাজ শুরু হয় ১৯৭৯ সালে। পাইলিংয়ের শেষ দিকে ১৯৮১ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর কাজ আবারও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রথম মনোনীত মেয়র হিসেবে ১৯৮৮ সালে দায়িত্ব পান জাতীয় পার্টির (জাপা) সাবেক নেতা কাজী আমিনুল হক। তিনি দায়িত্ব নিয়ে অনেকটা একক প্রচেষ্টায় এক কোটি টাকা থোক বরাদ্দ এনে ১৯৮৯ সালে নির্মাণকাজ শুরু করেন। কিন্তু পরের বছরই একতলা ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের আগেই ১৯৯০ সালে আবার কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলে শেখ তৈয়েবুর রহমানকে খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই সময়ে তিন কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে হলের নির্মাণকাজ শুরু হয়। পরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ১৯৯২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ‘জিয়া হল’ নামকরণ করে ভবনটির উদ্বোধন করেন।
সেই থেকে জিয়া হলকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে খুলনার সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচি। নগরীর সব ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, সভা-সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, আলোচনা সভা হত এই কমপ্লেক্সে। ২০০৩ সালে কয়েক দফা লাউঞ্জের পলেস্তারা ও ঢালাই খসে পড়ে। ২০০৭ সাল থেকেই মূল ভবনের পলেস্তারা ও ঢালাই খসে পড়তে শুরু করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ ঘণ্টা, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
এমআরএম/এমএমজেড