ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঝরে পড়ছে কলিসহ গোলাপ, দিশেহারা বিরুলিয়ার কৃষক

সাগর ফরাজী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২২
ঝরে পড়ছে কলিসহ গোলাপ, দিশেহারা বিরুলিয়ার কৃষক পাপড়ি ঝরে পড়া গোলাপ। ছবি: বাংলাইনউজ

সাভার (ঢাকা): মহামারি করোনার কারণে গত দুই বছর সাভারের বিরুলিয়ার গোলাপ গ্রামের চাষিরা কষ্টে দিনপার করেছেন। গোলাপ বাদ দিয়ে অনেকে অন্য ফসল চাষ শুরু করেছেন।

কেউ কেউ এখনো ফুল উৎপাদনের জন্য চাষ করে যাচ্ছেন গোলাপ গাছ।  

গোলাপ গ্রামের চাষিদের জন্য এ মাসটি ফুল উৎপাদন ও বিক্রির উত্তম সময়। কিন্তু করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতেই গোলাপ চাষিদের দেখতে হচ্ছে আরেক বিপত্তি। ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে তাদের গোলাপ বাগানে ছত্রাকের আক্রমণ হয়। বিভিন্ন ধরনের পরিচর্যা করেও তারা গোলাপ বাগান ছত্রাকমুক্ত করতে পারেননি। গোলাপ গাছসহ ফুলের কলি এক প্রকার পুড়ে নষ্ট হয়ে ঝরে পড়ছে। এতে করে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে-সাভারের শ্যামপুর, মৈস্তাপাড়া, সাদুল্লাপুর, বাগনীবাড়ি, ভবানীপুর ও বিরুলিয়াসহ অন্তত দশটি গ্রাম গোলাপ চাষের জন্য বিখ্যাত। এই গ্রামগুলো মানুষের কাছে গোলাপগ্রাম হিসেবে পরিচিত। এসব এলাকায় প্রায় ২৭৫ হেক্টর জমিতে গোলাপ চাষ হয়। অন্তত ১৫০০ কৃষক বাণিজ্যিকভাবে গোলাপ চাষ করেন। গোলাপগ্রামের হাজারো গোলাপ চাষির বাগান ছত্রাকের আক্রমণে নষ্ট হয়ে গেছে।

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (০৩ জানুয়ারি) বিরুলিয়ার গোলাপ গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, গোলাপ বাগানে ফুটে নেই গোলাপ। গাছের পাতা ও কলির পাপড়ি কালো হয়ে মুষড়ে রয়েছে। কোথাও কোথাও গাছের পুরো অংশই কালো হয়ে গেছে। এতো কিছুর পরও কেউ কেউ বাগান পরিষ্কার করছেন। এছাড়া দর্শনার্থীরাও দেখতে আসছেন।

এসময় কথা হয় রফিকুল ইসলাম নামে এক গোলাপ চাষির সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ৭৫ শতাংশ জমিতে গোলাপ চাষ করি। তবে করোনার লোকসান কাটিয়ে না উঠতেই আমার বাগানগুলো ছত্রাকের আক্রমণে নষ্ট হয়ে গেছে। গত দুই যুগের বেশি সময় ধরে গোলাপ চাষ করলেও এ বছরই এরকম নতুন রোগের সম্মুখীন হয়েছি। ছত্রাকের আক্রমণে বাগানের গোলাপ গাছ, ডগা, কলি মরে ঝড়ে পড়ছে। ছত্রাকনাশক ও বাগান পরিচর্যা করেও কাজ হচ্ছে না। বাগান পরিচর্যা বাবদ এখন পর্যন্ত ১ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু এক টাকারও ফুল বিক্রি করতে পারিনি।

তিনি আরও বলেন, মূলত ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে মার্চ মাসের পুরোটাই আমাদের গোলাপের মৌসুম। এই সময়টাতেই বাগান ফুলে পরিপূর্ণ থাকে। আমরা ফূল বিক্রি করে লাভবান হই। সামনে ভাষা দিবস, ভালোবাসা দিবস এবং ২৬ মার্চ এ সময়টায় ফুলের চাহিদা থাকে। এবছর এসব দিবসে এক টাকারও ফূল বিক্রি করতে পারবো না।

রফিকুল ইসলামের মত একই অবস্থা ওয়াদুদ মিয়ার বাগানের। ওয়াদুদ মিয়া বলেন, ৭০ শতাংশ জমির গোলাপে পরিপূর্ণ বাগান দুটি ডিসেম্বরের শেষের দিকে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হয়ে গেল। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের জানিয়েও কোনো প্রতিকার মেলেনি। তারা রোগের যে চিকিৎসা দিতে বলেছেন তাকে কোনো কাজে আসেনি।

ওয়াদুদ বলেন, প্রায় হাজার কৃষকের জমিতে এই অদৃশ্য রোগের আক্রমণ হয়েছে। এইসব কৃষকের বাগানে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করেন। বাগান নষ্ট হয়ে গেলে শ্রমিকরাও কর্ম হারাবে। এসব দিক বিবেচনায় রেখে কৃষি অধিদফতরকে গোলাপ গ্রামকে টিকিয়ে রাখতে যথাযথ ব্যবস্থ্যা নিতে হবে।  

রহমত নামে এক চাষি বাংলানিউজকে বলেন, চলতি মৌসুমে বাগান পরিচর্যায় সার, বিশ, কীটনাশক ও শ্রমিক বাবদ ৫৭ হাজার টাকা ব্যয় করেছি। বাগান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় একটি গোলাপও বিক্রি করতে পারিনি। গতবছর এই পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবসের আগে ৮০ হাজার টাকার গোলাপ বিক্রি করেছিলাম। কিন্তু আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে আমরা এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবো না। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের যদি সহায়তা করা হয় সে ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। গোলাপ বাগান নষ্ট হয়ে যাওয়াও আমাদের কাজের কদর কমে গেছে। অধিকাংশ সময় বেকার বসে থাকতে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, মূলত গোলাপ এক মেয়াদী চাষ। কৃষকরা এসব গোলাপ বাগানে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও সার ব্যবহার করে থাকেন। এ কারণে মাটির গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ছত্রাকের আক্রমণ হয়েছে। এছাড়া এ বছর আবহাওয়া খারাপ ছিল মাঝে বৃষ্টি হয়েছে এটাও একটা কারণ হতে পারে। আমরা বাগান পরিদর্শন করে কৃষকদের গোলাপ বাগানে পানি দেওয়া বন্ধ রাখতে বলেছি। বাগান আগাছামুক্ত করে গোলাপ গাছের গোড়া মাটি নিরানীর মাধ্যমে আলগা করে দিতে বলেছি। এছাড়া কিছু ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছি। গোলাপ চাষিদের নিয়ে সমস্যা সামাধানের জন্য ওই এলাকায় একটি আলোচনাসভা করেছি সেখানে দুশ গোলাপ চাষি উপস্থিত ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, আমাদের ঢাকা বিভাগীয় ঊর্ধ্বতন কৃষি কর্মকর্তারাও গোলাপগ্রাম পরিদর্শন করেছেন। তাদের পরামর্শে রোগ নির্ণয়ে আক্রান্ত গোলাপ গাছ ও ফুলের নমুনা ‍কৃষি বিজ্ঞানীদের কাছে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। আমরা গোলাপ চাষিদের পাশে আছি। উপজেলা প্রসাশনের তহবিল ও সরকারি তহবিল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত গোলাপ চাষিদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২২
এসএফ/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।