নড়াইল: বছরে তিন-চার বার বিক্রি করা যায়, লাভের পরিমাণও বেশ ভালো। অল্প সময়ে অধিক লাভের আশায় ২০১৪ সালে হাইব্রিড কৈ মাছের চাষ শুরু করেন জেলার বৃহৎ চাঁচুড়ী বিলের কয়েকশ’ মৎস্যচাষি।
কিন্তু খারাপ চারা মাছ, মাত্রারিক্ত খাবারের দাম বৃদ্ধি আর করোনায় মাছের দাম কমে যাওয়ায়, গত দুই বছর ধরে লোকসান গুনে পথে বসেছেন জেলার প্রায় ৭০০ কৈ মাছ চাষি। পতিত হয়ে পড়েছে প্রায় হাজারো একর ঘের।
নড়াইলের পুরুলিয়া ইউনিয়নের ফুলদাহ গ্রামের ফসিয়ার রহমান মৎস্য বিভাগের অনুপ্রেরণায় ২০১৫ সালে ১০ একর জমিত মোট সাতটি ঘেরে হাইব্রিড কৈ মাছ চাষ শুরু করে। বছরে প্রায় ৩ হাজার মণ কৈ উৎপাদন করে লাভবান হলেও গত দুই বছরে লোকসান গুনেছে ২০ লক্ষাধিক টাকা। বর্তমান তিনি কৈ মাছ চাষ বাদ দিয়ে তিনটি ঘেরে অন্য মাছের চাষ করছেন। বাকিগুলোতে আবাদ করছেন বোরো ধান।
ফসিয়ার রহমানের মতো কেবল চাঁচুড়ী বিলের ৩০০ মৎস্যচাষিসহ জেলার ৭ শতাধিক চাষি দুই বছরে লোকসান গুনে নিঃস্ব হয়ে মাছ চাষ ছেড়ে দিয়েছেন। খাবারের দাম বৃদ্ধি, নিম্নমানের চারা মাছ কে দায়ী করলেও বিকল্প মাছচাষ পদ্ধতির জন্য কোনো পরামর্শ না পেয়ে হতাশ মাছ চাষিরা।
ফসিয়ার রহমান বাংলানিউজকে বলেন, গত ২০১৩ সালে আমার ৭টা ঘেরে চিংড়ি ও সাদা মাছ চাষ শুরু করি। কিন্তু ১০০ দিনে কৈ মাছ বিক্রি করা যায় সেই ভাবনা থেকে ২০১৫ সালে কৈ মাছ চাষ শুরু করি। কিন্তু করোনার কারণে খাবারের দাম বেড়ে যাওয়া এবং সেই অনুপাতে মাছের দাম কমে যাওয়ায় লোকসান শুরু হয়। এছাড়া বর্তমানে যে চারা মাছ আসে সেগুলোর গ্রোথও ভালো না।
চাঁচুড়ী ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের চাষি লিটন সরকার বাংলানিউজকে বলেন, আমি ১০টি ঘেরে কৈ মাছ চাষ করতাম। গত দুই বছরে প্রায় ৩০ লাখ টাকা লোকসান দিয়ে এখন বোরো ধান আবাদ করছি। ঘের লিজের টাকা পরিশোধ করতে ধান কেটে সাদা মাছ ছাড়বো।
লোকসানের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বড় সমস্যা চারা মাছে। ৯০ দিনে যেটা ১০-১২টায় কেজি হবার কথা সেখানে এখন ১৮-২০টায় কেজি হয়। এছাড়া, অনেক ঘেরে মাছের বয়স ৮০ দিন পর মাঝের গায়ে ঘা হতে শুরু করে। ফলে বিক্রিতে আর দাম পাওয়া যায় না। সেই সঙ্গে খাবারের দাম কেজিতে ১০-১২ টাকা বৃদ্ধিও অন্যতম কারণ।
পুরুলিয়া ইউনিয়নের ধাড়িয়াঘাটা গ্রামের রাজিব মোল্যা বাংলানিউজকে বলেন, কৈ মাছ চাষ করে আমি পথে বসে গেছি। মাছের খাবারের দোকানদার প্রায় ৯ লাখ টাকা পাবে। এই দেনা কি করে পরিশোধ করবো জানি না।
মৎস্য বিভাগের কাছে হাইব্রিড কৈ চাষের সঠিক তথ্য নাই। সংশ্লিষ্টদের হিসাব অনুযায়ী ২০১৮-১৯ সালে দৈনিক প্রায় ৩০ টন কৈ মাছ নড়াইলের বিভিন্ন ঘের থেকে উৎপাদন হতো। যা কমে এখন ২ টনের নিচে। দুই বছরে লোকসানের পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এইচ.এম বদরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, করোনার কারণে মাছের দাম ভালো না পাওয়ায় মুলত চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া অনেক মৎসচাষি সঠিক পদ্ধতি না জেনে অন্যের দেখা-দেখি মাছ চাষ করেন। ফলে তারা যে পরিমাণ ইনভেস্ট করেন সে পরিমাণ ফেরত পান না। ভবিষ্যতে তাদের সঠিক পরামর্শ দিতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২২
এনটি