ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বরিশালে ৯ বছরের শিশুকে গলা কেটে হত্যা

স্টাফ ক‌রেসপ‌ন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২২
বরিশালে ৯ বছরের শিশুকে গলা কেটে হত্যা পড়ে আছে শিশু ইয়াসিনের মরদেহ

ব‌রিশাল: বরিশাল নগরের রুপাতলী রে‌ডিও সেন্টার সংলগ্ন প‌রিত্যাক্ত জ‌মি  থেকে ইয়া‌সিন না‌মে ৯ বছরের এক শিশুর গলাকাটা মর‌দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

নিহতের বাবা ছগির হোসে‌ন ঢাকার মহাখালী‌তে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস ক‌রেন, পেশায় সিএন‌জি অটোরিকশাচালক।

শিশু‌টি বরগুনা সদ‌রের বদরখালী ইউ‌নি‌য়নের ফুলঝু‌ড়ি গ্রা‌মে দাদী শিরীন বেগ‌মের সঙ্গে থাকত।

শিরীন বেগম জানান, গত সোমবার (৩১ জানুয়ারি) ইয়া‌সিন‌কে নি‌য়ে ঢাকা থে‌কে  ব‌রিশা‌লে আসেন। ওইদিন নাতি‌কে নি‌য়ে ব‌রিশাল নগ‌রের রুপাতলীস্থ রজ্জব আলী খান জা‌মে মস‌জিদ সংলগ্ন বোন আলেয়া বেগ‌মের বাসায় ছি‌লেন। মূলত শা‌রিরীক অবস্থা খারাপ থাকায় চি‌কিৎসা করা‌তে গি‌য়ে সঙ্গে থাকা টাকা খরচ হ‌য়ে যায়। এরপর তি‌নি বো‌নের বাসায় থে‌কে টাকা উপার্জ‌নের জন্য দিনমজু‌রের কাজ শুরু ক‌রেন। টাকা যোগাড় হওয়ায় শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) না‌তি‌কে নি‌য়ে বরগুনায় যেয়ে রোববার সেখানে এক‌টি মাদরাসায় ভ‌র্তি করার কথা ছি‌ল।

তি‌নি ব‌লেন, শুক্রবার (৪ জানুয়ারি) সকা‌লে না‌তি ইয়া‌সিন‌কে বোন আলেয়ার বাসায় রে‌খে কা‌জে যান এবং দুপু‌রের ম‌ধ্যে ফি‌রে আসেন। এসময় না‌তিকে বাসায় না দে‌খে কোথায় গে‌ছে জান‌তে চাই‌লে বোন জানায় বেলা ১১টার দি‌কে বা‌ই‌রে গে‌ছে। ধ‌রে নি‌য়ে‌ছিলাম খেলাধুলা কর‌তে গে‌ছে হয়‌তো। ত‌বে বেলা বাড়ার পরও ফি‌রে না আসায় বোন আলেয়া, তার স্বামী সিরাজ ও ছে‌লে আলা‌মিনকে নি‌য়ে খুঁজ‌তে বের হই। এরপর সন্ধ্যা পর্যন্ত তার কোন খোঁজ না পে‌য়ে ছে‌লেকে বিষয়‌টি জানাই। ছে‌লে ও তার বর্তমান বউ শ‌নিবার সকা‌লে ব‌রিশা‌লে এসে পৌঁছায়। এরপর কেউ একজন জানায় যে বসুন্ধরা হাউজিংয়ের ম‌ধ্যে রে‌ডিও সেন্টা‌রের দেয়াল সংলগ্ন প‌রিত্যাক্ত জ‌মি‌তে এক শিশুর মর‌দেহ পাওয়া গে‌ছে। প‌রে সেখা‌নে এসে দেখি আমার না‌তিরই গলাকাটা মর‌দেহ প‌ড়ে আছে।

নিহতের স্বজনদের আহাজারিবাব‌া ছ‌গির জানান, তার প্রথম সংসা‌রে এক মে‌য়ে ও ছে‌লে,তাদের ম‌ধ্যে ইয়া‌সি‌ন ছোট। ছেলের বয়স যখন ৪/৫ বছর তখন স্ত্রী ফা‌তেমার সঙ্গে ছাড়াছা‌ড়ি হয়। এরপর ছে‌লে-মে‌য়ে তার এবং মা‌ উভয়ের কা‌ছে থে‌কে বড় হ‌চ্ছি‌ল। বছর খা‌নেক আগে ম‌নোয়ারা না‌মে এক নারী‌কে বি‌য়ে ক‌রেননি। যার আগের সংসা‌রে এক‌টি মেয়ে আছে। ত‌বে সন্তান‌দের নি‌য়ে তাদের ম‌ধ্যে কোন ধর‌নের বি‌রোধ ছি‌ল না।  

ছ‌গি‌রের বর্তমান স্ত্রী ম‌নোয়ারা ব‌লেন, ওদের আমি নি‌জ সন্তা‌নের ম‌তোই ভা‌লোবাসতাম। ঢাকা থে‌কে ভা‌লোভা‌বেই ব‌রিশা‌লে আসে। কিন্তু এরম‌ধ্যে এ হত্যাকাণ্ড কোনভা‌বে মে‌নে নি‌তে পার‌ছি না। কারা এবং কেন শিশু‌টি‌কে এভা‌বে হত্যা কর‌ছে বুঝ‌তে পার‌ছি না। আমা‌দের সঙ্গে কারও শত্রুতাও নেই।

এদি‌কে ছ‌গি‌রের খালা‌তো ভাই আলা‌মিন জানান, তি‌নি ৭ মাস আগে বি‌য়ে ক‌রেন।   বি‌য়ের পর থে‌কে তার শ্বশুর জা‌কির সর্দার ও তা‌দের প‌রিবার কোন খোঁজ নেয়‌নি, বরং নানানভা‌বে হয়রা‌নি ক‌রে আস‌ছে।

তার দা‌বি শ্বশুর জা‌কির সর্দার ও তার প‌রিবার এ হত্যাকাণ্ড ঘ‌টি‌য়ে‌ছে। একই সঙ্গে তি‌নি ইমরান না‌মে এক যুবক‌কেও স‌ন্দেহ ক‌রেন।

ত‌বে আলা‌মি‌নের মা আলেয়া বেগম কাউ‌কেই  স‌ন্দেহ কর‌তে পার‌ছেন না ব‌লে জানান।

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন জনকে থানায় নিয়ে যাচ্ছে পুলিশএ বিষ‌য়ে ব‌রিশাল মে‌ট্রোপ‌লিটন পু‌লি‌শের অতি‌রিক্ত উপ-পু‌লিশ কমিশনার ফজলুল ক‌রিম ব‌লেন, শিশু‌টি‌কে যেভা‌বে গলা‌কে‌টে হত্যা করা হ‌য়ে‌ছে তা দুঃখজনক ও লোমহর্ষক। আমরা পু‌রো বিষয়‌টি খ‌তি‌য়ে দেখ‌ছি। অপরাধী‌দের দ্রুত  গ্রেফতার ক‌রে আইনের আওতায় আনা হ‌বে। প্রাথ‌মিক জিজ্ঞাসাবা‌দের জন্য ক‌য়েকজন‌কে হেফাজ‌তে নেওয়া হ‌য়ে‌ছে।

কোতয়ালি মডেল থানার প‌রিদর্শক (তদন্ত) লোকমান হোসেন বলেন, শনিবার সকাল ৯টার দিকে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখেতে পাই একটি শিশুর গলাকাটা মরদেহ পড়ে আছে। রুপাতলী রেডিও সেন্টারের পেছনে একটি পরিত্যক্ত টয়লেটের ওপর শিশুটিকে রাতের আঁধারে কেউ জবাই করে হত্যা করেছে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারনা করছি।

তিনি আরও বলেন, এটি একটি হত্যাকাণ্ড এটা নিশ্চিত। তবে বিস্তারিত তদন্তের পরেই বলা যাবে। আর জিজ্ঞাসাবা‌দের জন্য শিশু‌টির দা‌দির বোন আলেয়া, তার স্বামী সিরাজুল ইসলাম ও ছে‌লে আলা‌মিন‌কে জিজ্ঞাসাবা‌দের জন্য থানায় নেওয়া হ‌য়ে‌ছে।

এদিকে শিশু‌টির মর‌দেহ উদ্ধারের পর ময়নাত‌দন্তের জন্য দুপুর ১২টার দিকে শেবা‌চিম হাসপাতালের ম‌র্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

বাংলা‌দেশ সময়: ১৫২৯ ঘণ্টা, ৫ ফেব্রুয়া‌রি, ২০২২
এমএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।