ঢাকা: পুরান ঢাকাকে এড়িয়ে কোনো উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই একদিকে যেমন এর ঐতিহ্য রক্ষা করতে হবে, ঠিক তেমনি ঐতিহ্য ধরে রেখে উন্নয়ন কাজ চালু রাখা প্রয়োজন।
শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সিরডাপ মিলনায়তনে ‘পুরান ঢাকার ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও পুনঃউন্নয়ন: কর্তৃপক্ষের করণীয় ও বিশেষজ্ঞ ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।
ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডুরা) আয়োজনে সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ডুরা সভাপতি মো. রুহুল আমিন।
সেমিনারে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও প্রকল্প পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, বেশিরভাগ ভবনমালিক বলেন বাবার বাড়ির ঐতিহ্য সংরক্ষণ করবেন। ভালো কথা, তবে আমি কী পেলাম? বর্তমানে ইতিহাসের বিবর্তনে পুরান ঢাকার অনেক ঐতিহ্য হুমকির মুখে। এগুলো রক্ষায় রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা দরকার।
সেমিনারে ঐতিহ্যের সংজ্ঞা আগে নির্ধারণ করতে হবে বলে মত দেন আরবান স্টাডি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী তাইমুর ইসলাম।
তিনি বলেন, একদিকে ঐতিহ্যের কথা বলা হচ্ছে, অন্যদিকে জরাজীর্ণ ভবনের কথা বলা হচ্ছে। জরাজীর্ণ ভবনের কথা বলে করোনার সময় অনেক ভবন ভেঙে ফেলা হয়েছে। ২০০৯ সালের সরকারি তালিকা অনুযায়ী পুরান ঢাকায় ঐতিহ্যবাহী ভবন ৯৪টি। আবার ২০১৭ সালের তালিকা অনুযায়ী ৭৫টি, কিন্তু ভবন রয়েছে এক হাজার ৮৩১টি। তাই সেই তালিকা ঠিক করা উচিত।
ভবন না ভেঙেও সংরক্ষণ করা যায় জানিয়ে তাইমুর ইসলাম বলেন, সমন্বিতভাবে কাজ না করলে এই ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা যাবে না। রাজউক তার মতো ভাবছে, সিটি করপোরেশন তার মতো ভাবছে এবং প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ তার মতো ভাবছে। প্যারিস, লন্ডনের মতো অনেক শহর আছে যেখানে আধুনিকতার সব আছে পুরাতন কাঠামোকে রেখে।
ঐতিহ্য বিশেষজ্ঞ স্থপতি মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, শুধু ভবন নয়, পুরান ঢাকার সংকীর্ণ রাস্তাও তার ঐতিহ্য। সবসময় রাস্তা ভেঙে বড় করতে হবে, বিষয়টা এমন নয়। সেখানে ফায়ার সার্ভিস বা অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করতে পারবে না, তা না। সেসব গাড়ি প্রবেশের জন্য কাস্টমাইজড যানবাহনের বিষয়ও ভাবার প্রয়োজন আছে।
বক্তারা বলেন, ২০১৮ সালের রিটের রায় অনুযায়ী পুরান ঢাকায় এমন অনেক স্থাপনা রয়েছে যেগুলো ভাঙা যাবে না। কিন্তু এই চার বছরেও অনেক ভবন ভাঙা হয়েছে। পুরান ঢাকাকে এড়িয়ে কোনো উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমাদের এই ঐতিহ্যগুলো রক্ষা করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে উন্নয়নের প্ল্যানটাও ইমপ্লিমেন্ট হওয়া প্রয়োজন। তাই এই ঐতিহ্য ধরে রেখে সমন্বিতভাবে উন্নয়ন কার্যক্রম চালু রাখতে হবে।
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন, সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান, সেন্টার ফর হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্সের নির্বাহী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবু সাদেক ও অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর পরিকল্পনা বিভাগের অ্যালামনাই আয়েশা সাঈদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২২
এইচএমএস/এনএসআর