ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আলমগীরের চাকরির খবরে স্বস্তিতে মা-বাবা

শাহিদুল ইসলাম সবুজ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২২
আলমগীরের চাকরির খবরে স্বস্তিতে মা-বাবা

জয়পুরহাট: ‘শুধু মাত্র দুবেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই’ এমন পোস্টার লাগিয়ে রাতারাতি ফেসবুক তথা নেট দুনিয়ায় মুহূর্তের মধ্যেই ভাইরাল হওয়া শিক্ষিত বেকার যুবক আলমগীর কবিরের চাকরির খবরে এক দণ্ড শান্তি খুঁজে পেয়েছেন তার বৃদ্ধ মা বাবা।  

দীর্ঘদিনের বেকার যুবক সদ্যই চাকরি পাওয়া আলমগীর কবিরের গ্রামের বাড়ি জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের নিভৃতপল্লী বড়াইলে গিয়ে এমনটাই দেখা গেলো।

 

সম্প্রতি বগুড়া জেলা পুলিশ সুপারের মাধ্যমে সেই আলোচিত সমালোচিত আলমগীর কবিরকে চাকরি দেয় সুপার শপ ’স্বপ্ন’। আর ছেলের চাকরি হয়েছে জানতে পেয়ে রাতে এখন শান্তির ঘুম হয় বলে জানান তার বাবা পল্লী চিকিৎসক কফিল উদ্দিন।  

কবিরের গ্রামের বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তার ভাঙ্গা চোরা বাড়িটিতে বিভিন্ন এলাকার মানুষেরা এসে ভিড় করছেন। তাদের সবার মুখে একটাই কথা- এইবার ছেলেটার একটা সৎগতি হল। চাকরির খবরে গ্রামবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও বেশ খুশি ও আনন্দিত।  

কবিরের বাবা ছেলের চাকরির সংবাদের কথা বলতে গিয়ে দু’চোখ দিয়ে আনন্দের অশ্রু ঝরিয়ে দিলেন। তিনি বললেন- ‘আমার ছেলে চাকরির বেতনের টাকা আমাদের দেক বা না দেক, বাকি জীবন সে সুখে থাক- এটাই আমাদের চাওয়া পাওয়া। ’

নাটকীয়ভাবে এমন একটি প্রতিষ্ঠিত জায়গায় চাকরি পাওয়ার পর বাবা-মা তথা দরিদ্র পরিবারের জন্য কি করবেন? জানতে চাইলে আলমগীর কবির বলেন, ‘যে বাবা-মা ও বোন আমার জন্য সারা জীবন এতো কষ্ট করেছে, তাদের সুখের জন্য আমি সবকিছুই করবো। ’

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, আলমগীর কবিরের বাবার এক সময় ৪ বিঘা আবাদি জমি ছিল। এরমধ্যে মেয়েদের বিয়ের খরচ যোগাতে এবং কবিরকে বগুড়ায় মেসে রেখে পড়াশোনার খরচ চালাতে ৩ বিঘা জমিই বিক্রি করেছেন। অবশিষ্ট ১ বিঘা জমির ফসলে তার সংসার আর চলে না। কফিল উদ্দীনের বয়স হয়েছে ডাক্তারিও তেমন করতে পারে না। বাড়িতে নুরজাহান আক্তার মিষ্টি নামে বিধবা একটা মেয়ে আছে। যে দর্জির কাজ করে কোনমতে সংসার চালাচ্ছে।  

নুরজাহান আক্তার মিষ্টি বলেন, গ্রামের মানুষের জামা-কাপড় সেলাই-ফোরা করি এবং হাঁস-মুরগি ও কয়েকটা ছাগল লালন পালনের আয় দিয়েই সংসার খরচ চালাই। পাশাপাশি কবিরকেও কিছু হাত খরচ পাঠাই।

প্রতিবেশী মনোয়ারা বেগম জানায়, ছেলেটা খুব ভালো এবং শান্ত প্রকৃতির। বছরে দুই ঈদ ছাড়া বাড়িতে খুব বেশি আসে না। একই এলাকার বাসিন্দা ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের নব নির্বাচিত সংরক্ষিত ইউপি সদস্য শিল্পী নাহার বলেন, কবিরদের সংসারে অনেক অভাব। তার বাবা পল্লী চিকিৎসক হলেও বয়সের কারণে সেই পেশা ছেড়ে দেওয়ায় তাদের সংসারে নানা অভাব দেখা দেয়। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে আলমগীর কবিরের চাকরি পাওয়ার খবরে অন্যদের মতো আমিও দারুণ খুশি।

পাঁচবিবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা  (ওসি) পলাশ চন্দ্র দেব বলেন, পাঁচবিবির বড়াইল গ্রামের শিক্ষিত বেকার যুবক আলমগীর কবির বগুড়াতে ‘ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই’ পোস্টার লাগিয়ে ভাইরাল হলে থানা পুলিশ তার পরিবারের খোঁজ-খবর নেয়। তার বাবা-মা ও গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রকৃতপক্ষেই তারা অভাবী।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।