ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতার প্রশ্নে আপসহীন ছিলেন পীর হাবিব’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২২
‘মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতার প্রশ্নে আপসহীন ছিলেন পীর হাবিব’ কথা বলছেন সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ।

সিলেট: ‘মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতার প্রশ্নে আপসহীন ছিলেন দেশবরেণ্য খ্যাতিমান কলামিস্ট, সাংবাদিক, বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমান। তিনি যে কোনো অসঙ্গতির বিষয়েই লিখতেন।

যে কথাটি বিশ্বাস করতেন, সেটি সাহস নিয়ে বলতেন'।  

রোববার (৬ জানুয়ারি) রাতে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অগ্রজ সহোদরের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এসব কথা বলেন সংসদ সদস্য (এমপি) পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ।

সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমানের সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হলে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের মানুষ। সেসময় সিলেটের বিশিষ্টজনরা সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমানকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন।

এমপি পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, ‘অনেকেই জাতীয় পর্যায়ে গেলে আঞ্চলিক কিংবা এলাকার বিষয় নিয়ে লিখেন না, কথা বলেন না। কিন্তু তিনি (পীর হাবিব) স্নেহ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা কেবল লেখনির মাধ্যমেই অর্জন করতে পেরেছিলেন। নিজের মেধা, যোগ্যতায় জাতীয় পর্যায়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন’।

রোববার সকালে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে তার মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে দেশ বরেণ্য ব্যক্তিরা স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘তিনি যে কথাটি বিশ্বাস করতেন, সেটি সাহস নিয়ে বলতেন, লিখতেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধ এবং জাতির পিতার প্রশ্নে কখনো আপস করতেন না। তিনি যে কোনো অসঙ্গতির বিষয়েই লিখতেন। বৃহত্তর সিলেট ও সুনামগঞ্জের প্রতি তার যে ভালোবাসা, দরদ, সেটি তিনি জাতীয়ভাবে তুলে ধরতেন। সুনামগঞ্জকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তার লেখায়, কথায়- সুনামগঞ্জ প্রেমের শহর, জোছনার ও কবিতার শহর। এক কথায় সাংবাদিকতাকে ইবাদতের মতো মনে করতেন পীর হাবিব’।

পীর মিসবাহ বলেন, ‘আমি নিজে সাক্ষী, হাসপাতালে থাকাবস্থায় প্রতি বুধবারে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনে কলাম লিখতেন। তার জীবনের শেষ কলামটি ছিল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আন্দোলন নিয়ে। সেদিন হাসপাতালের বেডে ডায়ালাইসিসের অবস্থায় তিনি শেষ কলামটি লিখেছিলেন’।  আর শেষ বুধবারেও তিনি কলামটি লিখতে চেয়েছিলেন। এজন্য তার অনুজ একজন সাংবাদিককে হাসপাতালের কেবিনে আসতে বলেছিলেন এবং সেই অনুজ সাংবাদিক সেদিন সকালবেলা এসেছিলেন। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় বলেছিলেন, ‘আমার শরীর খারাপ কথা বলতে পারছি না। ’ অনুজ সাংবাদিককে ওই দিন বিকেলে আসার চেষ্টা করতে বলেন। তাকে বলেছিলেন, ‘তুমি কষ্ট করে একটু বিকেলে এসো, আমি বুধবারের কলামটি লিখবো’। বুধবার বিকেলে তিনি অনেকটা আনকনসাস অবস্থায় চলে যান। তখন তিনি আমাদেরকে বার বার বলছিলেন ও কী এসেছে? পেশাটাকে তিনি ইবাদতের মতো মনে করতেন। সিলেটকে তিনি হৃদয়ে ধারণ করতেন। সিলেটের যে কোনো মানুষ যে কোনো বিষয়ে তাকে বললে, সামর্থের বাইরে হলেও মন প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করতেন। এলাকার প্রতি তার এত ভালোবাসা ছিল। তিনি বার বার সিলেটের মানুষের সঙ্গে আড্ডা দিতেন, ঘুরতে আসতেন। তার স্বভাবই ছিল প্রাণবন্ত জীবন এবং আড্ডা। সেজন্য তিনি সব জায়গাতে ছুটে যেতেন। পরিচিত জনকে নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন। আড্ডার ছলে এলাকার সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে লিখতেন।  তিনি কোনো সুবিধা পাওয়ার আশায় কখনোই কারো পক্ষে লিখেননি। তিনি জানতেন কী লিখলে, কে তার বিরুদ্ধে আক্রোশ পোষণ করতে পারেন। সেসব তিনি তোয়াক্কা করতেন না।

উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে পীর মিসবাহ বলেন, পীর হাবিব সিলেটে অনেকের সঙ্গে সম্পর্কিত। তার কথায়, আচরণে, লেখায় কেউ কোনো কষ্ট পেয়ে থাকলে পরিবারের পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করে পীর মিসবাহ বলেন, দয়া করে আল্লাহর ওয়াস্তে আমার ভাইকে ক্ষমা করে দেবেন। আর যদি কারো আর্থিক পাওনা থেকে থাকে, যোগাযোগ করলে আমরা দাবি পূরণ করে দেবো।  

এর আগে, রোববার রাত ১০টার দিকে পীর হাবিবুর রহমানের মরদেহ সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে এলে সেখানে শোকাবহ ও আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। ফুলেল শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি মরদেহের প্রতি সম্মান জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন ও পরে মোনাজাত করে বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়।

সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রাত ১১টার দিকে পীর হাবিবুর রহমানের মরদেহ নিয়ে সুনামগঞ্জের উদ্দেশে রওয়ানা হন স্বজনরা।  

সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় সুনামগঞ্জ পৌর শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে তার মরদেহ। এরপর বাদ জোহর সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় মসজিদে এবং নিজ গ্রাম মাইজবাড়ীতে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন পীর হাবিবুর রহমান।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২২
এনইউ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।